কলকাতা : মিশনারিজ অফ চ্যারিটির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট 'ফ্রিজ' ঘিরে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। বড়দিনে সরকারি এজেন্সির নিষ্ঠুর উপহার বলে দাবি কলকাতার আর্চ ডায়োসেসের। এদিকে ঘটনাটি নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে একসুরে সরব হয়েছে তৃণমূল, কংগ্রেস, সিপিএম। যদিও কোনও অ্যাকাউন্ট তারা বন্ধ করেনি বলে বিবৃতি দিয়ে দাবি করেছে কেন্দ্র।


সোমবার সন্ত টেরেসার মিশনারিজ অফ চ্যারিটির অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ-বিতর্কে তোলপাড় পড়ে যায় কলকাতায়। কলকাতার আর্চ ডায়োসেসের Vicar General, ফাদার ডমিনিক গোমস বিবৃতি দিয়ে দাবি করেন, মিশনারিজ অফ চ্যারিটির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে সরকারি এজেন্সি দরিদ্রদের মধ্যে দরিদ্রতমদের বড়দিনের নিষ্ঠুর উপহার দিয়েছে। 


বিবৃতিতে তিনি আরও জানান, মিশনারিজ অফ চ্যারিটির বিরুদ্ধে সরকারের এই পদক্ষেপের নিন্দা করছি। এই পদক্ষেপের সময় এবং এর জেরে যে বিপর্যয় নেমে আসবে, সে বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা না করায় আমরা হতবাক। 


এনিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ট্যুইট করে লেখেন, আমি শুনে হতবাক যে, ক্রিসমাসে কেন্দ্রীয় সরকার মিশনারিজ অব চ্যারিটির(Missionaries of Charity) সমস্ত অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছে। ২২ হাজার রোগী ও কর্মীর খাবার ও ওষুধের অভাব দেখা দিয়েছে। আইন সবার উপরে হলেও মানবিক কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যাওয়া ঠিক নয়।


বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর এই ট্যুইটটি রিট্যুইট করে কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুর লেখেন, এটি সত্যিই মর্মান্তিক। যখন মাদার টেরেজা নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন, তখন গোটা ভারত আনন্দে মেতেছিল। যখন তাঁর সংস্থা দরিদ্র ও দুঃস্থদের সেবা করে, তখন কেন্দ্রীয় সরকার তাদের তহবিল বন্ধ করে দেয়। লজ্জাজনক বিষয়।


সিপিএম-এর রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রও এ দিন কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি লেখেন, ‘খবর দেখে স্তম্ভিত আমি। গতকাল, বড়দিনে কেন্দ্রীয় সরকার মাদার টেরিজার মিশনারিজ অফ চ্যারিটিজের সমস্ত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে। ভারতে সংস্থার সমস্ত অ্যাকাউন্ট তো বন্ধ করেইছে, হাতে থাকা নগদও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সংস্থার রোগী এবং কর্মী মিলিয়ে সংস্থার ২২ হাজার মানুষ খাদ্য এবং পথ্যহীন হয়ে পড়েছেন।’


যদিও, কেন্দ্রের তরফে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়েছে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক(Home Ministry) মিশনারিজ অফ চ্যারিটির কোনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেনি। স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার তরফে জানানো হয়েছে, মিশনারিজ অফ চ্যারিটির তরফেই আবেদন করা হয়েছে, তাদের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার জন্য। 


প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে আরও জানানো হয়েছে, নিয়ম না মানায়, বিদেশি অনুদান নিয়ন্ত্রণ আইন (FCRA) ও বিদেশি অনুদান নিয়ন্ত্রণ বিধি (FCRR) অনুযায়ী, ২৫ ডিসেম্বর মিশনারিজ অফ চ্যারিটির রেজিস্ট্রেশন রিনিউ করার আবেদন খারিজ করা হয়। এরপর তা বিবেচনা করে দেখার জন্য, কোনও আবেদন জমা পড়েনি। 


কেন্দ্রীয় সরকারের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, FCRA-র অধীনে মিশনারিজ অফ চ্যারিটির রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ ছিল গত ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত। FCRA-তে নথিভুক্ত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো তাদের মেয়াদও ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। তা রিনিউ করার আবেদন এখনও আসেনি।


আরও পড়ুন ; মিশনারিজ অফ চ্যারিটির অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, দাবি কেন্দ্রের


এদিকে কেন্দ্রের পর অ্যাকাউন্ট ‘ফ্রিজ’-বিতর্কে বিবৃতি জারি করে মিশনারিজ অফ চ্যারিটিও। ‘ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজের কোনও নির্দেশ দেয়নি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক’, কেন্দ্র অ্যাকাউন্ট ফ্রিজের অভিযোগ নস্যাতের পরই জানায় এমওসি। বিবৃতি দিয়ে মিশনারিজ অফ চ্যারিটি জানায়, "মিশনারিজ অফ চ্যারিটির এফসিআরএ রেজিস্ট্রেশন সাসপেন্ড হয়নি। বাতিলও হয়নি এমওসি-র বিদেশি অনুদান নিয়ন্ত্রণ আইনে রেজিস্ট্রেশন। জানানো হয়েছে, এফসিআরএ পুনর্নবীকরণের আবেদন অনুমোদন পায়নি। সমস্যা এড়াতে আমাদের কেন্দ্রগুলিকে লেনদেন বন্ধ রাখতে বলেছি। বিষয়টির নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এফসি অ্যাকাউন্টে লেনদেন বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।"