কলকাতা: কারও চোখ-কান ভার হয়ে আসছে। তো কারও গায়ে অসম্ভব ব্যথা। অনেকের শরীরে যে জায়গায় ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছে, সেখানে দাগ হয়ে গিয়েছে। 


দেবাঞ্জন দেবের ভুয়ো ভ্যাকসিন ক্যাম্প থেকে ইঞ্জেকশন নেওয়ার পর থেকেই একাধিক জনের শরীরে দেখা দিয়েছে নানা সমস্যা। 


করোনার প্রকোপ থেকে বাঁচতে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত ভ্যাকসিনেশন জরুরি। আর ভ্যাকসিনেশনের মতো জনস্বার্থ সংক্রান্ত বিষয়, যেখানে হাজার হাজার মানুষের জীবনের প্রশ্ন জড়িত, তা নিয়েই ভয়ঙ্কর প্রতারণায় অভিযুক্ত দেবাঞ্জন দেব। 


এই ক্যাম্পে যাঁরা ভ্যাকিসিন নিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেরই দাবি, শরীরে নানারকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে শুরু করেছে। 


যেমন বালিগঞ্জের বাসিন্দা কুহেলি ঘোষ। ১৫ জুন অসুস্থ মেয়ে-সহ পরিবারের তিন জনকে ভ্যাকসিন নিতে যান। তাঁদেরও কোভিশিল্ড বলে তরল ইনজেক্ট করে দেওয়া হয়। 


তিনি বললেন, বাড়ি আসার পর প্রচণ্ড গায়ে ব্যাথা আর ঘুম। তিনজনই মাথা তুলতে পারছিলাম না। আমার ও মেয়েকে ওষুধ খেতে হয়। মেয়ের যেখানে ইঞ্জেকশন দিয়েছে, সেখানে স্পট। কী করব এখন, দুই সন্তানকে নিয়ে বেশি চিন্তা। 


সোনারপুরের বাসিন্দা, বর্ণালী মান্না ও শঙ্করী গায়েন।  দু’জনই ২২ জুন কসবায় দেবাঞ্জন দেবের ক্যাম্প থেকে ভ্যাকসিন নিয়েছিলেন। বর্ণালী বললেন, ডান চোখ ভার। ঘুমোতে পারছি না। কোমরে ব্যথা। একই অবস্থা আমার স্বামীরও। শঙ্করী গায়েন জানান, তাঁর জ্বর, হাত ব্যথা। দুর্বল লাগছে। দাবি, সরকার কিছু করুক।


বৃহস্পতিবার কসবায় দেবাঞ্জনের অফিসে তল্লাশি চালিয়ে ১২০টি ভায়াল উদ্ধার করেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। যার ওপর কোভিশিল্ড স্টিকার লাগানো ছিল। 


কিন্তু, সেই স্টিকার তুলতেই দেখা যায়, আরও একটি স্টিকার। যা আসলে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ইঞ্জেকশন অ্যামিকাসিন ৫০০।  এখন ভ্যাকসিনের বদলে এই অ্যামিকাসিন ৫০০-এর ডোজ দিলে মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, বলছেন বিশেষজ্ঞরা। 


ইএনটি  বিশেষজ্ঞ দ্বৈপায়ন মুখোপাধ্যায় বলেন, অ্যামিকাসিন যদি নিয়ে থাকেন বড় পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হচ্ছে শ্রবণশক্তির ক্ষতি হয়। অনেক সময় একটা ডোজেই বধির হয়ে যেতে পারে। শীঘ্র সুস্থ হয়না। এই ক্ষতি অনেক ক্ষেত্রে সারিয়ে তোলা যায় না। কানের নার্ভ ক্ষতি হলে এই অনুভূতি হয় মাথা ব্যাথা, গায়ে ব্যাথা। দ্রুত অডিও মেট্রিক টেস্ট করা। তে কিডনিও ক্ষতি হতে পারে।


চিকিত্‍সক প্রদীপ কুমার নিমানী বলেন, অ্যামিকাসিন দেওয়া হলে কী হতে পারে আমরা জানি, কী করতে হবে আমরা জানি। অন্যকিছু দেওয়া হয়ে থাকলে, আন-ডিস্টিল্ড ওয়াটার দেওয়া হলে সেপ্টিসেমিয়া হয়ে যেতে পারে।


সব মিলিয়ে সময় যত গড়াচ্ছে, ততই বাড়ছে উৎকণ্ঠা।