নয়াদিল্লি: যাঁরা সরকারি প্রশাসন সামলানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন এক সময়,সেই বাঘা বাঘা প্রাক্তন আমলাদের কড়া সমালোচনার মুখে পড়লেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। ‘লাভ জিহাদ’ রোখার নামে রাজ্যজুড়ে সংখ্যালঘুদের উপরে নিপীড়নচালানোর অভিযোগ যোগী প্রশাসনের বিরুদ্ধে। ‘লাভ জিহাদ’ অধ্যাদেশ জারি করে সংখ্যালঘুদের টার্গেট করার অভিযোগ তুলে  প্রতিবাদে সরব হলেন দেশের প্রাক্তন শতাধিক আমলা। মঙ্গলবার প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের প্রাক্তন উপদেষ্টা টিকেএস নায়ার, প্রাক্তন বিদেশ সচিব নিরুপমা রাও সহ শতাধিক প্রাক্তন আমলা যোগী-র উদ্দেশে এক জোরালো চিঠি দিয়েছেন। তাতে কড়া ভাষায় বলা হয়েছে, ‘উত্তরপ্রদেশ ক্রমশই ঘৃণা, বিদ্বেষ রাজনীতির ভরকেন্দ্র হয়ে উঠেছে।’ অবিলম্বে লাভ জিহাদ সংক্রান্ত অধ্যাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। শতাধিক আমলার সই করা চিঠি নিয়ে অবশ্য যোগী কিংবা উত্তরপ্রদেশের শীর্ষ প্রশাসনিক আধিকারিকরা কোনও মন্তব্য করেননি।

আমলারা সংশ্লিষ্ট চিঠিতে বলেছেন, ‘গঙ্গা-যমুনার সংযোগস্থল হিসেবে পরিচিত উত্তরপ্রদেশে একসময়ে যে নাগরিক সভ্যতা গড়ে উঠেছিল, আজ সেই রাজ্যে নাগরিকদের সংবিধান প্রদত্ত অধিকার ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। উল্টে তা ঘৃণা আর বিদ্বেষের রাজনীতির ভরকেন্দ্র হয়ে উঠেছে। দুঃখজনক ব্যাপার হল, সরকারি ও সাংবিধানিক সংস্থাগুলিই আজ সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়ানোর মতো নোংরা খেলায় মেতেছে। রাজ্য জুড়ে আপনার প্রশাসন যুব সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অপরাধ সংগঠিত করে চলেছে। সেই সমস্ত যুবক-যুবতী নারকীয় অত্যাচার আর অপরাধের শিকার হচ্ছেন, যাঁরা স্বাধীন দেশে মুক্ত নাগরিকের মতো জীবনযাপন করতে চান।’

আমলাদের আরও সংযোজন, ‘ধর্মান্তকরণ বিরোধী বিল আসলে যে মুসলিম যুবক আর যুবতীদের শায়েস্তা করার, তাঁদের মৌলিক অধিকার খর্ব করার জন্যই নিয়ে আসা হয়েছে, তা গত কয়েকদিনের ঘটনাতেই প্রমাণিত। মুসলিম যুবক-যুবতীদের সবক শেখাতে যে পুলিশ ও প্রশাসনিক আধিকারিকরা অত্যু‍ৎসাহী, তারাই বজরং দল সহ নীতি পুলিশের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া কট্টর সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে নীরব ও নিশ্চুপ। সংবিধান যে দায়িত্ব দিয়েছিল তা পালনে আপনি সম্পূর্ণ ব্যর্থ। সংবিধান আপনাকে কী দায়িত্ব দিয়েছে, তা সম্পর্কে আরও পড়াশুনা করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।’

এরকম কড়া ভাষায় প্রাক্তন আমলাদের যোগীর সমালোচনা করতে উদ্যত হওয়ার ঘটনাটি নজিরবিহীন। এক ধরনের চাপ যোগী সরকারের উপর তৈরি হল বলাই যায়।