কলকাতা: ভুয়ো ভ্যাকসিনকাণ্ডে তত্পর কলকাতা পুরসভা। কসবা এলাকায় ১০৭ নম্বর ওয়ার্ডে কলকাতা পুরসভার তরফে ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়েছে। দেবাঞ্জনের ভুয়ো ক্যাম্পে যাঁরা ভ্যাকসিন নিয়েছেন, তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন পুরসভার মেডিক্যাল অফিসাররা। অন্যদিকে, আমহার্স্ট স্ট্রিটে সিটি কলেজেও স্বাস্থ্য দফতরের শিবির বসে।এর আগে এই শিবির হওয়ার কথা মাইকে ঘোষণা করে জানানো হয়। ভুয়ো ক্যাম্পে যাঁরা ভ্যাকসিন নিয়েছেন, তাঁদের অনেকেই এই শিবিরগুলিতে আসেন। 
পুরসভা সূত্রে খবর, কসবার স্বাস্থ্য শিবিরে  অনেকেই চেক-আপ করাতে এসেছিলেন।  চিকিৎসক জানিয়েছেন, অধিকাংশেরই মৃদু উপসর্গ রয়েছে। প্রত্যেককে উপসর্গ অনুযায়ী পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, সমস্যা হলে পুরসভার চিকিৎসক যার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে, তা বলে দেওয়া হয়েছে। তবে সেরকরম আতঙ্কিত না হওয়ার জন্যই অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
১৮ই জুন, আমহার্স্ট স্ট্রিট থানা এলাকার সিটি কলেজেও ভুয়ো ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পের আয়োজন করেছিলেন দেবাঞ্জন দেব। কলেজের বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী, অধ্যাপক, এবং স্থানীয় বাসিন্দা মিলিয়ে ৭২ জন ক্যাম্পে ভ্যাকসিন নিতে গিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যেও অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। যাঁদের অনেকেই এদিন এসেছিলেন স্বাস্থ্য শিবিরে।
কসবায় ভুয়ো ক্যাম্পে  যাঁরা ভ্যাকসিন নিয়েছিলেন, তাদের শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করা হল সোনারপুর ব্লক স্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষ থেকেও। উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক লাভলী মৈত্র ও এসিএমওইচ ইন্দ্রনীল মিত্র। সোনারপুর গ্রামীণ হাসপাতালে এই পরীক্ষা শুরু হয়েছে। চলবে আগামী ৩দিন। সোনারপুর মোট ৫২৬ জন কসবায় গিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে এদিন একশো জনকে এদিন নিয়ে আসা হয়। প্রত্যেকেরই শারীরিক পরীক্ষা করা হয়। এখনো পর্যন্ত কারোর কোনো সমস্যা ধরা পড়েনি বলে জানা গিয়েছে। তবে হাসপাতালে তাদের জন্য আলাদা পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। যদি কারোর কোনো বাড়াবাড়ি হয় হয় তাহলে সেখানে তাদের ভর্তি করা হবে।
করোনার প্রকোপ থেকে বাঁচতে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত ভ্যাকসিনেশন জরুরি। আর ভ্যাকসিনেশনের মতো জনস্বার্থ সংক্রান্ত বিষয়, যেখানে হাজার হাজার মানুষের জীবনের প্রশ্ন জড়িত, তা নিয়েই ভয়ঙ্কর প্রতারণায় অভিযুক্ত দেবাঞ্জন দেব। এই ক্যাম্পে যাঁরা ভ্যাকসিন নিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেরই দাবি, শরীরে নানারকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে শুরু করেছে। যেমন বালিগঞ্জের বাসিন্দা কুহেলি ঘোষ।১৫ জুন অসুস্থ মেয়ে-সহ পরিবারের তিন জনকে ভ্যাকসিন নিতে যান। তাঁদেরও কোভিশিল্ড বলে তরল ইনজেক্ট করে দেওয়া হয়। তারপর কী হল, তা জানিয়েছেন কুহেলি ঘোষ। তিনি বলেছেন, বাড়ি আসার পর প্রচণ্ড গায়ে ব্যাথা দেয় আর ঘুমের অনুভূতি । তিনজনই মাথা তুলতে পারছিলাম না। আমার ও মেয়েকে ওষুধ খেতে হয়। মেয়ের যেখানে ইঞ্জেকশন দিয়েছে, সেখানে স্পট। কী করব এখন? দুই সন্তানকে নিয়ে বেশি চিন্তা হচ্ছে।
সোনারপুরের বাসিন্দা, বর্ণালী মান্না ও শঙ্করী গায়েন দু’জনই ২২ জুন কসবায় দেবাঞ্জন দেবের ক্যাম্প থেকে ভ্যাকসিন নিয়েছিলেন। বর্ণালী মান্না বলেছেন,ডান চোখ ভার। ঘুমোতে পারছি না। কোমর ব্যথা। একই অবস্থা আমার স্বামীরও।
 শঙ্করী গায়েন বলেছেন, জ্বর রয়েছে। দুর্বল লাগছে। সরকার কিছু করুক।
বৃহস্পতিবার কসবায় দেবাঞ্জনের অফিসে তল্লাশি চালিয়ে ১২০টি ভায়াল উদ্ধার করেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। যার ওপর কোভিশিল্ড স্টিকার লাগানো ছিল। কিন্তু, সেই স্টিকার তুলতেই দেখা যায়, আরও একটি স্টিকার। যা আসলে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ইঞ্জেকশন অ্যামিকাসিন 500।
এখন ভ্যাকসিনের বদলে এই অ্যামিকাসিন 500-এর ডোজ দিলে মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এক বিশেষজ্ঞ বলেছেন, অ্যামিকাসিন যদি নিয়ে থাকেন বড় পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হচ্ছে শ্রবণশক্তির ক্ষতি হয়। অনেক সময় একটা ডোজেই বধির হয়ে যেতে পারে। শীঘ্র সুস্থ হয়না। এই ক্ষতি অনেক ক্ষেত্রে সারিয়ে তোলা যায় না। কানের নার্ভ ক্ষতি হলে এই অনুভূতি হয় মাথা ব্যাথা, গায়ে ব্যাথা হয়। দ্রুত অডিও মেট্রিক টেস্ট করা দরকার।  কিডনিতেও ক্ষতি হতে পারে।
চিকিত্‍সক প্রদীপ কুমার নিমানী বলেন, অ্যামিকাসিন দেওয়া হলে কী হতে পারে আমরা জানি, কী করতে হবে আমরা জানি। অন্যকিছু দেওয়া হয়ে থাকলে, আন-ডিস্টিল্ড ওয়াটার দেওয়া হলে সেপ্টিসেমিয়া হয়ে যেতে পারে।
সব মিলিয়ে সময় যত গড়াচ্ছে, ততই বাড়ছে উৎকণ্ঠা। এই পরিস্থিতিতে আজ পুরসভার পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ক্যাম্প করা হয়।