কলকাতা: কলকাতা পুরসভার ভুয়ো হলোগ্রাম ব্যবহার করে চিঠি। সেই চিঠির সাহায্যেই এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে গাড়ি ভাড়া। পরিচয় দিয়েছিলেন আইএএস অফিসার হিসেবে।
গাড়ির জন্য প্রতি মাসে দিতেন বাহান্ন হাজার টাকা। কসবায় দেবাঞ্জন যে অফিস তৈরি করেছিলেন, তার আপাদমস্তক ছিল পুরসভার আদলে!
নিজেকে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ করতে প্রভাবশালী মহলে বিচরণ করতেন দেবাঞ্জন। নেতা-মন্ত্রী-সাংসদদের সঙ্গে ছবি সোশাল মিডিয়ায় আপলোড করতেন।
প্রায় নিখুঁত পরিকল্পনা করেই বেঁধেই নেমেছিলেন ধৃত ভুয়ো আইএএস অফিসার দেবাঞ্জন দেব। সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী থেকে শুরু করে নীলবাতি লাগানো গাড়ি -- কোনওভাবেই যাতে ভুয়ো পরিচায় ফাঁস না হয়ে যায়, তার সবরকম চেষ্টা করেছিলেন দেবাঞ্জন।
আর সব জায়গায় ব্যবহার করা হয়েছে কলকাতা পুরসভার বিভিন্ন জাল নথিপত্র। এমনকি কসবা নিউ মার্কেটের পাশের বহুতলে তো একেবারে তৈরি করে ফেলেছিলেন কলকাতা পুরসভার আস্ত একটা জাল অফিস।
অফিসের ঢোকার দরজা দেখে তো যে কেউ মনে করতে বাধ্য এটা হয়ত পুরসভারই একটা অফিস। বাইরেটা যেমন সাজানো হয়েছিল জাল নথি দিয়ে, অফিসের ভিতরেও ছিল নিখঁত প্রতারণার পরিকল্পনা।
এখানে ভ্যাকসিন নিতে যাওয়া অনেকের অভিজ্ঞতাও একইরকম। বালিগঞ্জের বাসিন্দা কুহেলি ঘোষ বলেন, অফিসের ভিতরে দেখছি কলকাতা পুরসভার লোগো। ফিরহাদ হাকিমের বড় ছবি। আমাদের মাস্ক দিল, স্যানিটাইজার দিল, তাতেও পুরসভার লোগো।
অফিসের পাশাপাশি যে পেল্লাই গাড়িটি চড়ে নিজেকে আইএএস অফিসার বলে দেবাঞ্জন ঘুরে বেড়াতেন, সেই সিলভার ব্ল্যাক কালারের ইনোভা গাড়ি ভাড়া নেওয়া হয়েছিল কলকাতা পুরসভার জাল নথি ব্যবহার করেই। সাদা নম্বর প্লেটে গাড়ি নম্বর রয়েছে ডব্লিউবি ০৬আর ০৯৯৯।
কলকাতার বাসিন্দা তথা গাড়ি ব্যবসায়ী অনীশ বর্মনের থেকে এই গাড়িটি ৬ মাসের চুক্তিতে ভাড়া নিয়েছিলেন দেবাঞ্জন দেব। দাবি করেছিলেন তিনি আইএএস অফিসার।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি, গাড়ি ভাড়া নেওয়ার জন্য কলকাতা পুরসভার ভুয়ো প্যাডে ব্যবসায়ীকে রিক্যুইজেশন লেটার পাঠান দেবাঞ্জন। সেই চিঠিতেও ছিল কলকাতা পুরসভার ভুয়ো হলোগ্রাম।
কলকাতা পুরসভার নামে ভুয়ো স্ট্যাম্প। সেইমতো ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে গাড়িটি ব্যবহার করতে শুরু করেন ধৃত ভুয়ো আইএএস অফিসার। প্রতি মাসে ভাড়া ছিল ৫২ হাজার টাকা।
অনীশ বর্মন বলেন, কাগজপত্র দিয়ে ভাড়া নিয়ে ৪ মাসের মধ্যে ২ মাস অনলাইনে পেমেন্ট করে। একমাস চেকে পেমেন্ট করে। চেকে কলকাতা পুরসভার অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের নামে স্ট্যাম্প। চেক থেকে টাকা পেয়েছে। মাসে ৫২ হাজার টাকা। তিনি যোগ করেন, দেবাঞ্জনের অফিসে গেলে মোবাইল বন্ধ করে ঢুকতে হতো। প্রচুর সিকিওরিটি থাকত। কসবার অফিসেই যেতাম। কী করে জানব ফেক!