কলকাতা: মৃতের পরিবারের কাছে অনেক টাকা, গয়না রয়েছে এমনই ধারণা ছিল অপরাধীদের। তাই পরিকল্পনা করেই বোনের বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছিল অপরাধীরা। তারা জানত ওই সময়ে সুস্মিতা মণ্ডল একা থাকে। তবে মাকে খুনের সময় ছেলে দেখে ফেলে, সেই জন্য ছেলেকেও খুন করে অপরাধীরা। অবশেষে পর্ণশ্রীর জোড়া খুনের ঘটনার কিনারা করল লালবাজার হোমিসাইড শাখা। গ্রেফতার করা হল মৃতার দুই মাসতুতো ভাইকে।
পর্ণশ্রীতে খুনের ঘটনায় পরিচিতের যোগ আছে বলে আগেই অনুমান করেছিলেন তদন্তকারীরা। এবার সেই আশঙ্কাই স্পষ্ট হল। পর্ণশ্রীতে মা-ছেলেকে নৃশংভাবে খুনের ঘটনায় রবিবার সাংবাদিক বৈঠক করে লালবাজার। জানানো হয়েছে, ৬ অগাস্ট ১০০ ডায়ালে একটি ফোন আসে। উদ্ধার হয় মা ও ছেলে দু-জনের গলাকাটা দেহ। মৃতার বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করে পুলিশ। এর পর তদন্ত শুরু করে লালবাজারের হোমিসাইড শাখা।
ঘটনায় দু-জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে লালবাজার সূত্রে জানানো হয়েছে। ধৃতদের বাড়ি মহেশতলায়। ধৃত দু-জন মৃতার মাসতুতো ভাই। জেরায় অপরাধ কবুল করেছে ধৃতরা। কী কারণে খুন? এ দিনের সাংবাদিক বৈঠকে জানানো হয়েছে, বাজারে অনেক টাকা ধার হয়ে গিয়েছিল ধৃত সঞ্জয় দাসের। তাই খুনের পদক্ষেপ। ধৃতরা মনে করত বোনের কাছে অনেক টাকা, গয়না রয়েছে। তাই সেই টাকা লুঠের পরিকল্পনা করেই এদিন বোনের বাড়িতে পৌঁছে যায় দুই ভাই। তারা জানত ওই সময়ে বাড়িতে একাই থাকে তাদের বোন। সেই মতোই তৈরি করা ছক। খুন হন মহিলা। প্ল্যান মাফিক হাতের কাজ সারলেও বাধ সাধে ছোট ছেলে। মাকে খুনের সময় গোটা ঘটনা দেখে ফেলে সে, আর তাতেই ছেলে তমোজিত্কেও খুন করে অপরাধীরা।
গত ৭ সেপ্টেম্বর বেহালার পর্ণশ্রীতে ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় মা ও ছেলের রক্তাক্ত মৃতদেহ। ৩ দিন পরে বেহালার জোড়া খুনের রহস্যের কিনারা না হওয়ায় তদন্তভার নেয় লালবাজারের হোমিসাইড শাখা। পর্ণশ্রী থানার হাত থেকে তদন্তভার বুঝে নেওয়ার পর রাতেই গোপাল মিশ্র রোডের ওই ফ্ল্যাটে যান তদন্তকারীরা। ফের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মহিলার স্বামী তপন মণ্ডলকে লালবাজারে নিয়ে যান তাঁরা। বেহালার পর্ণশ্রীতে মা-ছেলের নৃশংস হত্যার পিছনে পরিচিতেরই হাত রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে অনুমান করেছিলেন আধিকারিকরা।
ময়নাতদন্তের রিপোর্টে উল্লেখ ছিল, সোমবার দুপুর ৩টে থেকে বিকেল চারটের মধ্যে খুন করা হয় সুস্মিতা মণ্ডল ও তাঁর ছেলে তমোজিৎকে। দুপুরে খাওয়াদাওয়ার ২ ঘণ্টা পর মৃত্যু হয় তাঁদের। পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনার সময় পেশায় শিক্ষিকা বছর পয়তাল্লিশের সুস্মিতা মণ্ডল ও তাঁর ১৩ বছরের ছেলে তমোজিত্ ঘরে ছিল। মহিলার স্বামী, বেসরকারি ব্যাঙ্কের কর্মী তপন মণ্ডল ছিলেন অফিসে। এ দিন চপার দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয় তাঁদের। ২টি আলাদা ঘরে পড়ে ছিল মা ও ছেলের মৃতদেহ। একজনের বেশি আততায়ী থাকার সম্ভাবনা তখনই প্রবল হয়েছিল। কারণ, ঘরে ধাক্কাধাক্কির চিহ্ন মেলেনি। প্রতিবেশীরা কেউ চিত্কারও শুনতে পাননি।