কলকাতা: ভুয়ো ভ্যাকসিনকাণ্ডে ধৃত দেবাঞ্জন দেবের একের পর এক প্রতারনার ঘটনা সামনে আসছে। পুলিশ সূত্রে খবর, দেবাঞ্জন ডিসেম্বর মাসে একটি সিকিওরিটি এজেন্সি থেকে দেহরক্ষী নেয়। সে সময় দেবাঞ্জন ভুয়ো সরকারি নথি দেখিয়ে দাবি করেছিল, রাজ্য সরকার তাকে দেহরক্ষী নিতে বলেছে। দেবাঞ্জনের কসবার অফিসেও আসেন সিকিওরিটি এজেন্সির আধিকারিকরা। তবে দেহরক্ষীকে রেখে দিলেও ২ মাস পর সিকিওরিটি এজেন্সির সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে দেন দেবাঞ্জন।
এদিকে, ভুয়ো ভ্যাকসিনকাণ্ডে ধৃত দেবাঞ্জন দেবের বিরুদ্ধে গত বছর সল্টলেকের ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানায় চাকরি দেওয়ার নাম করে প্রতারণার মৌখিক অভিযোগ করা হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, দেবাঞ্জনের বাড়ির লোক সে সময় জানতে পারেন, সে ভুয়ো আইএএস। এমনকী দেবাঞ্জন ভুয়ো আইএএস সেজে বেশ কয়েক জায়গায় তল্লাশিও চালায়। গতবছর সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরের মধ্যে ৬৫ হাজার টাকায় অফিস ভাড়া নেয় সে। গতকাল রাতে দেবাঞ্জনকে নিয়ে তার মাদুরদহর বাড়িতে প্রায় আড়াই ঘণ্টা তল্লাশি চালান লালবাজারের গোয়েন্দারা। পুলিশ সূত্রে খবর, দেবাঞ্জনের বাড়ি থেকে বেশ কিছু নথি, স্ট্যাম্প বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। মিলেছে ৩ টি ডেবিট কার্ড ও ব্যাঙ্কের পাসবুক। দেবাঞ্জনের বাবা করোনায় আক্রান্ত বলেও সূত্রের খবর।
উল্লেখ্য, জাল ভ্যাকসিন দেওয়া।ভুয়ো ইমেল আইডি তৈরি করা,জাল সরকারি স্ট্যাম্প বানানো!ভুয়ো ভ্যাকসিনকাণ্ডে তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই দেবাঞ্জন দেবের একের পর এক কু-কীর্তির পর্দা ফাঁস হচ্ছে। পরতে পরতে প্রতারণার সন্ধান পেয়ে রীতিমতো তাজ্জব লালবাজারের দুঁদে অফিসারররা। পুলিশ সূত্রে খবর, জেরায় ভুয়ো আইএএস অফিসার স্বীকার করেছে, লোক দেখাতে ও কর্মীদের ভুল বোঝানোর ফন্দি এঁটে নিজের ভুয়ো পরিচয় ব্যবহার করে কোভিশিল্ড চেয়ে পুণের সিরাম ইন্সটিটিউট কর্তৃপক্ষকে ইমেল করেছিল সে।এর কিছুদিন পরে বাজার থেকে জাল ভ্যাকসিন কেনে।লালবাজার সূত্রে খবর, জেরায় দেবাঞ্জনের স্বীকারোক্তি এখনও পর্যন্ত আমহার্স্ট স্ট্রিট সিটি কলেজ ও কসবা--- দু’জায়গাতেই ভুয়ো ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্প করেছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, দেবাঞ্জনের সংস্থার কর্মীরা প্রতারণার বিষয়টি ঘুণাক্ষরেও জানতে পারেননি। জেরায় তদন্তকারীরা আরও জানতে পেরেছেন,কলকাতা পুরসভার ডেপুটি ম্যানেজারের নাম করে ভুয়ো ইমেল আইডি তৈরি করেছিল সে।
দেবাঞ্জনের একাধিক ডেরায় তল্লাশি চালিয়ে প্রচুর জাল স্ট্যাম্প উদ্ধার করেছেন গোয়েন্দারা। লালবাজার সূত্রে জানা গেছে, এই জাল স্ট্যাম্পগুলি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নির্বাচন কমিশন,তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর,পূর্ত দফতর ও কলকাতা পুরসভার নামে তৈরি করা হয়েছিল।এখনও পর্যন্ত পুলিশ দেবাঞ্জনের ৮টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হদিশ পেয়েছে।যার মধ্যে একটি WBFINCORP বলে তার সংস্থার নামে।
এ নামে কোনও সরকারি সংস্থার না থাকলেও, এই অ্যাকাউন্ট থেকেই কর্মীদের বেতন দিত প্রতারক। যাতে কর্মীরা আশ্বস্ত হন, সেজন্যই সরকারি সংস্থার নামের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে WBFINCORP নামে নিজের কোম্পানি খুলে ফেলে দেবাঞ্জন। এই কোম্পানি এবং এই নামে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট কী নথি দিয়ে খুলল দেবাঞ্জন তা খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা।লালবাজার সূত্রে জানা গেছে, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দেবাঞ্জন দেবের সংস্থার কর্মী-সহ ১০ জনকে তলব করা হয়েছে।