হিন্দোল দে, কলকাতা:  আন্তঃরাজ্য এবং আন্তর্জাতিক দীর্ঘদিন ধরেই মাদক চক্র সক্রিয় কলকাতায়। কখনও মায়ানমার সীমান্ত দিয়ে উত্তরবঙ্গ থেকে কখনও বা নেপাল হয়ে কলকাতা পৌঁছে যাচ্ছে নানা প্রকারের মাদক। 


গাঁজা, চরস, হাসিস, হেরোইনের পাশাপাশি এখন ক্যান্ডি বা ছোট চকোলেটের আকারের ট্যাবলেট মাদক তাকে বন্দি হয়ে পৌঁছে যাচ্ছে শহরের নানা প্রান্তে।


কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার নারকটিক কন্ট্রোল ব্যুরো এবং লালবাজারের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স-এর গোয়েন্দারা সর্বক্ষণ নজরদারি চালাচ্ছেন। 
গতকাল কলকাতা পুলিশের এসটিএফ-এর জালে কুখ্যাত মাদক পাচার চক্রের পাঁচজন ধরা পড়ে। সোমবার কেন্দ্রীয় সংস্থা এনসিবি জানিয়েছে, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে অভিযান চালিয়ে বাজেয়াপ্ত হয়েছে বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক মাদক।


গত ১৩ ফেব্রুয়ারি এসটিএফ-এর কাছে গোপন সূত্রে খবর আসে যে, কলকাতার কাশীপুর থানা অঞ্চলের একটি জায়গায় এক মহিলা-সহ মোট ৫ জন মাদক পাচারকারী তারা জড়ো হবে। সেই অনুসারে, স্পেশাল টাস্কফোর্স-এর অফিসাররা সেখানে গিয়ে পৌঁছান এবং সূত্র মারফত পাওয়া খবর অনুযায়ী গোয়েন্দারা দুটি গাড়ি শনাক্ত করেন।


সেই গাড়ি  দুটি থেকে মোট ৫ জনকে পুলিশ প্রথমে আটক করে এবং তাদের কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয় বিপুল পরিমাণ মাদক।  এর আগেও, এসটিএফ কলকাতার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু মাদক পাচারকারীকে গ্রেফতার করেছিল। তাদের থেকে এর আগে উদ্ধার হয়েছিল বিপুল পরিমাণ মাদক।


এবার শনিবার কলকাতা পুলিশ সকালে কাশীপুর অঞ্চল থেকে এক মহিলা-সহ এই পাঁচজনকে আটক করে। তাদের থেকেই প্রায় সাড়ে ১৭ কোটি টাকা মূল্যের বিভিন্ন ধরনের মাদক উদ্ধার করেন তদন্তকারী দলের সদস্যরা।


উদ্ধার হওয়া মাদকগুলি মূলত হেরোইন এবং "ইয়াবা" নামের এক ধরনের অ্যমফিটামিন ট্যাবলেট। উদ্ধার হওয়া এই হেরোইন এবং ইয়াবার আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য আনুমানিক  ১৭ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা।


এই বিপুল পরিমান মাদক উদ্ধারের পর পুলিশ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে। ধৃতদের মধ্যে একজন মহিলাও ছিলেন।  নাম প্রভাবতী দেবী, ওরফে পার্বতী দেবী জয়সওয়াল। ৭২ বছর বয়সী প্রভাবতী দেবী আসামের বাসিন্দা এবং বাকি চারজনের মধ্যে দুজন মণিপুরের কার্তিক নাইডু ও রাকেশ সিং এবং আর বাকি দু'জন মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা পিয়ারুল ইসলাম ও শেখ  সাদিকুল।


তদন্তকারীদের দাবি, ধৃত পাঁচজনই কুখ্যাত মাদক পাচারকারী। পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতদের গ্রেফতারের পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসে যে দীর্ঘদিন ধরে এই তারা মাদক পাচার চালাচ্ছিল দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এমনকি আন্তর্জাতিক মাদক পাচার চক্রের সঙ্গেও তাদের যোগ থাকতে পারে বলে তদন্তকারীরা মনে করছেন। 


এই ৫ জন কোথা থেকে এই বিপুল পরিমাণ মাদক এনেছিল, কাদের এই মাদক বিক্রি করতে এসছিল, বা এই মাদক বিক্রির পর কোথায় কোথায় পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল?  এর সঙ্গে আর কারা কারা যুক্ত থাকতে পারে? দেশের বাইরে এদের সঙ্গে আর কার কার যোগ রয়েছে? এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর করছে তদন্তকারী দলের সদস্যরা। 


ধৃতদের বিরুদ্ধে এনডিপিএস ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু করেছে এসটিএফ। পুলিশ সূত্রে খবর, এই কুখ্যাত মাদক পাচারকারীদের জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসতে পারে আরও বড় কোন আন্তর্জাতিক মাদক পাচারকারী চক্রের হদিশ। এমনটাই মনে করছেন তদন্তকারীরা।