কলকাতা: পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হয়েছিল গত সপ্তাহে। কিন্তু ফের বিষাক্ত হয়ে উঠল তিলোত্তমার বাতাস। বুধবার কলকাতা শহরের বাতাসের গুণমান সূচক (AQI) অনেকটাই নেমে গিয়েছে। তাতে শ্বাস নেওয়ার ক্ষেত্রে শহরের বাতাসকে অত্যন্ত ক্ষতিকর (Kolkata Air Pollution) বলে দাগিয়ে দিল পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ (West Bengal Pollution Control Board)।
বুধবার উত্তর কলকাতার বেশ কিছু জায়গায় বাতাসের একিউআই ৩০০ পার করে যায়। সকালে ফোর্ট উইলিয়াম সংলগ্ন এলাকায় একিউআই ছিল ২৮১। দুপুর ২টোয় বালিগঞ্জ এলাকায় একিউআই ছিল ২৭৬।
বাতাসের একিউআই ০ থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকলে, তবেই সেই বাতাসকে স্বাস্থ্যের পক্ষে অনুকুল, একিউআই ৫১ থেকে ১০০-র মধ্যে হলে সন্তোষজনক, ১০০ থেকে ২০০-র মধ্যে হলে মোটামুটি, ২০১- থেকে ৩০০-র মধ্যে হলে ক্ষতিকর, ৩০১ থেকে ৪০০-র মধ্যে হলে অত্যন্ত ক্ষতিকর বলে ধরা হয়। তাই কলকাতার বাতাস নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
আরও পড়ুন: যক্ষ্মা রোগী সম্পর্কে তথ্য দিলেই পুরস্কার দেবে স্বাস্থ্য দফতর
এ দিন যাদবপুর (একিউআই ২৬১), বিধাননগর (একিউআই ২৪৫), ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল (একিউআই ২৩৮) এবং রবীন্দ্র সরোবর এলাকার (একিউআই ২৮) বাতাস ক্ষতিকর বলেই চিহ্নিত হয়। এতে শ্বাস নেওয়ার সময় অস্বস্তি হয়। ফুসফুসের সমস্যা থাকলে, তাঁদের ক্ষেত্রে এই বাতাস একেবারেই বিষের সমান।
তবে এ দিন করবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকাতেই বাতাসের একিউআই ছিল সর্বোচ্চ, ৩২২। পরিবেশবিদদের ভাষায়, অত্যন্ত ক্ষতিকর। এতে ফুসফুসের সমস্যা থাকলে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। অন্যদের ক্ষেত্রেো শ্বাস নিতে সমস্যা দেখা যায়।
যদিও এক সপ্তাহ আগেও শহরের বাতাস নিরাপদ ছিল। সেই সময় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল (একিউআই ২০), বালিগঞ্জ (একিউআই ৪৩), রবীন্দ্র সরোবর (একিউআই ৩৩) এবং রবীন্দ্রভারতী সংলগ্ন এলাকার বাতাসকে (একিউআই ৫১) নিরাপদ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল দূষণ নিয়ন্ত্রক পর্ষদ। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ঝড়বৃষ্টির জন্যই বাতাস দূষণমুক্ত হয়ে গিয়েছে বলে সেইসময় জানানো হয়।
কিন্তু শীতের আগমন ঘটতেই কলকাতার বাতাস বিষাক্ত হয়ে উঠছে। এর জন্য ঘন কুয়াশাকেই দায়ী করছে দূষণ নিয়ন্ত্রক পর্ষদ। তাদের যুক্তি, বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা (Particulate Matter) উপরে উঠতে পারছে না। তার জন্যই ঘন কুয়াশার চাদর ঢেকে দিচ্ছে চারিদিক। এর থেকে বাঁচতে হলে যানবাহনের ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে বলে জানিয়েছে তারা। এই মুহূর্তে কলকাতার রাস্তায় ১৫ বছরের পুরনো গাড়ি নামানোর অনুমতি নেই বলে জানান দূষণ নিয়ন্ত্রক পর্ষদের আধিকারিক তথা পরিবেশবিদ সোমেন্দ্রমোহন ঘোষ।
আরও পড়ুন: ঋণ পাইয়ে দেওয়ার অছিলায় প্রতারণার জাল সল্টলেকে, টাকা খোয়ালেন অনেকে
কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই নিয়ম মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন সোমেন্দ্রবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘ডিজেলচালিত গাড়িগুলি ভাল করে পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে না। কোনওরকম নজরদারি ছাড়াই নিরাপদ বলে শংসাপত্র দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ এবং দূষণের উপর নজরাদারি চালান যাজঁরা, তাঁরাও বিশেষ গরজ দেখান না।’’ দূষণ রুখতে হলে পেট্রল (Petrol Car) এবং ডিজেলচালিত বিএস-৬ গাড়ি (Diesel Car) থেকে কী পরিমাণ হাইড্রোকার্বন নির্গত হয়, তা পরীক্ষা করে দেখা বাধ্যতামূলক বলে জানান তিনি।
শুধু যানবাহনই নয়, আবর্জনা পোড়ানো, রাস্তার পাশের দোকানগুলিতে ব্যবহৃত কয়লার উনুনের ধোঁয়া থেকেও বাতাসে বিষ মিশছে বলে জানান সোমেন্দ্রবাবু। কিন্তু মানুষ সচেতন না হলে এক এক করে সকলের কাছে গিয়ে উনুনের ব্যবহার বন্ধ করতে বলা সম্ভব নয়। তাই প্রশাসনকেই এ ব্যাপারে কঠোর হতে হবে বলে মত তাঁর।