কলকাতা : ফোনে তলব করা হলেও যাননি । তারপরে ফ্ল্যাটে হাজির সিবিআই (CBI)। তাও দেখা মেলেনি এসএসসি-র প্রাক্তন উপদেষ্টার। এদিকে, বিচারপতি সময় দিয়েছেন রাত ১২টার মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে তাঁকে। চূড়ান্ত নাটকীয়তার পরে সময় শেষের ঠিক ৪৫ মিনিট আগে নিজাম প্যালেসে হাজির হলেন এসএসসির (SSC) প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিন্হা। রাত আড়াইটে পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করল সিবিআই। ৩ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলে জিজ্ঞাসাবাদ।
গ্রুপ D নিয়োগে দুর্নীতি মামলায় আরও বিস্ফোরক কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার SSC-র প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিনহাকে অন্যতম কিংপিন বলে উল্লেখ করেন তিনি। মামলার তদন্তভার দেন CBI-কে। বলেন, শান্তিপ্রসাদ সিন্হাকে বৃহস্পতিবার রাত ১২টার মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ শেষ করতে হবে CBI-কে। সঙ্গে সঙ্গে তৎপর হয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। সন্ধে সাড়ে ৭টার সময় ফোনে SSC-র প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিন্হাকে নিজাম প্যালেসে তলব করে সিবিআই। কিন্তু, দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও তাঁর কোনও হদিশ পায়নি সিবিআই। এরপর এসএসসির প্রাক্তন উপদেষ্টার খোঁজে তাঁর ফ্ল্যাট অবধি পৌঁছে যান গোয়েন্দারা। কিন্তু, বাড়িতে গিয়েও শান্তিপ্রসাদ সিন্হার খোঁজ মেলেনি। তৈরি হয় এক নাটকীয় পরিস্থিতি।
আরও পড়ুন ; আজই জিজ্ঞাসাবাদ এসএসসি-র প্রাক্তন উপদেষ্টাকে, সিবিআইকে নির্দেশ হাইকোর্টের
নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় বৃহস্পতিবার বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, একই ধরনের বিভিন্ন মামলায় শান্তিপ্রসাদ সিন্হার নাম উঠে এসেছে। নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় তিনিই অন্যতম কিংপিন। বেআইনি নিয়োগের নেপথ্যে তাঁর নির্দেশ কাজ করেছে বলে অভিযোগ আদালতের হাতে এসেছে। তাই তাঁকে অবিলম্বে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করুক । বৃহস্পতিবার মধ্যরাতের মধ্যে শেষ করতে হবে জিজ্ঞাসাবাদের প্রক্রিয়া।
SSC-র কাজ ত্বরান্বিত করতে ২০১৯ সালে ৫ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটি গঠন করে রাজ্য সরকার। সেই কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন শান্তিপ্রসাদ সিন্হা। শুধু গ্রুপ ডি কর্মী নিয়োগই নয়। স্টেট লেভেল সিলেকশন টেস্টের নবম দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের মামলাতেও নাম জড়ায় শান্তিপ্রসাদ সিন্হার। একাধিকবার তাঁকে আদালতে হাজিরা দিতে হয়। গত ২ মার্চ SSC’র প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিন্হা ও প্রাক্তন প্রোগ্রাম অফিসার সমরজিত্ আচার্যকে আলাদা করে জিজ্ঞাসাবাদ করেন বিচারপতি। তাতে পরস্পর বিরোধী বয়ান উঠে আসে বলে জানা যায় আদালত সূত্রে।
সেদিন বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেন, নবম দশমের শিক্ষক নিয়োগে যে দুর্নীতি সামনে এসেছে, তা হিমশৈলের চূড়ামাত্র। এরপর গত ৯ মার্চ দুর্নীতির মামলার শুনানিতে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্য ছিল, দুর্নীতির হাজার হাজার ইঁদুর কমিশনকে কুরে কুরে খাচ্ছে। এরপর গত ২৫ মার্চ, এই মামলার শুনানিতে SSC-র প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিন্হার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির খতিয়ান দিতে বলে আদালত। শান্তিপ্রসাদ সিন্হা ডিভিশন বেঞ্চে গেলেও, সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ই বহাল থাকে। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশের পরে সিবিআইয়ের অ্যাডিশনাল SP উমেশ কুমার হাইকোর্টে গিয়ে দেখা করেন সিবিআইয়ের আইনজীবী ওয়াই জে দস্তুরের সঙ্গে। এরপর আদালতের নির্দেশের কপি নিয়ে নিজাম প্যালেসে বৈঠকে বসেন সিবিআইয়ের আধিকারিকরা।
সূত্রের খবর, সন্ধে সাড়ে ৭টার সময় শান্তিপ্রসাদ সিন্হার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে তাঁকে নিজাম প্যালেসে আসতে বলা হয়। কিন্তু এরপরই শান্তিপ্রসাদ সিন্হার ফোন নট রিচেবল হয়ে যায় বলে সিবিআই সূত্রের দাবি। রাত সাড়ে ৮টা অবধি অপেক্ষার পরে সিবিআইয়ের টিম বেরোয় শান্তিপ্রসাদ সিন্হার ফ্ল্যাটের উদ্দেশ্যে। প্রথমে সার্ভে পার্কের একটি জায়গায় গিয়ে খোঁজ চালান অফিসারেরা। সেখানে খোঁজ না মেলায় ফের অন্য ঠিকানায় যান তাঁরা। অবশেষে একটি হাউজিং কমপ্লেক্সে খোঁজ মেলে এসএসসির প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিন্হার ফ্ল্যাটের। সিবিআই সূত্রের খবর, সেখানে গেলে, তাঁর পরিবারের সদস্যরা জানিয়ে দেন, শান্তিপ্রসাদ বাড়িতে নেই। কিছুক্ষণ শান্তিপ্রসাদ সিন্হার ফ্ল্যাটেই অপেক্ষা করেন সিবিআইয়ের অফিসারেরা। রাত ১০টার কিছু পরে সেখান থেকে তাঁরা বেরিয়ে যান। শেষপর্যন্ত রাত ১১.১৫-য় আদালতের দেওয়া শেষের ৪৫ মিনিট আগে নিজাম প্যালেসে পৌঁছন SSC’র প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিন্হা। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই। স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে গ্রুপ ডি কর্মী নিয়োগে দুর্নীতির এই মামলার পরবর্তী শুনানি শুক্রবার।
জিজ্ঞাসাবাদে কী তথ্য উঠে এল তা আজ কলকাতা হাইকোর্টকে জানাবে CBI।