সন্দীপ সরকার, কলকাতা: বিবেকের তাড়নাতেই ছুটে গিয়েছিলেন মানুষের পাশে। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কলকাতার তিন সরকারি হাসপাতালের রোগীর পরিজনের মুখে বিনামূল্যে খাবার তুলে দিচ্ছেন। মানবিকতার অনন্য নজির গড়েছেন পেশায় পুলকার চালক পার্থ কর চৌধুরী।


এখন যাঁর পরিচিতি ‘হসপিটাল ম্যান’হিসেবে। সকাল বিকেল, ঘড়ির কাঁটা এদিক ওদিক হয় না। দু’বেলা খাবার নিয়ে হাসপাতালের গেটে পৌঁছে যান পার্থ কর চৌধুরী। এক্কেবারে বিনামূল্যে। গত বছর লকডাউনে স্কুল বন্ধ হওয়ার পর থেকেই এটাই তাঁর রোজনামচা। 


৫১ বছরের পার্থ পেশায় পুলকার চালক। বাড়িতে রয়েছেন বৃদ্ধ মা-বাবা, স্ত্রী ও ১ মেয়ে। কিন্তু করোনার কোপে গত বছর স্কুল বন্ধ হওয়া থেকেই উপার্জন নেই। নিজের চরম সঙ্কটেও যেন ‘আপন হতে বাহির হয়ে বাইরে দাঁড়া’-র মন্ত্র ধ্বনিত হয়েছিল পার্থর কানে। মনে হয়েছিল, লকডাউনে দোকানপাট বন্ধ। হাসপাতালে এত রোগীর ভিড়। ওঁদের পরিজনেরা খাবেন কী? কিন্তু সেই সময় নিজেকে সুস্থ রাখতে গৃহবন্দি ছিলেন সবাই। তাহলে রোগীর পরিজনদের কাছে খাবার পৌঁছে দেবেন কে? এইসব ভাবতে ভাবতেই পথে নেমে পড়েছিলেন পার্থ। বেছে নেন হাসপাতালকে। 


এসএসকেএম, শম্ভুনাথ পণ্ডিত থেকে চিত্তরঞ্জন ক্যানসার হাসপাতাল! ছুটে চলেছে পার্থর গাড়ি। থালা বাটি নিয়ে লম্বা লাইন, ঘড়ি ধরে চলে আসেন। সবাই যখন হাসপাতালকে এড়িয়ে চলত।সেই হাসপাতালকেই বেছে নিয়েছিলেন তিনি। তাঁর নামই হয়ে গেছে হসপিটাল ম্যান যে কদিন বাড়িতে ছিলাম খালি ফোন আসত।


রোগীর আত্মীয়রা জানিয়েছেন, 'তিন মাস চারমাস ধরে খাই, খাবার দিত বলে জুটত।' তবে এরই মাঝে ১৪ দিনের অনিচ্ছাকৃত ছুটি। গত মে মাসে করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন পার্থ নিজে। ১৫ তম দিন থেকে ফের মানুষের মুখে অন্ন তুলে দিচ্ছেন পার্থ। পরিবারের সদস্যরা কোনও দিনই আটকাননি। 


প্রতিবেশীদের অবিরত গঞ্জনা আর সমালোচনাও দমাতে পারেনি তাঁকে। পুলকার চালক পার্থ কর চৌধুরী বলছেন, 'পাড়ার লোক দুর্ব্যবহার করতেন, অচ্ছ্যুত, অস্বস্তিতে পড়তে হত, তবু দমিনি। রোগী রোগীর আত্মীয়রা সময় জেনে গেছেন, কোনও সেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত নই।'


পার্থর দাবি, জমানো ১ লক্ষ ৩৭ হাজার টাকার ১ লক্ষের বেশি খরচ হয়ে গিয়েছে। আগে গাড়িটা মাঝে মাঝে বের করলেও, পেট্রোপণ্যের দাম চড়তে থাকায় সেটাও বন্ধ।
পার্থর উদ্যোগ দেখে এই ইলেকট্রিক রিকশ দান করেছেন এক ব্যক্তি। কারও বাড়ি রিষড়া, কারও ঠিকনা পূর্ব মেদিনীপুরের প্রত্যন্ত কোনও গ্রাম। সবার মুখে একটাই কথা, ভাগ্যিস হসপিটাল ম্যান ছিলেন।