অর্ণব মুখোপাধ্যায়, কলকাতা: ‘কিরে তুই বাইক-স্কুটার চালাতে জানিস তো?’ হঠাৎই ধেয়ে এসেছিল প্রশ্ন। ‘হ্যাঁ দিদি, আগে তো চালাতাম’ উত্তর শুনেই পাল্টা, ‘বাহ লক্ষ্মী ছেলে। কাল আমাকে স্কুটারে করে নবান্নে পৌঁছে দিতে হবে।’ কার্যত এভাবেই ঠিক হয় মুখ্যমন্ত্রী ও পুর ও নগর উন্নয়নমন্ত্রীর ইলেকট্রিক স্কুটারে নবান্নে যাওয়ার কর্মসূচি।
তবে হঠাৎ স্কুটার চালানোর কথা শুনে প্রথমে একটু নার্ভাসই হয়েছিলেন ফিরহাদ হাকিম। কারণ, দীর্ঘ প্রায় কুড়ি বছর ছিল না স্কুটারের সঙ্গে সম্পর্ক। তার উপর পিছনে বসবেন দলনেত্রী। তাই তড়িঘড়ি এক পরিচিতকে দিয়ে স্কুটার কিনিয়ে স্ত্রীকে পিছনে বসিয়ে কসবা এলাকায় ট্রায়াল রানও দেন ফিরহাদ হাকিম। রাত দশটা থেকে বারোটা অব্দি মুখ্যমন্ত্রী যে পথে যাবেন নবান্নে সেই পথ ধরে চলে নতুন স্কুটারের ট্রায়াল রান।
হগলির সাহাগঞ্জের ডানলপ ময়দানে মুখ্যমন্ত্রীর সভার দিনে ফিরহাদ হাকিম ছিলেন কলকাতা পুরসভাতে। সভা শেষের পর বিকেল পাঁচটা নাগাদ হঠাৎই ফিরহাদ হাকিমকে ফোন করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে ওঠেন, সভায় এলিনা কেন? উত্তরের অপেক্ষা না রেখেই মুখ্যমন্ত্রী জোড়েন, যাইহোক যেখানেই আছিস এক্ষুনি আমার ঘরে এসে দেখা কর।
কিছুক্ষণের মধ্যেই কালীঘাটে পৌঁছন ফিরহাদ হাকিম। কিছুক্ষণ পর সেখানে পৌঁছেই মুখ্যমন্ত্রীর প্রথম প্রশ্ন, কিরে তুই বাইক-স্কুটার চালাতে জানিস তো? উত্তরে ফিরহাদ হাকিম বলেন, হ্যাঁ, দিদি আমি আগে চালাতাম।
এবার চমকানোর পালা পুর ও নগর উন্নয়নমন্ত্রীর। হঠাৎই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, বাহ লক্ষী ছেলে। কাল স্কুটারে করে আমাকে নবান্নে পৌঁছে দিতে হবে। স্কুটারের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক শেষ হয়েছে প্রায় বছর কুড়ি আগে। বিয়ের ঠিক আগেই ফিরহাদ এর একটি সেকেন্ড হ্যান্ড জাভা স্কুটার ছিল। বিয়ের পর স্ত্রীকে নিয়ে বারুইপুরে বেড়াতে যেতেন সেই স্কুটার নিয়ে।
পরবর্তী সময়ে একটি বাজাজের স্কুটারও কিনেছিলেন ফিরহাদ। তারপর সেকেন্ড-হ্যান্ড ওমনি এবং সবশেষে গাড়ি। এহেন ফিরহাদ এর স্কুটারে চড়বেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একথা শুনেই ফিরহাদ একটু নার্ভাস হয়ে পড়েন। এক পরিচিতকে দিয়ে ইলেকট্রিক স্কুটার কেনা হয়। তারপর ট্রায়াল রান। মুখ্যমন্ত্রী পিছনে বসবেন তাই স্কুটার এর পিছনে নিজের স্ত্রীকে বসিয়ে কসবা এলাকায় শুরু হল পাক খাওয়া। শুধু তাই নয় রাত দশটা থেকে বারোটা অব্দি মুখ্যমন্ত্রী যে পথে যাবেন নবান্নে সেই পথ ধরে চলে নতুন স্কুটারের ট্রায়াল রান।
এরপর স্কুটারটিকে চেতলার বাড়িতে এনে সারারাত চার্জে বসানো। নিজের বাড়ির দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মীদের সতর্ক করেন, রাতে কেউ যেন স্কুটার এর কাছে না আসেন।
দীর্ঘ প্রস্তুতিপর্ব মিটিয়েই শেষমেশ পেট্রোপণ্যের প্রতিবাদের প্রতীকী সফরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সারথী হয়েছিলেন ফিরহাদ হাকিম। ফেরার সময় মুখ্যমন্ত্রী যখন নিজেই স্কুটার চালানোর সিদ্ধান্ত নেন, তখনও সারাক্ষণ তাঁর পাশেই ছিলেন রাজ্যের পুর ও নগর-উন্নয়নমন্ত্রী।