সৌভিক মজুমদার, ঝিলম করঞ্জাই ও সমীরণ পাল: চারিদিকে শোকের ছায়া। স্বজন হারানোর বুকফাটা কান্নার আওয়াজ। একটা অগ্নিকাণ্ড কেড়ে নিয়েছে ৯-৯টি প্রাণ! রেলের প্রথমসারির অফিসার থেকে দমকলের কর্মী, পুলিশের অ্যাসিস্টান্ট সাব ইন্সপেক্টর-- কাছের মানুষকে হারিয়ে সকলেই আজ শোকে পাথর।


স্ট্র্যান্ড রোডে রেলের কয়লাঘাটা বিল্ডিংয়ের ১৩ তলায় যখন আগুন লাগার খবর আসার পরেই ছুটে গিয়েছিলেন হেয়ারস্ট্রিট থানার অ্যাসিস্টান্ট সাব ইন্সপেক্টর, বাগুইআটির বাসিন্দা অমিত ভাওয়াল। সহকর্মীরা আটকালেও থামেননি অমিত। ছোটবেলা থেকেই পরোপকারী অমিত সোমবারেও ছুটে গিয়েছিলেন আগুনে আটকে পড়াদের সাহায্য করতে, তাঁদের উদ্ধার করতে। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি! 


বাগুইআটির দেশবন্ধুনগরের বাসিন্দা ওই পুলিশ অফিসারের স্ত্রী সকাল পর্যন্ত জানতেন না স্বামীর মৃত্যুর খবর। মঙ্গলবার দুপুর একটা নাগাদ লালবাজারে এএসআই  অমিত ভাওয়ালকে গান স্যালুট দেওয়া হয়। পুলিশ কমিশনার সহ পদস্থ কর্তারা মৃত অ্যাসিস্টান্ট সাব ইন্সপেক্টরকে শেষ শ্রদ্ধা জানান। 


 



 


সোমবার রেলের ভবনে আগুন লাগে সন্ধে ৬টার পর। ততক্ষণে বাড়ি যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিলেন রেলের ডেপুটি চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার পার্থসারথি মণ্ডল। এমনকি তাঁর ব্যাগও গাড়িতে তোলা হয়ে গিয়েছিল! কিন্তু তখনই আগুন লাগার খবর আসে।  দেহরক্ষীকে নিয়ে ওপরে ছুটে যান বরানগরের শ্রীমানি পাড়ার বাসিন্দা এই রেল আধিকারিক। ১৩ তলাতেই ছিল তাঁর অফিস। আর নামতে পারেননি! বাড়িতে রয়েছেন স্ত্রী-মেয়ে ও জামাই। এদিন রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ফোনে যোগাযোগ করতে না পেরে ঘটনাস্থলে ছুটে যান পরিজনেরা। 


পার্থসারথি মণ্ডলের দেহরক্ষীর দায়িত্বে ছিলেন আরপিএফের কনস্টেবল সঞ্জয় সাহানি। নিথর হয়ে গেছে তাঁর দেহও!


ধাপা মাঠপুকুরের বাসিন্দা অনিরুদ্ধ জানা ফায়ার অপারেটর হিসেবে কাজে যোগ দিয়েছিলেন বছর ছয়েক আগে। আগুন নেভাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি! ঝলসে যায় দেহ। 


পূর্ব রেলের অফিসে অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যু হয়েছে দমকল আধিকারিক গিরিশ দে-র। পাটুলির বাসিন্দা দমকলের সাব অফিসার লালবাজার দমকল কেন্দ্রে কর্মরত ছিলেন। 


মায়ের বুকফাটা কান্নার আওয়াজ ঢাকুরিয়ার পঞ্চাননতলার বাসিন্দা দমকলকর্মী বিমান পুরকায়েতের বাড়িতেও। ২৭ বছরের এই দমকল কর্মীর বাড়িতে রয়েছেন অসুস্থ মা-বাবা। অক্সিলারি ফায়ার অপারেটর পদে কর্মরত ছিলেন বিমান। 


 



 


মৃতদের তালিকায় রয়েছেন রেলের সিনিয়র টেকনিশিয়ান তথা হাওড়ার বাসিন্দা সুদীপ দাসও। হাওড়ার বাসিন্দা এই রেল কর্মী নিউ কয়লাঘাট বিল্ডিংয়ের ১৩ তলাতেই কাজ করতেন। অগ্নিকাণ্ডের পর দীর্ঘক্ষণ পার্কিং জোনে তাঁর মোটরবাইক দাঁড় করানো থাকায় বিপদ আঁচ করেন সহকর্মীরা। পরে রেলের তরফে তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। এদিন বিকেলের পর মৃতদেহ সনাক্ত করে তাঁর পরবার। 


৩১ বছরের গৌরব বেজ। অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যু হয়েছে এই দমকল কর্মীর। হালতুর লেনিন নগরের বাসিন্দা রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এমএ পাশ করার পর ২০১৬ সালে দমকল বিভাগে চাকরি পান গৌরব। কর্মরত ছিলেন মির্জা গালিব স্ট্রিটে দমকলের সদর দফতরে। টিভি দেখে জানতে পারেন পরিবারের সদস্যরা। মোবাইলে যোগাযোগ করতে না পেরে এসএসকেএমে গিয়ে ওই দমকল কর্মীর দেহ সনাক্ত করেন তাঁরা। 


এদিন মৃত দমকল কর্মীদের বাড়িতে যান দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু। পরে সন্ধেয় মৃতদের হাতে আর্থিক সাহায্যের চেক তুলে দেওয়া হয়।