কলকাতা: ইয়াস বিপর্যয়ে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে হাজিরা-বিতর্ক নিয়ে মামলায় হাইকোর্টে জয় রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের। 


মামলা কলকাতা থেকে দিল্লিতে স্থানান্তরের জন্য সেন্ট্রাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুনালের প্রিন্সিপাল বেঞ্চের নির্দেশ খারিজ করল বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য ও বিচারপতি রবীন্দ্রনাথ সামন্তর ডিভিশন বেঞ্চ। মামলার শুনানি হবে কলকাতা বেঞ্চে। দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে মামলার, নির্দেশ হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের। 


ইয়াস বিপর্যয়ে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে হাজিরা-বিতর্ক নিয়ে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা হয় রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। অনুসন্ধান প্রক্রিয়া শুরু করে কর্মীবর্গ ও প্রশিক্ষণমন্ত্রক। 


গত ২৮ মে, পশ্চিম মেদিনীপুরের কলাইকুণ্ডায় প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে রাজ্যের তত্‍কালীন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। 


তাঁর অবসর নেওয়ার পর, ১৬ জুন আলাপনের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে অনুসন্ধান প্রক্রিয়া শুরু করে কেন্দ্রীয় কর্মিবর্গ ও প্রশিক্ষণ মন্ত্রক। 


আরও পড়ুন: ‘আপনার স্বামীকে কেউ বাঁচাতে পারবে না’, আলাপনের স্ত্রীকে হুমকি দিয়ে চিঠি
 
কেন্দ্রের সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সেন্ট্রাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনাল বা ক্যাটের কলকাতা বেঞ্চে মামলা করেন আলাপন। কিন্তু এই মামলা কলকাতা বেঞ্চ থেকে সরিয়ে দিল্লিতে প্রিন্সিপাল বেঞ্চে নিয়ে যাওয়ার জন্য দিল্লিতে পাল্টা মামলা করে কেন্দ্র।


২২ অক্টোবর কেন্দ্রের এই আবেদনে সম্মতি জানায় প্রিন্সিপাল বেঞ্চ। পাল্টা সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এবং দ্রুত শুনানির আবেদন করে, কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। 


যার প্রেক্ষিতে গত ২৭ তারিখ বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য এবং বিচারপতি রবীন্দ্রনাথ সামন্তর অবকাশকালীন বেঞ্চে শুনানি হয়। সেখানে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী জানান, ক্যাটের প্রিন্সিপাল বেঞ্চে শুনানি হয়েছিল ২২ অক্টোবর। কিন্তু তাঁরা নোটিস পেয়েছিলেন ২১ অক্টোর বিকেল সাড়ে পাঁচটায়। ফলে উত্তর দেওয়ার সময় পাননি। 


এরপরই কেন্দ্রীয় কর্মিবর্গমন্ত্রকের আইনজীবীর উদ্দেশ্যে বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য প্রশ্ন করেন, আপনাদের কি মনে হয় না যে এই পদক্ষেপের জন্য মামলাকারীকে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে?


আরও পড়ুন: সেন্ট্রাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুনালের প্রিন্সিপাল বেঞ্চের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়


সেই সঙ্গে বিচারপতি আরও বলেন, মামলা থেকে নিষ্পত্তি পেতে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের তাড়া ছিল। তাই তিনি ক্যাটের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। কিন্তু আপনাদের তাড়াহুড়ো করার কী ছিল? 


২২ তারিখ দিল্লিতে ক্যাটের প্রিন্সিপাল বেঞ্চের চেয়ারম্যান জানান, রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমস্ত নথিপত্র দিল্লিতে রয়েছে। কর্মিবর্গ মন্ত্রকের আইনজীবী জানান, আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সার্ভিস বুক দিল্লিতে রয়েছে। তাই তাঁর সমস্ত রেকর্ডও দিল্লিতে থাকাই স্বাভাবিক। 


সূত্রের খবর, পুজোর ছুটিতে আদালত বন্ধ থাকবে এই যুক্তি দেখিয়ে দিল্লিতে মামলা স্থানান্তরের আবেদন জানানো হয়েছিল কেন্দ্রের তরফে। যার প্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতিরা বলেন, সেন্ট্রাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান কি জানেন, এখানে পুজোর লম্বা অবকাশ যেমন চলছে, ঠিক তেমনই নিয়মিতভাবে আদালত বসছে। ফলে মামলা স্থানান্তরের কারণ হিসেবে লম্বা অবকাশের প্রসঙ্গ টেনে আনা ঠিক নয়।   


সবপক্ষের বক্তব্য শোনার পর এদিন প্রিন্সিপাল বেঞ্চের সেই নির্দেশই খারিজ করল কলকাতা হাইকোর্ট।