সঞ্চয়ন মিত্র, কলকাতা: বিপত্তারিণী অর্থাৎ যিনি বিপদ থেকে তারণ করেন বা রক্ষা করেন। বাংলা ও ওড়িশার আশপাশের গ্রামে-গঞ্জে এই পুজো বেশ জনপ্রিয়। আষাঢ় মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া থেকে শুক্লা দশমীর মধ্যে মঙ্গলবার এবং শনিবার সাধারণত এই পুজো হয়ে থাকে। লক্ষণীয় আষাঢ় মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া অর্থাৎ রথযাত্রা এবং শুক্লা দশমী অর্থাৎ উল্টোরথের মধ্যে এই পুজো হয়। 


বিপত্তারিণীর আসলে দেবী দুর্গারই এক রূপ। মূলত মহিলারা ওই দিন উপবাসে থেকে দেবীর পুজো অর্চনা করেন। মনষ্কামনা করে হাতে লাল সুতোর তাগা পরেন। অনেকে আবার মনষ্কামনা পূর্ণ হলে দণ্ডিও কাটেন। সে ক্ষেত্রে স্থানীয় নদী বা কোনও জলাশয়ে স্নান সেরে দণ্ডি কেটে পুজোর জায়গায় গিয়ে পুজো দেন। অনেকেই মনে করেন মা বিপত্তারিণী আসলে বাংলার এক লৌকিক দেবী। তবে মার্কন্ডেয় মুনি প্রথম বিপত্তারিণী ব্রত কথা প্রচার করেন। 



বিপত্তারিণীর ব্রতকথায় দুই রাজপরিবারের কাহিনী প্রচলিত রয়েছে। বিদর্ভের রাজা সত্যদাসের পুত্র ছিলেন অলোকেশ। কথিত আছে তিনি একবার মৃগয়া করতে বেরিয়ে পথ ভুলে পাশের রাজ্য অবন্তীপুরে ঢুকে পড়েন। সে জায়গাটি ছিল অবন্তী রাজের মৃগয়া ক্ষেত্র। সেখানে একটি হরিণ শিকার করলে রাজার সেনারা তাকে বেঁধে নিয়ে যায় রাজদরবারে। সে সময় অবন্তী রাজ্যের রাজা ছিলেন চক্রধর।


সেই খবর বিদর্ভে পৌঁছলে বিদর্ভরাজ সত্যদাস ছুটে গেলেন অবন্তী রাজ্যের দরবারে। কিন্তু অবন্তীরাজ তাঁকেও বন্দি করলেন। রাজা এবং রাজপুত্রের বন্দি হওয়ার খবর পেয়ে বিদর্ভের রানি রত্না কান্নায় ভেঙে পড়লেন। এরপর রানি সেই অবস্থায় উঠে পুজোর আয়োজন করলেন। সেই দিনটা ছিল রথ যাত্রার পরের মঙ্গলবার। রানি পুজো সেরে ভক্তিভরে দেবীর স্তব করতে লাগলেন।




শোনা যায় পুজো শেষে সংকল্প করলেন মায়ের কৃপা না হলে তিনি এই দেহ ত্যাগ করবেন। স্ত্রী এবং মায়ের এই কাতর প্রার্থনা শুনলেন মা বিপত্তারিণীর। সেই রাতেই দেবী অবন্তীরাজ চক্রধরকে স্বপ্ন দিয়ে বললেন যে তুমি আমার ভক্তকে বন্দি করে রেখেছে দেখে আমি কষ্ট পাচ্ছি।



এই স্বপ্ন পেয়ে অবন্তীরাজ তখনই বিদর্ভরাজ এবং তাঁর ছেলেকে মুক্তি দিলেন। শুধু তাই নয় সত্যদাসের সঙ্গে নিজের মেয়ের বিবাহের প্রস্তাব দিলেন। দুই রাজ্য আত্মীয়তায় বাঁধা পড়ল। দেবীর প্রসাদ লাভ করে শান্তি ফিরল উপায় রাজ্যে। এই ব্রত কথা স্মরণ করে আজও বাংলার ঘরে ঘরে মহিলারা সংসারের বিপদ কাটাতে ও শান্তি ফিরিয়ে আনতে দেবী বিপত্তারিণীর পুজো করে থাকেন।