কলকাতা: আজ হাইকোর্টে নারদকাণ্ডের শুনানি। একদিকে নারদ-মামলা ভিন্ রাজ্যে সরানোর জন্য সিবিআইয়ের আবেদনের শুনানি হবে। অন্যদিকে, হাইকোর্টের জামিন স্থগিতাদেশের পুনর্বিবেচনা চেয়ে ধৃত চার নেতা-মন্ত্রীর আর্জিরও শুনানি হবে। 


ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মদন মিত্র ও শোভন চট্টোপাধ্যায়, এই চার নেতা-মন্ত্রীর হয়ে হাইকোর্টে সওয়াল করবেন অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি, সিদ্ধার্থ লুথরা, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ অন্যান্য আইনজীবীরা। 


নিম্ন আদালতের জামিনের নির্দেশে স্থগিতাদেশ জারি করে সোমবার নারদকাণ্ডে ধৃত হেভিওয়েট চারজন নেতা-মন্ত্রী-বিধায়ককে বুধবার পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। 


আজ এই মামলার পরবর্তী শুনানি। তবে ততক্ষণ পর্যন্ত হাট গুটিয়ে বসে থাকতে রাজি ছিল না তৃণমূল। জামিন খারিজের মামলায় মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের পুনর্বিবেচনার আর্জি জানান ধৃত চারজন।


গতকাল দুপুরে নারদকাণ্ডে ধৃত সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, মদন মিত্র ও শোভন চট্টোপাধ্যায়ের তরফে আইনজীবী তথা কংগ্রেস সাংসদ অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি, সিদ্ধার্থ লুথরা এবং আইনজীবী তথা তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে বৈঠক করেন। 


তারপরই কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল ও অরিজিত্‍ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেঞ্চে এই তিনজন আইনজীবী আবেদন জানিয়ে বলেন, আপনি সোমবার যে নির্দেশ (৪ হেভিওয়েট নেতার জামিনে স্থগিতাদেশ ও জেল হেফাজত) দিয়েছেন, তা পুনর্বিবেচানার আর্জি জানিয়ে আবেদনপত্র দাখিল করতে চাই। আপনি অনুমতি দিলে সেই আবেদনপত্র দাখিল করব।


ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ সেই অনুমতি দেয়। পাশাপাশি ধৃতদের আইনজীবীরা বুধবারই এই মামলার শুনানির আবেদন জানান। সেইসময় ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, বুধবার দুটো মামলারই শুনানি হবে।   


সিবিআই এই মামলা স্থানান্তরের আবেদন করেছে। তা নিয়ে বুধবার কলকাতা হাইকোর্টে শুনানি হবে। এরইসঙ্গে চার হেভিওয়েট নেতার জামিনের ওপর হাইকোর্ট যে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল, তারও শুনানি হবে বুধবারই। 


অন্যদিকে, ধৃত চার হেভিওয়েট নেতার তরফে জামিনের ওপর স্থগিতাদেশের নির্দেশ পুনর্বিবেচনার আবেদন জানানো হয়েছে। তারও শুনানি হবে এদিনই। 


এদিকে নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নেওয়ার ৮ দিনের মাথায় হঠাত্‍ করে, নারদকাণ্ডে সিবিআই-এর সক্রিয় হয়ে ওঠা এবং আচমকাই সোমবার চার হেভিওয়েট নেতা-মন্ত্রী-বিধায়কের বাড়িতে গিয়ে তাঁদের গ্রেফতার করে আনার নেপথ্যে, গভীর ষড়যন্ত্র দেখছে তৃণমূল।  


বরানগরের তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায় বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা শুধু নয়, এর পিছনে একটা রাজনৈতিক চক্রান্ত, একটা গভীর ষড়যন্ত্র। যা ঘটানো হয়েছে চূড়ান্ত অসৌজন্যমূলক।


দেশের পাশাপাশি রাজ্যও এই মুহূর্তে করোনার ধাক্কা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে নারদ মামলায় সিবিআই-এর তত্‍পরতা নিয়ে সন্দিহান বামেরাও।  রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শমীক লাহিড়ি বলেন, যারা দোষ করেছে তারা তো শাস্তি পাবে। মামলা তো আমরা করেছি। কিন্তু ৭ বছর ধরে ফেলে রেখা বল কেন? আর এই পরিস্থিতিতে গ্রেফতার করতে হল? আর যারা তত্‍কাল বিজেপি তারা ছাড় পাবে কেন? এথিক্স কমিটি বসেনি। হঠাত্‍ করে এই সময় যখন মানুষের জীবন বাচানোই কাজ, তখন এই কাজ কেন করা হল? কেন্দ্র সরকার ও রাজ্য সরকার দু’জনেই করোনা মোকাবিলায় ব্যর্থ। হাসপাতাল আছে বেড নেই, অক্সিজেন নেই, ভ্যাকসিন নেই। এগুলোকে আড়াল করতেই কি এসব ঘটল? ুখ্যমন্ত্রীকে বলব আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না।


বিজেপি অবশ্য বলছে, যা করার সিবিআই করছে। দলের রাজ্য মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, কোনও মন্তব্য করব না। উত্তর দিতে পারবে সিবিআই। তদন্তে গতি এলে বলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। তদন্তের গতি কমলে বলে দিদি-মোদি গটআপ। আমরা এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে ক্লান্ত। এই প্রশ্নের উত্তর দেবে সিবিআই।