পার্থ প্রতিম ঘোষ, কলকাতা : আইন-শৃঙ্খলার রক্ষাকর্তা তাঁরা। কড়া হাতে দমন করেন অপরাধ। সমাজে শান্তি বজায় রাখার মস্ত দায় তাঁদের কাঁধে। আবার চকোলেট-লজেন্স, পেন-খাতা নিয়েও সমাজ গড়ার যুদ্ধে সামিল তাঁরা। রেল স্টেশনের পাশে খোলা আকাশের নিচে বোর্ড লাগিয়ে শিক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ উর্দিধারীরা। মাঝেরহাট স্টেশন চত্বরে যদি যান, দেখতে পাবেন অভিনব এই স্কুল। স্টেশন লাগোয়া মাঝেরহাট মধু বস্তির গরিব-দুঃস্থ পরিবারগুলোর শিশুদের পড়াশোনার ভার এখন সাউথ-ওয়েস্ট ট্রাফিক গার্ডের দায়িত্বে। অন্যরকম ক্লাসে বেশ মজেছে খুদে পড়ুয়ারাও।


করোনা অতিমারীর জেরে প্রায় দেড় বছরের কাছাকাছি বন্ধ সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যার ফলে অনলাইন ক্লাস, টিউশন ইত্যাদি এখন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তবে এই কলকাতারই মধ্যে যে আছে আরেক কলকাতা। এমন অনেক পরিবারের ছেলেমেয়ে রয়েছে, যাদের পক্ষে অনলাইন ক্লাস বা টিউশন, দুইই সুদূর কল্পনা। যেমন মাঝেরহাট মধু বস্তির শিশুরা, যাদের পরিবারের দিন কাটে দারুণ অর্থকষ্টের মধ্যে। তার মাঝে কোভিডের ধাক্কা গিয়ে পড়েছে তাদের পড়াশোনায়। গত দেড় বছরে যা কার্যত পুরোপুরি বন্ধ ছিল। এবার এই শিশুদের সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছে সাউথ-ওয়েস্ট ট্রাফিক গার্ড। নেতৃত্বে ওসি প্রসেনজিত চ্যাটার্জি। যতদিন না স্কুল খুলছে, ততদিন প্রতি সন্ধ্যায় দু'ঘণ্টা করে টিউশন ক্লাসে যোগ দেবে এই শিশুরা, ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পুলিশেরই। 


৩০ জন শিশুকে নিয়ে গত ১১ অগাস্ট থেকে শুরু হয়েছে টিউশন। স্কুল ছাড়া পড়ার কোনও জায়গা নেই। আবার করোনা আবহে স্কুলও বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। সকলের আর্থিক অবস্থাও এমন নয় যে, প্রাইভেট টিউশন নিতে পারবে। সেই কারণেই শিশুদের পড়ার প্রতি করোনাকালে আগ্রহ যাতে না কমে, তাই পুলিশের এরকম প্রচেষ্টা। খোলা আকাশের নিচে আপাতত চলছে ক্লাসরুম। যতদিন না পর্যন্ত স্কুল খুলছে ততদিন পুলিশের ক্লাসরুম চলবে।


সারাদিন ধরে তীব্র গরম, বৃষ্টি এসবের মধ্যে ট্রাফিক সামলানোর পর পুলিশরাই হয়ে উঠেছেন শিক্ষক। সবকিছুর পরে ট্রাফিক পুলিশের কর্মীরাই এই কাজে নিযুক্ত হয়েছেন। পুলিশ কাকুদের মাস্টারমশাই হিসাবে পেয়ে খুশি কচিকাঁচারাও। ডিসি ট্রাফিক অরিজিত সিনহা জানাচ্ছেন, লকডাউনে কমিউনিটি পুলিশিং করতে গিয়ে পুলিশকর্মীরা দেখেন, এই শিশুদের পড়াশোনায় মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। তাদের পাশে থাকার জন্য সাউথ-ওয়েস্ট ট্রাফিক গার্ডের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানানো হচ্ছে।


এছাড়াও বই, খাতা, পেন, পেন্সিল পুলিশকর্মীরা নিজেদের টাকা থেকেই দিচ্ছেন শিশুদের। শিশুরা যাতে রোজ পড়তে আসে তার জন্য কোনদিন চকলেট, কোনদিন লজেন্সও দেওয়া হচ্ছে। পড়ানোর পাশাপাশি পড়ার অভ্যাসে উৎসাহ দিতে ভালোবেসে চকোলেট, বিস্কুটও হাতে গুঁজে দেন। পুলিশের যে উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন সমাজের বিভিন্ন মহল।