কলকাতা: একবালপুরে সদ্যোজাত কন্যাসন্তানকে খুনের ঘটনায় মাকে গ্রেফতার করল পুলিশ। মায়ের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু হয়েছে। ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ আদালতের। একদিনের কন্যাসন্তানকে খুনের ষড়যন্ত্রে কি বাবাও যুক্ত ছিলেন? প্রসূতির স্বামীকে আটক করে চলছে জিজ্ঞাসাবাদ। পুলিশ সূত্রে খবর, সোমবার একবালপুরের ওই নার্সিংহোমে ভর্তি হন লাভলি সিং। একদিনের কন্যাসন্তানকে খুনের ষড়যন্ত্রে কি জড়িত বাবাও? জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে মহিলার স্বামীকে।


মঙ্গলবার সকালে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন তিনি। গতকাল ভোরে নার্স ও আয়ারা কেবিনে গিয়ে দেখেন সদ্যোজাত শিশুকন্যা নিথর অবস্থায় পড়ে রয়েছে। সন্দেহ হওয়ায় নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে খবর দেন তাঁরা। চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে দেখেন শিশুকন্যার মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ সূত্রে দাবি, কন্যাসন্তান হওয়ায় খুন, স্বীকার করেছেন মহিলা। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর দম্পতিকে নার্সিংহোমেই নজরবন্দি রাখা হয়। আজ সকালে ছুটি হতেই মহিলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।


পুলিশ সূত্রে খবর, সোমবার একবালপুরের নেতাজি সুভাষ নার্সিংহোমে ভর্তি হন লাভলি সিং নামে এক মহিলা। মঙ্গলবার সকালে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন তিনি। নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের দাবি, বুধবার ভোরে ওই শিশুকন্যাকে মৃত অবস্থায় দেখা যায়। নার্স ও আয়ারা কেবিনে গিয়ে দেখতে পান, শিশুর নাকে রক্তের দাগ লেগে ছিল।  তদন্তকারীদের দাবি, কন্যাসন্তান হওয়ায় সদ্যোজাতকে খুনের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন মা। এরপরই এদিন তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। 


ধৃতকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আলিপুর আদালত।একবালপুরের যে নেতাজি সুভাষ নার্সিংহোমে ভর্তি ছিলেন লাভলি সিং, সেই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, ঘটনার দিন রাতে স্ত্রী ও সদ্যোজাতর সঙ্গে একই কেবিনে ছিলেন অজয় সিং-ও। তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানান, ভোরে নার্সরা আসার আগেই তিনি বাইরে চা খেতে বেরিয়েছিলেন। ফিরে এসে দেখেন তাঁদের ছোট্ট মেয়েটা নড়াচড়া করছে না। 


কিন্তু গোটা ঘটনা কি সত্যিই তাঁর অজান্তে হয়েছে? তা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে মৃত সদ্যোজাতর বাবাকে আটক করে পুলিশ। অন্যদিকে বাঁকুড়ার ছাতনায় ষোল দিনের শিশুকন্যাকে খুনের অভিযোগে, আগেই বাবাকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। কিন্তু পুলিশ হেফাজতের মেয়াদ শেষের আগেই, এদিন তাঁকে জেলা আদালতে তুলেছিল পুলিশ। তেসরা নভেম্বর পর্যন্ত তাঁকে জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। পুলিশ সূত্রে দাবি করা হয়েছে, কন্যাসন্তানকে খুনের কথা স্বীকার করে নেওয়ায় অভিযুক্ত বাবা-কে আর হেফাজতে রাখার প্রয়োজন নেই।  


রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী জানিয়েছেন, এটা একটা সামাজিক সমস্যা, কে কতটা শিক্ষিত, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নির্ভর করে না, এটা স্পষ্ট হল। আমরা বলি- মেয়েরা সফল হচ্ছে বলে উদাহরণ দিই। সফলই হতে হবে তার কী মানে, সাধারণ মানুষ হিসেবেও বাঁচতে পারত। একদিকে লক্ষ্মীপুজো করব, অন্যদিকে এই অবস্থা।


মনোবিদ সুবর্ণা সেন বলছেন, একটা ব্যক্তিগত মানসিক ব্যধি, আবার সমাজেরও মানসিক ব্যধি। এটাও আত্মহত্যার মতো দ্রুত সিদ্ধান্ত। উনি হয়ত বুঝেছেন মেয়েকে বাঁচিয়ে দিলাম। মেয়ের জন্ম দেওয়ার জন্য ওনাকে কিছু শুনতে হয়েছে কি না, জানি না।


সমাজতত্ত্ববিদ সুনন্দা সর্বাধিকারীর কথায়, কন্যা সন্তান খুনের পর আর্থিক পরিস্থিতি অনেক সময় দায়ী। কেন্দ্র ও রাজ্য একাধিক মহিলাদের জন্য আর্থিক প্রকল্প, তারপরও এই ঘটনা। প্রমাণ করে শতকের পর শতকে নারী বিদ্বেষ চলে আসছে, এই সার্কেল ভাঙা মুশকিল। কারণ অনেক মহিলাও চান না, তার মতো মেয়েও কষ্টে থাকুক।