ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, কলকাতা: কার দেহ শনাক্ত করেছিল অমৃতাভ চৌধুরীর পরিবার? যার ভিত্তিতে চাকরি পায় অমৃতাভর বোন। হাওড়ার বাসিন্দা প্রসেনজিৎ আটার পরিবারের দাবি ঘিরে জ্ঞানেশ্বরী প্রতারণাকাণ্ডে রহস্য আরও ঘনীভূত। পরিবারের দাবি, প্রসেনজিতের দেহ পায় অমৃতাভর পরিবার। রেলের খাতায় এখনও নিখোঁজ সালকিয়ার ওই বাসিন্দা।


পরিবার পেয়েছে ৪ লক্ষ টাকা, বোন পেয়েছেন চাকরি। জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার ১১ বছর পর জানা গেল, যাঁর মৃত্যুর জন্য এইসব সাহায্য মিলেছে, তিনি এখনও জীবিত। তিনি উত্তর কলকাতার বাসিন্দা অমৃতাভ চৌধুরী। এদিকে এখনও নিখোঁজ সালকিয়ার বাসিন্দা প্রসেনজিৎ আটা। জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনায় নিখোঁজের স্ত্রী যূথিকা আটা বলেন, যে বডি পাওয়া যায়, আমার দৃঢ় ধারণা ওটাই আমার স্বামীর মৃতদেহ। একই দাবি প্রসেনজিতের মেয়ে পৌলোমী আটার।


কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে এক্কেবারে কেউটে। জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনায় মৃত সেজে চাকরি এবং আর্থিক সাহায্য নেওয়ার অভিযোগে সিবিআইয়ের হাতে আটক হয়েছেন অমৃতাভ চৌধুরী। অভিযুক্ত এবং তাঁর বাবাকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই। কার্যত দোষ কবুল করে নিয়েছেন প্রতারণাকাণ্ডে অভিযুক্ত।টাকা-সুদ সহ ফেরত দেব, চাকরি ফিরিয়ে দেব বলে জানিয়েছেন অমৃতাভ। এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্নে উঠেছে দুর্ঘটনায় যে মৃতদেহ অমৃতাভ চৌধুরীর পরিবারকে দেওয়া হয়, সেই দেহ কার? এই নিয়ে জল্পনার মধ্যেই চাঞ্চল্যকর দাবি করলেন জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনায় নিখোঁজের পরিবার।


পরিবারের দাবি, দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনে ছিলেন হাওড়ার সালকিয়ার বাসিন্দা প্রসেনজিৎ আটা। পরিবারের দাবি, প্রসেনজিতের হাতে থাকা চারটি আংটি দেখে তাঁরা একটি দেহ শনাক্ত করেন। কিন্তু সেই দেহ তাঁদের দেওয়া হয়নি। ডেথ সার্টিফিকেটের জন্য তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে আদালত পর্যন্ত দৌড়য় নিখোঁজের পরিবার। ১১ বছর লড়াইয়ের পরও মেলেনি ডেথ সার্টিফিকেট। রেলের খাতায় প্রসেনজিত্‍ এখনও নিখোঁজ। আর অমৃতাভ চৌধুরী আটক হওয়ার পর, সালকিয়ার পরিবার নতুন করে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। চাকরির দাবি ও তদন্তের দাবি জানিয়েছে নিখোঁজের পরিবার।


পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ছিলেন প্রসেনজিৎ আটা। তাঁর স্ত্রী গুরুতর অসুস্থ বলে জানিয়েছে মেয়ে পৌলমী। রেলের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলে তদন্তের দাবি জানিয়েছে পরিবার। যূথিকা আটার কথায়, ডেথ সার্টিফিকেট না পাওয়ায় অসুবিধা হচ্ছে, অথচ ওই মানুষটি জীবিত অবস্থায় সবকিছু উপভোগ করছেন, ন্যায্য অধিকার পেলাম না, উনি সব ভোগ করছেন। জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনায় নিখোঁজের আত্মীয় কৈশব পয়াত বলেন,  দুর্ঘটনার পর দেহ শনাক্ত করতে যাই। মর্গে একটি দেহ দেখানো হয়। হাতে চারটি আংটি ছিল। দেহ বিকৃত হয়ে যায়। জানানো হয় দেহটি নিয়ে চলে গেছে। আমাদের ধারণা কাউকে দেওয়া হয়।


এদিকে জ্ঞানেশ্বরী প্রতারণাকাণ্ডে অভিযুক্ত অমৃতাভ চৌধুরীর ডিএনএ পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছে বিশেষ সিবিআই আদালত। অভিযুক্তই আসল অমৃতাভ চৌধুরী কিনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত ডিএনএ পরীক্ষা প্রয়োজন, জানালেন বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক। ২ জুলাই আদালতে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ। অন্যদিকে, গতকাল নিজাম প্যালেসে রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় জ্ঞানেশ্বরী প্রতারণাকাণ্ডে অভিযুক্ত অমৃতাভকে। তার আগে জোড়াবাগানে অমৃতাভর বাড়িতে তল্লাশি চালান সিবিআই অফিসাররা। নিজাম প্যালেসে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় অমৃতাভ ও তাঁর বাবা মিহির চৌধুরীকে। ৭ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেওয়া হয় অমৃতাভর বাবাকে।