আবীর দত্ত, কলকাতা: তিনি ছিলেন গুণধর ভাইয়ের সর্বক্ষণের সঙ্গী। ভুয়ো ক্যাম্প থেকে ভুয়ো ভ্যাকসিন,  নকল প্রশাসনিক পদ থেকে ভুয়ো ভোট-- দেবাঞ্জনের মিথ্যে সাম্রাজ্যের, সবই জানা ছিল তাঁর খুড়তুতো দাদা কাঞ্চন দেবের। এমনটাই দাবি পুলিশের। 


তদন্তকারীদের দাবি, দেবাঞ্জনকাণ্ড প্রকাশ্যে আসার পরও এতদিন চুপ করে ছিলেন তিনি। এখন গ্রেফতারির পরই জেঠতুতো ভাই দেবাঞ্জনের বিরুদ্ধে কসবা থানায় লিখিত অভিযোগ জানান খুড়তুতো দাদা কাঞ্চন। 


পুলিশে দায়ের করা অভিযোগে কাঞ্চন দাবি করেন, দেবাঞ্জন চাকরি দেওয়ার নামে তাঁকেও প্রতারণা করেছিলেন।  
এই প্রেক্ষিতেই তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন, নিজের পিঠ বাঁচাতেই দেবাঞ্জনের খুড়তুতো দাদা পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন কিনা বা গ্রেফতারি এড়াতেই তিনি এই কৌশল নিয়েছিলেন কিনা। 


অনেকে বলছেন, আক্ষরিক অর্থেই গুণধর ভাইয়ের সোনার টুকরো দাদা কাঞ্চন। অভিযুক্তের আইনজীবীর দাবি, নিকট আত্মীয়রা আগে সব জানতেন। তখন মুখ খোলেননি। এখন বলছেন কেন জানি না। 


ভুয়ো ভ্যাকসিনকাণ্ডে, সোমবার মাঝরাতে গ্রেফতার করা হয় দেবাঞ্জনের খুড়তুতো দাদা কাঞ্চন দেব ও সহযোগী শরত্‍ পাত্রকে।


পুলিশের দাবি,  নাকতলার বাসিন্দা কাঞ্চন ছিলেন দেবাঞ্জনের কসবার অফিসের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড। তাঁকে কলকাতা পুরসভার কন্ট্রোলিং অফিসার হিসেবে পরিচয় দেওয়া হতো।


প্রথম থেকেই তিনি জানতেন দেবাঞ্জন আদতে আইএএস নন। দেবাঞ্জনের প্রতারণা-কারবারে কাঞ্চনও যুক্ত ছিলেন বলে পুলিশের দাবি। এখন সহানুভূতি কুড়োতেই কসবার ভুয়ো ক্যাম্প থেকে সপরিবারে ভ্যাকসিন নেওয়ার দাবি করছেন তিনি, বলে অভিযোগ।


পুলিশ সূত্রে খবর, একাধিক প্রতারণায় অভিযুক্ত দেবাঞ্জনের টাকা নয়-ছয় করতেন কাঞ্চন। যেমন, কখনও দেবাঞ্জন কিছু কিনতে পাঠালে, সেই জিনিসটার দ্বিগুণ দাম বলতেন তাঁর দাদা। সেই বাড়তি টাকা ঢুকত কাঞ্চনের পকেটে। 


তদন্তকারীদের দাবি, রীতিমতো চোরের ওপর চলত বাটপাড়ি। পুলিশ সূত্রে খবর, কসবার অফিসে ভুয়ো ভোটের আয়োজন করেছিলেন দেবাঞ্জন দেব। রাজ্য সরকারি অফিসগুলির কর্মচারী সংগঠনের নামে সেই ভোটে নিজেই অংশ নিয়েছিলেন দেবাঞ্জন। আর, বিপুল ভোটে জিতেওছিলেন।  


শুধু তাই নয়, ভোটে জেতার পর কসবার অফিসে সেলিব্রেশনও করা হয়েছিল। পুলিশ সূত্রে খবর, সেই সেলিব্রেশনের দায়িত্বে ছিলেন খোদ কাঞ্জন দেব। 


অন্যদিকে, আরেক ধৃত, শরৎ পাত্র কাজ করতেন তালতলা এলাকার এক চিকিৎসকের চেম্বারে। সেখানেই ইঞ্জেকশন দিতে শিখেছিলেন তিনি। 


পুলিশ সূত্রে দাবি, সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দেবাঞ্জনের ভুয়ো ক্যাম্পে নকল ভ্যাকসিন দিতেন শরৎই। একে একে খুলছে রহস্যের জট। নেপথ্যে, রয়েছেন আর কারা? খতিয়ে দেখছে পুলিশ।