সৌভিক মজুমদার, কলকাতা: দুয়ারে রেশন প্রকল্প নিয়ে হাইকোর্টে স্বস্তিতে রাজ্য। রাজ্য সরকারের বিজ্ঞপ্তি নিয়ে দ্রুত শুনানির আবেদন জানিয়েছিলেন কয়েকজন রেশন ডিলার। কিন্তু সেই আবেদন খারিজ করে দিল হাইকোর্ট।  


গত সেপ্টেম্বর মাসে ‘দুয়ারে রেশন’-এর পাইলট প্রজেক্ট শুরু করে রাজ্য সরকার। কিন্তু প্রকল্প শুরুর পরই এ নিয়ে শুরু হয় মামলা মোকদ্দমা।  সেই সময়েই প্রকল্পের বিরোধিতা করে কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চে আবেদন করেন কয়েকজন রেশন ডিলার।  


তাঁদের যুক্তি ছিল, রাজ্য সরকারের এই প্রকল্প কেন্দ্রীয় আইনের পরিপন্থী। এছাড়াও এই প্রকল্পের উপযোগী পরিকাঠামোও রেশন ডিলারদের নেই। সিঙ্গল বেঞ্চ সেই আবেদন খারিজ করে জানিয়ে দেয়, রাজ্য সরকারের দুয়ারে রেশন প্রকল্প চালিয়ে নিয়ে যেতে অসুবিধা নেই।  এরপর হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করেন মামলাকারী রেশন ডিলাররা। 


এরই মধ্যে শনিবার রাজ্য সরকার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সরকার দুয়ারে রেশন প্রকল্প স্থায়ীভাবে চালাবে। কিন্তু, মামলা বিচারাধীন থাকাকালীন কিভাবে, সরকার এই বিজ্ঞপ্তি জারি করতে পারে, সেই প্রশ্ন তুলে, সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি রবীন্দ্রনাথ সামন্তের ডিভিশন বেঞ্চে, আবেদন জানান মামলাকারী রেশন ডিলাররা। 


আদালত সূত্রে খবর, বিচারপতি দেবাংশু বসাক মামলাকারীর আইনজীবীকে বলেন,  দ্রুত শুনানির প্রয়োজন আছে বলে আদালত মনে করে না। দ্রুত শুনানির আবেদন তাই খারিজ করা হল। বিজ্ঞপ্তি জারি নিয়ে দ্রুত শুনানির আবেদন খারিজ হওয়ায়, স্বাভাবিকভাবেই স্বস্তিতে রাজ্য সরকার। 


‘দুয়ারে রেশন’ প্রকল্পে আপত্তির কথা জানিয়ে এর আগে খাদ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিল জয়েন্ট ফোরাম অফ রেশন ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন। দুয়ারে নয়, চালু করা হোক, ‘দোকানে রেশন’ প্রকল্প। আবেদন ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের। জোর করে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হলে দোকান বন্ধের হুঁশিয়ারি। আবেদন খতিয়ে দেখা হবে, বলেন খাদ্যমন্ত্রী। 


মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, 'ভোটে জিতে এলে ঘরে ঘরে রেশন পৌঁছে দেব'। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা মতো সেপ্টেম্বর মাস থেকে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয়ে গিয়েছে ‘দুয়ারে রেশন’ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের পাইলট প্রজেক্ট। সম্প্রতি শুরু হয়েছে দ্বিতীয় পর্যায়ের পাইলট প্রজেক্টও। 


আর এই প্রেক্ষাপটে ‘দুয়ারে রেশন’ প্রকল্পে আপত্তির কথা জানিয়ে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রীকে চিঠি দেয় জয়েন্ট ফোরাম অফ রেশন ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন। দুয়ারে নয়, সংগঠনের তরফে ‘দোকানে রেশন’ চালুর আবেদন করা হয়েছে সরকারের কাছে।


বিধানসভা ভোটের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, আর দোকানে যেতে হবে না। সরকারই নাগরিকের বাড়িতে রেশন সামগ্রী পৌঁছে দেবে। ভোটে জিতে সরকার গঠনের পর ‘দুয়ারে রেশন’প্রকল্পের পাইলট প্রজেক্টও শুরু হয়ে যায়। 


রাজ্যে এই মুহূর্তে ২০ হাজার ২৬৮টি রেশন দোকান রয়েছে। রেশন ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, প্রত্যেক দোকানে দু’জন করে কর্মী রয়েছেন। এই কর্মী সংখ্যা নিয়ে ‘দুয়ারে রেশন’ প্রকল্প বাস্তবায়িত করা প্রায় অসম্ভব। ১৪ অক্টোবর রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে সংগঠনের তরফে বলা হয়েছে, 'দুয়ারে নয়, দোকানে রেশন দিতে আমরা বদ্ধপরিকর এবং জোর করে, আতঙ্কিত করে, ভীত সন্ত্রস্ত পরিবেশ তৈরি করে, এই কাজ করতে বাধ্য করালে, আমাদের পক্ষে একান্তই নিরুপায় হয়ে রেশন পরিষেবা থেকে সরে দাঁড়াতে, দয়া করে বাধ্য করবেন না'।


অল ইন্ডিয়া ফেয়ার প্রাইস শপ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসু জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতিতে এত সংখ্যক মানুষকে বাড়ি গিয়ে রেশন দেওয়া সম্ভব নয়। আমরা বলছি, দুয়ারে নয়, দোকানে আসুন। আমাদের বলা হয়েছে দ্বিতীয় পাইলট প্রজেক্ট শুরু হয়েছে। জোর করে ওরা বলছে হয়েছে। এটা যদি বন্ধ না করে, তাহলে রেশন দোকান বন্ধ করে দিতে হবে। সেটা মন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি।