আশাবুল হোসেন, দীপক ঘোষ ও উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, কলকাতা : ' পার্টিটা অহঙ্কার করার জায়গা নয়। দলটা গা জোয়ারি করার জায়গাও নয়। আমি শেষ কথা, একথা বলার জায়গা নেই আমাদের দলে। দলের মধ্যে কেউ উপদল করার চেষ্টা করবেন না। অনেক কষ্টে দলটা তৈরি করেছি। এই দলটাকে কোনও মতেই অন্য কারও কাছে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। আমি এ ব্যাপারে খুব রাফ অ্যান্ড টাফ। যতদিন বাঁচব, তাতে যেভাবে পার্টিটাকে তৈরি করে যাব, একটা জেনারেশন নয়, ৪-৫টি জেনারেশন কাজ করতে পারবে। ' 


সামনেই তৃণমূলের সাংগঠনিক নির্বাচন। ৫ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনও শুরু ফেব্রুয়ারিতেই। চারপাশে যখন নানা রাজনৈতিক ফর্মুলা, যোগ-বিয়োগের অঙ্ক কষা চলছে - ঠিক এই সন্ধিক্ষণেই দলকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) । বৃহস্পতিবার দলের সাংসদদের নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠকে তৃণমূল নেত্রী জানিয়ে দেন, এখন থেকে সংগঠনের কাজের অনেকটা, তিনি নিজেই দেখবেন।


তাঁর বার্তা, দলের ঊর্ধ্বে কেউ নন! রাজ্যে প্রধান বিরোধী দল বিজেপির (BJP) অন্দরে যখন চূড়ান্ত রাজনৈতিক শোরগোল, ঠিক সেই সময় দলের অন্দরে অস্থিরতা মেটাতে কড়া বার্তা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার ভার্চুয়াল বৈঠকে ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও (Abhishek Banerjee)। সূত্রের খবর, সেই বৈঠকে তৃণমূল নেত্রী বলেন,  ' আমি নানা কাজে ব্যস্ত থাকি। প্রচণ্ড কাজের চাপ। তা সত্ত্বেও এবার আমি নিজেই সংগঠনের কাজ অনেকটা দেখব।  ' 

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, আসলে এই কথা বলে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কার্যত বুঝিয়ে দিলেন  তৃণমূলে এখনও অবধি তিনিই শেষ কথা! আর সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এই কথা বলে কি বিশেষ কাউকে বার্তা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? সত্যিই কি সংগঠনের রাশ বিশেষ কেউ হাতে নিতে চাইছিলেন? তাই নিয়ে কি কোনও দ্বন্দ্ব তৈরি হচ্ছিল? না কি দলনেত্রী হিসাবে রুটিন বার্তা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়?

স্বাভাবিকভাবেই এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলির কোনও নির্দিষ্ট উত্তর না মিললেও, বিরোধীরা কটাক্ষ ছুঁড়ে দিতে শুরু করেছে। সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী এদিন বলেন,  ' তৃণমূল দলটা কীভাবে চলে সাধারণ মানুষ জানেন, দলটা যে তিনি চালান, ভাইপো নন, সেটা বুঝিয়ে দিলেন' 


তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়ের পাল্টা আক্রমণ,  'বিরোধীদের কাজ নেই, সবকিছুতেই যা খুশি মন্তব্য করতে হবে' 


বিজেপি বারবার দাবি করছে, বারবার ‘ডায়মন্ডবারবার মডেল’ তুলে ধরে আসলে সমান্তরাল প্রশাসন চালাচ্ছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।


সত্যিই কি দলের শীর্ষ নেত্রী ও নম্বর ‘টু’র মধ্যে কোনও মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে? না কি পুরোটাই বিরোধীদের মনগড়া তত্ত্ব? এই জল্পনার মধ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই গুরুত্বপূর্ণ বার্তা। এবার আমি নিজেই সংগঠনের কাজ অনেকটা দেখব। শুভেন্দু অধিকারী এই নিয়ে মন্তব্য করেন, ' আমি প্রাক্তন তৃণমূলী হিসেবে বলছি, ওই দলে একটাই পোস্ট বাকি সব ল্যাম্পপোস্ট' সব মিলিয়ে তৃণমূলনেত্রীর বার্তা ঘিরে এখন সরগরম রাজ্য রাজনীতি।