কলকাতা: মণ্ডপ সজ্জায় জুতো ব্যবহার। ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে সরব বিজেপি। এ বছর দমদম পার্ক ভারতচক্রের পুজোর থিম কৃষক আন্দোলন। যা ফুটিয়ে তুলতেই প্যান্ডেলের একাংশে করা হয়েছে সারি সারি জুতোর ইনস্টলেশন। দেওয়াল জুড়ে অসংখ্য জুতো।তার মধ্যে বেশ কয়েকটা ছেড়া-ফাটা...মাটিতেও জুতোর স্তূপ। আর পুজোর মুখে এই নিয়েই চরমে পৌঁছেছে বিতর্ক।
ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ক্লাব কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হয়েছে আইনি চিঠি। এই আইনজীবী এই আইনি চিঠি পাঠিয়েছেন। ক্লাব কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মন্দিরের বাইরে জুতো খুলেই প্রবেশ করতে হয়। এক্ষেত্রেও মণ্ডপের বাইরে রয়েছে জুতোর ইনস্টলেশন।
প্যান্ডেলে জুতো ব্যবহারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বিজেপিও। দমদম পার্ক ভারত চক্রের পুজোর এই থিমের প্রতিবাদে ট্যুইটে সরব বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি লিখেছেন, দমদম পার্কের একটি পুজো জুতো দিয়ে সাজানো হয়েছে। শিল্পীর স্বাধীনতার নামে মা দুর্গার অপমান সহ্য করা হবে না। মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্রসচিবকে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করতে অনুরোধ করছি। ষষ্ঠীর আগে উদ্যোক্তাদের জুতো সরিয়ে ফেলার আবেদন করছি।
সরব বিজেপি নেতা তথাগত রায়ও। তিনি বলেছেন, এটা একটা কদর্য রাজনৈতিক এবং হিন্দু বিরোধী পদক্ষেপ, ভাবতেও ঘৃণা করে, এর বিরুদ্ধে যে জনমত উত্তাল হয়ে উঠছে এবং আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তাকে স্বাগত জানাই। শিল্পী সত্ত্বার সীমা থাকে, ছাড়িয়ে যাওয়া যায় না।
যদিও বিজেপির তোলা এই অভিযোগ কোনওমতেই মানতে নারাজ পুজো উদ্যোক্তারা। এক উদ্যোক্তা বলেছেন, এখানে যে জুতো নিয়ে বিতর্ক, সেটা একটা মুভমেন্টকে তুলে ধরতে ব্যবহার করা হয়েছে।এটা প্যান্ডেলের একটা অংশে ব্যবহার করা হয়েছে। মূল মণ্ডপ, যেখানে প্রতিমা রয়েছে, সেখানে এ সব কিছু নেই। অন্যদিকে নজর ঘোরাতে বিষয়টি নিয়ে অযথা বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে।মন্দিরের বাইরে থাকে জুতো, এখানেও তা বাইরেই রয়েছে।
মণ্ডপের প্রবেশ পথে রয়েছে দুই বিশাল ডানা সম্বলিত একটি ট্রাক্টর। কৃষকরা তাঁদের দাবি পূরণে সক্ষম হবেন, এই বার্তা দিতেই ওই ডানা।
মোদি সরকারের নতুন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে এক বছরের উপর আন্দোলন চালিয়ে আসছেন উত্তর ভারতের কৃষকরা। তা ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে দেশের নানা প্রান্তে নানা ইস্যুতে আন্দোলনে সামিল হতে দেখা গেছে কৃষকদের। নিজেদের দাবি-দাওয়া আদায় করতে কিলোমিটারের পর কিলোমিটার হেঁটে কত কৃষক যে তাঁদের চটি-জুতো ছিড়েছেন, তার কোনও হিসেব নেই। ২১তম বর্ষে কৃষকদের সেই সমস্ত আন্দোলনকেই, থিম হিসেবে বেছে নিয়েছে দমদমপার্ক ভারতচক্র। প্যান্ডেলের এক জায়গায় আঁকা হয়েছে এই ছবি। যেখানে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, একটি গাড়ি এক চাষিকে ধাক্কা মারছে। ছবির উপরে লেখা আছে, মটরগাড়ি ওড়ায় ধুলো, পিষে মরে চাষিগুলো।
যে দৃশ্যের সঙ্গে হুবহু মিলে যাচ্ছে, গত রবিবার ঘটে যাওয়ার লখিমপুরের কৃষকহত্যার ঘটনা।যদিও পুজো উদ্যোক্তারা দাবি করছেন, লখিমপুরের ঘটনার আগেই এই দৃশ্য প্যান্ডেলে ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল। তবে মর্মান্তিক ওই ঘটনার পর, লখিমপুরের চাষিদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দেওয়া হয়েছে পুজো মণ্ডপে।