কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, কলকাতা: সরকারি নির্দেশে মঙ্গলবার খুলবে স্কুল। কিন্তু তার আগেই আজ স্কুলের দরজায় চেনা ছবি। ২০ মাস পর স্কুলে হাজির পড়ুয়ারা। দেশজুড়ে আজ ন্যাশনাল অ্যাচিভমেন্ট সার্ভে। তাতে যোগ দিতেই স্কুলে হাজির হয়েছে পড়ুয়ারা। তারা সবাই জানিয়েছে, এতদিন পরে স্কুলে এসে, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়ে ভাল লাগছে।
১৬ নভেম্বর থেকেই রাজ্যে খুলতে চলেছে স্কুল। রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তই বহাল রেখেছ কলকাতা হাইকোর্ট। তবে পড়ুয়াদের স্কুলে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও বাধ্যবাধকতা নেই, জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
আগামী মঙ্গলবার থেকে রাজ্যে খুলতে চলেছে স্কুলের দরজা। দুই ভাগে ক্লাস হবে নবম-দশম এবং একাদশ-দাদ্বশের। দীর্ঘদিন পর ক্লাসে ফিরতে চলেছে পড়ুয়ারা। চকের দাগ পড়বে ব্ল্যাক বোর্ডে, গমগম করবে ক্লাস। কিন্তু করোনা আবহে ক্লাসের সময়সীমা আরও কমানোর দাবি জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন সুদীপ ঘোষ চৌধুরী নামে এক আইনজীবী। যার প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার শুনানি হয় প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে। যেখানে রাজ্য সরকারের তরফে অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় জানান, ইতিমধ্যে অনেক রাজ্যে স্কুলে খুলে গেছে। দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায়, পড়ুয়ারাও ক্লাসে ফিরতে মুখিয়ে আছে। উপযুক্ত করোনা বিধি মেনেই স্কুল চলবে। স্কুলে পড়ুয়াদের ঢোকা ও বেরনোর জন্য অতিরিক্ত সময় ধার্য করা হয়েছে। এছাড়াও ১০ মিনিট করোনা সতর্কতার পাঠ দেওয়া হবে পড়ুয়াদের। ফলে স্কুল খুললে কোনও অসুবিধা হবে না বলে দাবি করেন অ্যাডভোকেট জেনারেল।
অন্যদিকে, প্রধান বিচারপতি, মামলাকারীর উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, ‘রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তে আপনি কীভাবে সমস্যায় পড়বেন? আপনার কোথায় আপত্তি?’ জবাবে মামলাকারী সুদীপ ঘোষ চৌধুরী বলেন, ‘আমার অনেক আত্মীয়স্বজন আছেন, যাঁদের সন্তানরা স্কুলে যাবে। করোনা আবহে যা নিয়ে আমি আতঙ্কিত।’ পাল্টা মামলাকারীর ক’জন সন্তান, তা জানতে চান প্রধান বিচারপতি। উত্তরে মামলাকারী জানান, তাঁর এক সন্তান। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘তাহলে তো আপনার সন্তানকে এখন স্কুলে যেতে হবে না।’
এরপরই নতুন করে কোনও নির্দেশ না দিয়ে, রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তেই সম্মতি জানায় কলকাতা হাইকোর্ট। প্রধান বিচারপতি জানিয়ে দেন, স্কুল খোলা নিয়ে রাজ্য সরকারের বিজ্ঞপ্তি বহাল থাকবে। তবে কোনও পড়ুয়া, শিক্ষক বা অশিক্ষক কর্মীর যদি কোনও সমস্যা থাকে, তাহলে তাঁরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারবেন।
এদিকে শিক্ষামন্ত্রী বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, পড়ুয়াদের স্কুলে আসার ক্ষেত্রে কোনও বাধ্যবাধকতা থাকবে না। ব্রাত্য বসু বলেছেন, ‘হাইকোর্টের রায়কে সাধুবাদ জানাচ্ছি, কিন্তু কোনও অভিভাবক যদি মনে করে ছাত্রদের পাঠাবেন না, তাহলে তিনি নাও পাঠাতে পারেন না। হাজিরা নিয়ে সমস্যা হবে না।’
‘পড়ুয়ারা ক্লাসে আসার পর করোনায় আক্রান্ত হলে তার দায়িত্ব স্কুলের নয়।’ অভিভাবকদের থেকে এরকম মুচলেকা লিখিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কলকাতা দু-একটা বেসরকারি স্কুলের বিরুদ্ধে। যদিও শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারের তরফে এরকম কোনও মুচলেকা চাওয়া হবে না।
অন্যদিকে, মঙ্গলবার থেকে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খোলার কথা মাথায় রেখে সোমবার থেকে সকাল সাড়ে ৭টার পরিবর্তে ৭টায় শুরু হবে মেট্রো চলাচল। মেট্রোরেল সূত্রে খবর, অফিস টাইমে ৫ মিনিট অন্তর মিলবে মেট্রো। স্মার্ট কার্ডে করা যাবে সফর।