ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, কলকাতা : চাঁদনি চকে বৃদ্ধের অস্বাভাবিক মৃত্যু। চারতলার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার ৭০ বছরের নেপাল দাসের ঝুলন্ত দেহ। পুলিশ সূত্রে খবর, পরিবারের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ভয়েস মেসেজে বৃদ্ধ দাবি করেন, দেনা, ঋণ ও ইএমআইয়ের চাপ সহ্য করতে না পেরেই আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত। যদিও ঠিক কী কারণে মৃত্যু, খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
জানা গিয়েছে, চাঁদনি চকের আগরওয়াল হাউজের চারতলায় থাকতেন নেপাল দাস নামে এক বৃদ্ধ। চাঁদনি চক এলাকারই একটি দোকানে তিনি কাজ করতেন। বৃহস্পতিবার রাতে ওই বৃদ্ধের ঘরের দরজা ভেঙে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। গতকাল বিকেল এবং সন্ধেবেলাতেও এলাকাতে দেখা গিয়েছিল নেপালবাবুকে। এলাকার অন্যান্য যাঁরা ব্যবসায়ীরা রয়েছেন তাঁরা জানিয়েছেন যে, নাতনিকে নিয়ে সন্ধেবেলা হাঁটতে বেড়িয়েছিলেন ওই বৃদ্ধ। শুধু তাই নয়, পরিচিত মানুষদের সঙ্গে কথাবার্তাও বলেছিলেন। কিন্তু সেই সময়ে নেপালবাবুকে দেখে কোনওভাবেই বোঝা যায়নি যে রাতে তিনি ওরকম ঘটনা ঘটাতে পারেন বলে। 


এই ঘটনা প্রসঙ্গে নেপালবাবুর পরিবারের লোকেরা জানিয়েছেন যে, গতকাল রাত ১০টা ১৫ নাগাদ তাঁকে অনেকবার ডাকাডাকি করেও তাঁর কোনও সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না। এরপরই পরিবারের লোকেদের মনে সন্দেহ হয়। তাঁরা দরজা ভাঙার সিদ্ধান্ত নেন। দরজা ভেঙে নেপালবাবুর ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান তাঁরা। সঙ্গে-সঙ্গেই তাঁরা লালবাজারে খবর দেন। স্থানীয় বউবাজার থানার পুলিশকর্মীরা এসে বৃদ্ধের দেহ উদ্ধার করে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। তার কারণ হিসেবে জানা যাচ্ছে, চাঁদনি চক এলাকার যেখানে নেপালবাবু থাকতেন, এলাকাটি মূলত ব্যবসায়ী এলাকা। তিনি ওই এলাকাতেই দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। ফলে এলাকার প্রত্যেক ব্যবসায়ীই চিনতেন তাঁকে। এবং ওই সমস্ত ব্যবসায়ীদের দাবী, নেপালবাবুর মতো হাসিখুশি একজন মানুষ পাওয়া মুশকিল। গত কয়েকদিনে তাঁর ব্যবহারে কেউ ঘুণাক্ষরেও এমন ঘটনার কথা আন্দাজ করতে পারেননি। কিন্তু কেন আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হল ৭০ বছরের ওই বৃদ্ধকে? পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। 


চাঁদনি চকের মর্মান্তিক এই ঘটনা প্রসঙ্গে বৌবাজার থাকান পুলিশ জানাচ্ছে যে, গতকাল আত্মহত্যার ঘটনা ঘটানোর আগে পরিবারের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে একটি ভয়েজ মেসেজও করেন নেপালবাবু। সেই ভয়েস মেসেজে বলেছিলেন, বিপুল পরিমাণ ঋণের দায় রয়েছে তাঁর কাঁধে। সেই ঋণের ভারে তিনি জর্জরিত। এবং সেই ভয়েস মেসেজেও তিনি জানান যে ঋণের কারণেই তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। তবে, পুলিশের কাছে এখনও স্পষ্ট নয় যে তিনি কী কারণে ঋণ নিয়েছিলেন। 


ঘটনা প্রসঙ্গে এলাকায় খোঁজখবর নিয়ে জানা গিয়েছে, নেপালবাবু এলাকারই একটি ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রাংশের দোকানে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করতেন। দোকানের ম্যানেজারও ছিলেন তিনি। পাশাপাশি কয়েকবছর আগে বেহালা এলেকায় একটি বিউটি পার্লারও খুলেছিলেন ওই বৃদ্ধ। পার্লারটি বৃদ্ধের স্ত্রী দেখাশোনা করতেন। বৃদ্ধের ঘনিষ্ঠ সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, ওই বিউটি পার্লার খোলার সময়ই অনেক টাকা ঋণ নিয়েছিলেন তিনি। গত কয়েক বছর ধরে যদিও কোনও সমস্যা দেখা দেয়নি। কিন্তু গতবছরের লকডাউনের সময় থেকে টানা বন্ধ ছিল ওই বিউটি পার্লারটি। স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যাচ্ছে যে, ব্যবসায় বেশ লোকসানের মধ্যে দিয়েই যাচ্ছিলেন নেপালবাবু। ঋণের টাকা শোধ করতে না পারার ফলে বেশ চিন্তার মধ্যে দিয়েই যাচ্ছিলেন এবং অবসাদেও ভুগছিলেন তিনি, এমনটাই খবর ঘনিষ্ঠ সূত্রের। পুলিশ ধারণা করছে যে, ভয়েস মেসেজে পাঠানো বৃদ্ধের বার্তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠমহল থেকে পাওয়া ঋণের যোগসূত্র রয়েছে। সেই ঋণের বোঝা থেকেই এমন মর্মান্তিক কাণ্ড ঘটিয়েছেন ওই বৃদ্ধ।