সন্দীপ সরকার, কলকাত: ২টি হাসপাতাল ফেরানোর পর, চারদিনের শিশুকে নিয়ে চেস্ট এক্স রে-র লাইনে দাঁড়িয়ে পরিবার। সদ্যোজাতর হাতে স্যালাইনের চ্যানেল, নাকে অক্সিজেনের নল। রবিবার এই ছবিই দেখা গেল এনআরএস হাসপাতালে। রেফার-রোগের অভিযোগে এবার কাঠগড়ায় কলকাতার ২টি সরকারি হাসপাতাল। পরিবার সূত্রে খবর, চারদিনের শিশুকন্যার খাদ্যনালি ও শ্বাসনালিতে সমস্যা থাকায়, ব্যারাকপুর বি এন বসু মহকুমা হাসপাতাল থেকে আজ আরজি করে রেফার করা হয়।


সদ্যোজাতর পরিবারের অভিযোগ, সেখান থেকে পাঠানো হয় বি সি রায় শিশু হাসপাতালে। হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় সরকারি নির্দেশিকা। কোন জেলার রেফারেল সেন্টার কোন হাসপাতালে, সেই সংক্রান্ত তথ্য জানিয়ে গত মার্চে নির্দেশিকা জারি করে স্বাস্থ্য দফতর। সেই নির্দেশিকার কপি ধরিয়ে দেওয়া হয় শিশুর পরিবারের হাতে। সরকারি নির্দেশিকা দেখানো সত্ত্বেও বি সি রায় শিশু হাসপাতালও অসুস্থ সদ্যোজাতকে ফিরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। ফোন ধরেননি আরজি কর ও বি সি রায় শিশু হাসপাতালের সুপার।


এর আগেও রেফার-হয়রানির অভিযোগ উঠেছে শহরের হাসপাতালগুলিতে। জুলাই-এর শেষ শহরের তিন সরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল। স্ট্রোক হওয়ার পর ২ দিন কেটে গেলেও এখনও ভর্তি হতে পারছিলেন না ডোমকলের ৬৫ বছরের প্রৌঢ়া। মস্তিস্কে রক্ত জমাট বাঁধা রোগিণীকে নিয়ে এনআরএস, এসএসকেএম, চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যালে ঘুরলেও ভর্তি করা যায়নি বলে অভিযোগ ওঠে। এসএসকেএমে প্রতীক্ষালয়ে রাত কেটেছে। পরিবারের দাবি, এরপর বহির্বিভাগে দেখানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এরপর আশ্বাস দিয়ে হাসপাতাল জানায়, বিষয়টি জানা ছিল না, রোগিণীর চিকিত্সার ব্যবস্থা করা হবে। । 



পরিবার সূত্রে খবর, রবিবার স্ট্রোক হয় নুর খাতুনের। প্রথমে ডোমকল মহকুমা হাসপাতাল, সেখান থেকে বহরমপুর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিত্সকরা জানান, মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধায় চিকিত্সা হবে কলকাতায়। এরপর রোগিণীকে এনআরএসে নিয়ে আসে পরিবার। অভিযোগ, ভর্তি নিলেও শুরু হয়নি চিকিত্সা। এরপর রোগিণীকে নিয়ে এসএসকেএমে নিয়ে গেলে বেড নেই বলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যালে নিয়ে গেলে সেখান থেকে ফের রেফার করা হয় এসএসকেএমে। এরপর রোগিণীকে নিয়ে গোটা রাত এসএসকেএমের প্রতীক্ষালয়ে কাটিয়েছে পরিবার। আত্মীয়দের দাবি, আজ বহির্বিভাগে দেখানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।



ফের প্রকট সরকারি হাসপাতালের রেফার রোগ। করোনার এই সঙ্কটকালে অসুস্থদের ক্ষেত্রে প্রতি মুহূর্ত যখন ভীষণ মূল্যবান, সেই পরিস্থিতিতে এমন আচরণে প্রশ্নের মুখে একাধিক সরকারি হাসপাতাল। গত ১৬ জুলাই ৪০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চার চারটি হাসপাতালে ঘুরেও রোগী ভর্তি করতে না পারার অভিযোগ ওঠে। ফের রোগী-প্রত্যাখানের অভিযোগ শহরের একাধিক সরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে। এবিপি আনন্দে খবর সম্প্রচারের জেরে অবশেষে ভর্তি হতে পারেন রোগী।