আশাবুল হোসেন, দীপক ঘোষ ও প্রকাশ সিন্হা, কলকাতা : চিরনিদ্রার দেশে সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তাঁর মৃত্যুর পর থেকেই রাজনৈতিক জীবনের পাশাপাশি সামনে আসছে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের অনেক কথা। তিনি নাকি সাংঘাতিক ভূতের ভয় পেতেন। যেমন ভাল গল্প বলতেন, তেমন তাঁকে নিয়ে গল্পের শেষও নেই। শোনা যায়, একবার নাকি রাইটার্স বিল্ডিংয়ে ভূতের সামনা-সামনি পড়ে গিয়েছিলেন তৎকালীন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় !


সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের মন্ত্রিসভায় তথ্য-সংস্কৃতি দফতরের দায়িত্বে ছিলেন সুব্রত। দেশে জরুরি অবস্থা চলাকালীন বিশেষ কাজে রাতেও তাঁকে রাইটার্স বিল্ডিংয়ে যেতে হত। মহাকরণে তিনতলার ঘরে বসতেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। একবার নাকি তিনতলায় লিফট থেকে বেরিয়ে নিজের ঘরে ঢোকার মুখে ভূতের মুখে পড়েছিলেন তিনি। 


ঘনিষ্ঠদের কাছে তিনি গল্প করেছিলেন, সেদিন রাতে রাইটার্সে এক কনস্টেবল তাঁকে দেখে স্যালুট জানিয়েছিলেন। কিন্তু, সুব্রতবাবুর নজর পড়ে, ওই কনস্টেবলের পায়ের দিকে। ওই কনস্টেবলের নাকি পা ছিলই না। তিনি শূন্যে ভেসেছিলেন! ওই ঘটনা দেখেই দ্রুত নিজের ঘরে ঢুকে গিয়েছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। পরে তিনি ডেকে পাঠিয়েছিলেন সেই সময়ে রাইটার্সে কর্তব্যরত পুলিশের পদস্থ কর্তাদের। পুলিশকর্তারা তাঁকে বলেছিলেন, সেই সময়ে রাইটার্সের তিনতলায় কোনও পুলিশকর্মীরই পোস্টিং ছিল না। ওই ঘটনার পর থেকে রাতে কোনওদিন আর মহাকরণে যাননি সুব্রত মুখোপাধ্যায়।


সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে যাঁরা দীর্ঘদিন রাজনীতি করেছেন, তাঁরা বলেন, ভূতের ভয়ে সুব্রত মুখোপাধ্যায় নাকি রাতে আলো জ্বেলে শুতেন। এনিয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, সুব্রতদা সাংঘাতির ভূতে ভয় পেত। আলো জ্বালিয়ে শুত। বিচিত্র মানুষ ছিল। অনেক গল্প করত। বিধানসভায় আমার ডানদিকের যে আসনে মানুষটি বসে থাকত সেই সুব্রত দা আর নেই।


সুব্রত মুখোপাধ্যায় মানেই আড্ডার আসর, আর অফুরান গল্প।  সেই আড্ডার মেজাজ একেবারে ফিকে করে দিয়ে, চলে গেলেন মধ্যমণিই। অবিভক্ত বর্ধমানের নাদনঘাট থেকে যে যাত্রার শুরু হয়েছিল, সেই পথ চলা শেষ হয়ে গেছে। অসংখ্য অনুরাগীর চোখের জলের মধ্যে দিয়ে শেষ বিদায় নিয়েছেন তিনি। যাওয়ার আগে ছুয়ে গেছেন 'প্রিয়' সব কিছু। সেই বিধানসভা, বালিগঞ্জের ফ্ল্যাট, একডালিয়া এভারগ্রিন ক্লাব। যার আনাচ-কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের অজস্র স্মৃতি ।