পল্লবী দে, কলকাতা: সারা বছর যেমন তেমনভাবে কাটালেও, পুজো উপলক্ষে বিশেষ শপিং বাঙালির একটি নিজস্বতা। হবে নাই বা কেন? বছরের এই তো চার দিন, যার অপেক্ষায় এক বছর কাটে। সেই আনন্দে রঙ লাগাতে ব্যাহিক আড়ম্বর কিছুটা বাড়বে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ২০২০ সাল থেকে সেই আনন্দে ভাঁটা। আর এ বছর সেই আনন্দে জোয়ার অনিশ্চিত। গত বছরের থেকে এ বছর যেন আরও খারাপের ইঙ্গিত দিচ্ছে। বস্ত্র বিপণীদের সঙ্গে এবিপি লাইভের আলাপচারিতায় উঠে এল এমনই কিছু দিক।
পুজোয় নতুন জামা, নতুন জুতো ট্রেডমার্ক। কিন্তু পুজোর উৎসবই যদি স্তিমিত হয়ে আসে তবে হাসি-আহ্লাদে কমতি তো দেখা দেবেই। গত বছর পুজোর পর যে হারে বেড়েছিল করোনা তা নিয়ে এ বছরও চিন্তায় স্বাস্থ্যমহল। এর ওপর রয়েছে তৃতীয় ঢেউ এর চোখ রাঙানি ফলে নতুন জামা কাপড় কেনায় আগের মতো মন দিতে নারাজ ক্রেতারা। দক্ষিণ কলকাতার জনপ্রিয় বস্ত্রবিপণি 'মাবেশা'র ম্যানেজার শম্ভু নাথ পাল বলেন, "গত বছরের তুলনায় এ বছরের বাজার কিন্তু বেশ খারাপ। গড়িয়াহাট চত্বরেও পুজোর যে ভিড় আগে দেখা যেত তা এ বছর অনেক কম। করোনার ফলে মানুষের মধ্যে একটা ভয় রয়েছে। এছাড়াও সঞ্চয়ের একটা বিষয় রয়েছে। আগে প্রাণে বাঁচবে তারপর তো জামাকাপড়, এই ভাবনার জন্য বিক্রি কম। তবে সল্টলেকে আমাদের একটি নতুন শোরুম উদবোধন হয়েছে। সেখানে রেসপন্স বেশ ভাল।"
আরও পড়ুন, দেবী দুর্গার আগমনই কি কারণ ? কেন বলে মহালয়া ?
একই সুর শোনা গেল উত্তর কলকাতার জনপ্রিয় দোকান আদি মোহিনী মোহন কাঞ্জিলালের এক কর্মীর কথায়। এবিপি লাইভকে তিনি বলেন, "সারাবছর যা বিক্রি হয় সেটি ছাড়াও পুজোয় তো আমাদেরও একটি লক্ষ্য থাকে। কিন্তু এ বছরও বাজার সেই এক জায়গায় আটকে। গত বছর তাও একটু ভাল ছিল। এ বছর এখনও পর্যন্ত তেমন কোনও বিরাট বদল ঘটেনি। তবে পুজোর আরও কিছুটা সময় রয়েছে হাতে। আশা করছি সকলের মুখে হাসি ফুটবে।"
উত্তর কলকাতার শ্যামবাজার-হাতিবাগান হোক, মধ্যের নিউমার্কেট কিংবা দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়াহাট, বস্ত্র বিপণিরা একুশের পুজোতেও নিরাশ। গড়িয়াহাটের খাদি এম্পোরিয়ামের পত্রালী ভৌমিকের কথায়, "গত বছর মানুষের মনে এতটা ভয় ছিল না। কিন্তু পুজোর পর করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সেই ভয়াবহতাকে দেখিয়েছে। এ বছর আবার তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা রয়েছে। তাই বিক্রিবাট্টা হচ্ছে গড়পড়তা। কোনওদিন একটু বেশি, কোনওদিন একেবারে কম। তবে পুজোর সেই বিক্রি এখনও চোখে পড়েনি।"
যদিও এর মাঝেই রমরমিয়ে শপিং বাড়ছে অনলাইন বেশ কয়েকটি সংস্থায়। Myntra-এর তরফে চলতি বছরের জুলাইয়ে যে রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে সেখানে সংস্থার তরফে বলা হয়েছে একটি 'সেল' -এ তাঁরা প্রায় ৬০ শতাংশ বেশি বৃদ্ধি দেখেছেন গত বছরের তুলনায়। দেশজুড়ে প্রায় ১ কোটি ৮০ লক্ষ পণ্যে (পোশাক) বিক্রি করেছেন তাঁরা। জুলাইয়ের সেই অনলাইন ছাড়ে গত বছরের তুলনায় এ বছর ৪ গুণ বেশি ইউজাররা তাঁদের প্ল্যাটফর্মে এসে শপিং করেছেন বলে দাবি করেছে সংস্থাটি।
সামাজিক দূরত্ব, মাস্ক বিধির জেরে 'বাহিরপানে চোখ মেলতে' অনীহা অনেকেরই। যদিও এর ফলে শহরের নামী বস্ত্রবিপণির পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন গড়িয়াহাট ফুটপাথের বস্ত্র ব্যবসায়ীরাও। লক্ষ্মীকান্তপুর থেকে আসা অনুপ দাস জানালেন তিনি প্রায় ১১ বছর ধরে ব্যবসা করছেন এখানে। কিন্তু করোনা-লকডাউনে ব্যবসা দূরঅস্ত, রোজের পেট চালানোও কষ্টকর হয়ে উঠছে। হাতে গোনা যা বিক্রি হচ্ছে তা দেখে মন ভাল নেই।
উৎসব আর আনন্দ পরিপূরক চিরকাল। এ বছর করোনাভাইরাসে উৎসব যতটা ম্রিয়মাণ, আনন্দও তেমন। কিন্তু পুজোর বাজারের আশায় একরাশ অর্থ লগ্নি করে ব্যবসা করার লক্ষ্যে থাকা অনুপের মতো আরও অনেকেরই 'মন ভাল নেই'। করোনার ভ্রুকুটির মাঝেই পুজোর আগেই রাজ্যজুড়ে চলছে দুর্যোগ। কোনও কিছুই যেন স্বাভাবিকে নেই। তবুও এরই মাঝে কিছুটা আশা নিয়ে এখনও বুক বেঁধে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বাকি সব সময়ের হাতে।