কলকাতা: একটা সময় ছিল, যখন কেউ ডাকতই না, পুজো করতে। 'মেয়েরা আবার পুজো করবে কি' এই ধারণাটা কাটতে লেগে গেছে বহু বহু বছর। আর এই সময়টা দাঁতে দাঁত চেপে নিজের বিশ্বাসে অটল থেকেছেন নন্দিনী ভৌমিক ও তাঁর সহযোগীরা। একটা বিয়ে দিয়ে আসন ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখেছেন, পুরুষ পুরোহিত মশাই এসে আবার পুরো বিয়েটা দিলেন। এর থেকে বড় ধাক্কা কিছু হয় ?  তবু টলে যাননি নন্দিনী। শুভম অস্তু নিজেদের বিশ্বাস, পড়াশোনায় অবিচল থেকে সমাজকে বোঝানোর চেষ্টা করে গেছে, মহিলাদের পুজোর্চনা করতে কোনও বাধাই নেই। ঠিক যেমনটা নেই ঋতুকালীন পরিস্থিতিতেও পুজো করার ক্ষেত্রে। এই বছর মা দুর্গার আবাহন করবেন তাঁরা। তারই শুভ সূচনা হয়ে গেল রবিবার রাখী পূর্ণিমায়। মা দুর্গার মুর্তিকে সামনে রেখে তাঁর আবাহন করলেন চার 'মা'। সেখানে ছিল রবীন্দ্রসঙ্গীত, চণ্ডীপাঠ থেকে মন্ত্রোচ্চারণ। ছিল যন্ত্রাণুসঙ্গও। সব মিলিয়ে মিনিট ৪৫ এর টানটান পুজো-অনুষ্ঠানে শ্রাবণ সকাল আকাশে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ল দেবীর আগমন বার্তা। ঢাক বাজালেন মহিলারাই । মুগ্ধ চোখে দেখল শয়ে শয়ে মানুষ। পুজো উদ্যোক্তারা ছাড়াও হাজির ছিলেন অন্যান্য ক্লাবের পুজোর আয়োজকরাও। সকলেই বাহবা দিলেন এমন এক অভিনব উদ্যোগের। 



অথচ কোথায় ছিল এমন আতিথেয়তা, এমন গ্রহণযোগ্যতা আজ থেকে এক দশক পূর্বে ? মহিলারা বিশেষ দিনে আবার পুজো করতে পারেন নাকি ?  প্রশ্ন তুলেছে সমাজ। যা এখনও কখনও-সখনও শুনতে হয় তাঁকে। কিন্তু এবিপি লাইভের কাছে কী সুন্দরভাবে নিজের যুক্তি ব্যক্ত করলেন নন্দিনী ভৌমিক। তিনি বললেন, আমরা পুজোয় বসেই বিষ্ণুকে স্মরণ করে বলি, 'ওঁ   অপবিত্রঃ পবিত্রো বা সর্বাবস্থাং গতোঽপি বা। যঃ স্মরেৎ পুণ্ডরীকাক্ষং স বাহ্যাভ্যন্তরঃ শুচিঃ।' যার অর্থ  বাহ্য শরীর ও শরীরের অভ্যন্তরে স্থিত মনের কোনও একটি বা দুটিই যদি অপবিত্র হয়, তবে পদ্মলোচন শ্রীবিষ্ণুকে স্মরণ করা মাত্রই বাহ্য ও অন্তরে শুদ্ধ হওয়া যায়। তাহলে এই মন্ত্র স্মরণ করলে আর অশুচি তো কিছুই থাকে না। তাই ঋতুকালে পুজো করতে অসুবিধা কি ? 

শুভম অস্তুর পুরধা নন্দিনী ভৌমিক জানালেন, তিনি নিজেই নারায়ণশিলা পুজো করেন, নিজের কোলে নিয়েই। তাতে কোনও দোষ নেই। 
পুরনো কথা বলতে গিয়ে এখনও অনেক কিছুই মনে পড়ে যায় নন্দিনী ভৌমিকদের। যে সময়, সারা বছর একটি দুটির বেশি পুজোর ডাকই মিলত না। কঠোরভাবে সমালোচিত হতে হত তাঁদের। তাও তাঁরা থেমে যাননি। সেই জন্যই বুঝি আজ এমন একটা সুন্দর দিন দেখতে পাচ্ছে কলকাতার পুজো। করোনা কালে ভাইরাসই যেখানে সবথেকে বড় শত্রু। সেই অসুরদলনীর বন্দনা করবেন চার কন্যা। সেই সঙ্গে তাঁরা হয়ত বধ করতে সক্ষম হবেন পুজোআচ্চার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা অনেক কুসংস্কার, ভয়-ভীতি। এখন সেই দিকেই তাকিয়ে কলকাতা।