পার্থ প্রতিম ঘোষ, কলকাতা: বামেদের ডাকা ধর্মঘটে উত্তেজনা ছড়াল কলকাতা জুড়ে। বন্ধ করে দেওয়া হল দোকান। ভাঙচুর করা হল গাড়িতে। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেন সুজন চক্রবর্তীরা। পাল্টা সমালোচনায় সরব হয়েছে তৃণমূল।
করোনা আবহে দীর্ঘ ১১ মাস বন্ধ থাকার শুক্রবার স্কুল খুলেছে রাজ্যজুড়ে। এদিনই রাস্তাঘাটে দেখা গেল এই ছবিও। অবরোধ! গাড়ি ভাঙচুর! জোর করে দোকান বন্ধ। সবার জন্য শিক্ষা, কর্মস্থান-সহ একাধিক দাবিদাওয়া নিয়ে বৃহস্পতিবার ১০টি বাম ছাত্র-যুব সংগঠনের নবান্ন অভিযান ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এস এন ব্যানার্জি রোড। বেধড়ক লাঠিপেটা করে পুলিশ ৷ আন্দোলনকারীরা দলের মধ্যে মাটিতে পড়ে যাওয়ার পরও মারধর করা হয় ৷ আহত হন একাধিক বাম যুব-ছাত্র কর্মী-সমর্থক ৷
কাঁদানে গ্যাসে অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেকেই ৷ এই পরিস্থিতিতে পুলিশি নির্যাতনের অভিযোগে, শুক্রবার রাজ্যজুড়ে ১২ ঘণ্টার ধর্মঘটের ডাক দেয় বামেরা। তাতে সামিল হয় কংগ্রেসও। আন্দোলনের জেরে শুক্রবার ধুন্ধুমার চেহারা নেয় শিয়ালদা চত্বর। প্রথমে মৌলালি মোড়ে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান বাম-কংগ্রেস কর্মীরা। পরে রাস্তা আটকে শুরু হয় বিক্ষোভ। খানিক পরে জোটপন্থীদের মিছিল এগোয় কলেজ স্ট্রিটের দিকে। এন্টালির কাছে দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা।
ঝাণ্ডার লাঠির ঘায়ে ভেঙে ফেলা হয় গাড়ির কাচ। অন্যান্য গাড়ির উপরেও পড়তে থাকে লাঠির বাড়ি। ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়া হয় গার্ডরেল। গাড়ির বনেটে উঠে পড়েন কংগ্রেস সমর্থকরা। শিয়ালদার কাছে মহাত্মা গান্ধী রোডে জোর করে দোকান বন্ধ করে দেন ধর্মঘটীরা।
মিছিল থেকে বেরিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন সুজন চক্রবর্তী। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজ চক্রবর্তী জানান, ‘‘শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল হচ্ছে, কয়েক হাজার মানুষ রয়েছে, গতকাল যেভাবে পুলিশ করেছে প্রতিক্রিয়া তো থাকেই, কয়েকজন দোকানে গিয়েছিল, আমি নিজে গিয়ে সরিয়ে নিয়ে এসেছি- এটা আমরা করি না, ভাঙচুর কোথাও হয়নি ৷’’
ধর্মঘটের সমর্থনে দলীয় কর্মীর মোটরবাইকে চড়ে পথে নামেন কংগ্রেস বিধায়ক তথা বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান। বিরোধী দলনেতা ও কংগ্রেস বিধায়ক আব্দুল মান্নান জানান, ‘‘ভাঙচুর- একটা-দুটো ছেলে করেছে, দেখেছো তো সঙ্গে সঙ্গে বারণ করা হয়েছে, চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি, ৷ অবশ্যই ব্যবস্থা নেব ৷’’
উত্তর থেকে দক্ষিণ, শহরের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ-অবরোধ করে বাম-কংগ্রেস। যাদবপুর- বেহালা- শ্যামবাজার- বউবাজার- সল্টলেক- বিমানবন্দর, সর্বত্রই দেখা গিয়েছে একই ছবি ৷
বৃহস্পতিবার পথে নেমেছিলেন ছাত্র-যুবরা। আর শুক্রবার ধর্মঘট পালন করতে রাস্তায় নামেন বাম-কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা। পাল্টা কড়া হাতে বনধের মোকাবিলা করে পুলিশ। বাম-কংগ্রেসের ধর্মঘটের সমালোচনা সরব হয়েছে তৃণমূল। বিধানসভা ভোটে ইতিমধ্যেই ২০১টি আসনে বাম-কংগ্রেসের মধ্যে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত হয়ে গেছে!
এই প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার বাম ছাত্র-যুবদের নবান্ন অভিযান ঘিরে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি ৷ আর শুক্রবার ধর্মঘটের সমর্থনে দুই দল একসঙ্গে ময়দানে নামার পর, কি ভোটের আগে অক্সিজেন পেল বাম-কংগ্রেস জোট? উত্তর দেবে সময়।