পার্থপ্রতিম ঘোষ, কলকাতা : পরনে ডিজাইনার পাঞ্জাবি। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে গিয়ে ফুটবল পায়ে মাঠ কাঁপালেন মোহনবাগান সমর্থক মদন মিত্র। শুধু তাই নয়, জানালেন, 'যেদিন ইস্টবেঙ্গল ক্লাব তৈরি হয়েছে, সেদিন মোহনবাগানি হিসেবে এটা বুঝতে পেরেছি, জগাই মাধাই না থাকত তবে নিমাই কে কি চিনত লোকে !' শুধু তাই নয়, ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের তহবিলে এক মাসের বেতন উপহার মোহনবাগানি বিধায়ক মদন মিত্রের। ২২ জুলাই, বৃহস্পতিবার এমনই রূপে দেখা গেল তাঁকে।


এদিন মদন মিত্র বলেন, আমার বাড়িতে গেলে আপনারা অবাক হয়ে যাবেন। বাড়িতে ঢুকতে গেলে প্রথমেই যেটা পাবেন, সেটা ১৯১১-র মোহনবাগান শিল্ড। আমার গোটা বাড়িটাই মোহনবাগান। আমরা যখন এসেছি, তখন মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল ক্লাব তৈরিই হয়নি।


এখানে কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ করতেও ছাড়েননি কামারহাটির বিধায়ক। তিনি বলেন, 'ভারতের ফুটবল ১৪০ নম্বরেই থাকুক, আর যত নম্বরেই থাকুক, তাতে তো অমিত শাহদের কিছু যায় আসে না। তাঁরা তো দৌড়াচ্ছেন এশিয়ার ক্রিকেটের কী হবে, তা নিয়ে। কেন তাঁরা ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের দুর্দিনে তাদের আর্থিক সাহায্য করতে পারছে না?'


তিনি আরও বলেন, 'আমার এক মাসের যা মাইনে তা আমি ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের তহবিলে দেওয়ার কথা আমাদের লোকেদের বলে দিয়েছি। একজন মোহনবাগান সমর্থক হিসেবে, একজন বিধায়ক হিসেবে, তার থেকেও বেশি একজন ফুটবলপ্রেমী হিসেবে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের এই দুর্দিনে আমি পাশে দাঁড়াচ্ছি।' মোহনবাগান জিতলে কীভাবে তা সেলিব্রেট করা হত, তারও স্মৃতিচারণা করলেন মদন মিত্র।


গত মরসুমের একদম শেষ মুহূর্তে ইন্ডিয়ান সুপার লিগে অন্তর্ভুক্তি ঘটে ইস্টবেঙ্গলের। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে লাল-হলুদে এসেছিল স্পনসর। লগ্নিকারী সংস্থা শ্রী সিমেন্টের সঙ্গে প্রাথমিক চুক্তিতে সই করেন ইস্ট বেঙ্গল কর্তারা। কিন্তু এই মরসুমে যখন আইএসএল এগিয়ে আসছে তখন থেকেই লগ্নিকারী সংস্থার সঙ্গে, ক্লাব কর্তৃপক্ষের মতবিরোধ। সূত্রের খবর, লগ্নিকারীদের দাবি ক্লাব কর্তারা চূড়ান্ত চুক্তিতে সই না করলে তাঁরা বিনিয়োগ করবেন না। এদিকে ক্লাব কর্তাদের অভিযোগ, প্রাথমিক চুক্তির সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তির বিস্তর ফারাক রয়েছে। চূড়ান্ত চুক্তিতে সই করলে, ক্লাব কর্তৃপক্ষের হাতে কোনও অধিকারই থাকবে না। সমর্থকদের ক্লাবে ঢোকা-বেরনোর ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ জারি হবে। 


জানা যায়, বিরোধের মধ্যেই চুক্তিপত্র পরিমার্জিত করে পাঠায় লগ্নিকারী সংস্থা শ্রী সিমেন্ট। কিন্তু তাতেও সম্মত না হওয়ায় সই করেননি ক্লাব কর্তারা। এর পরই সর্বসম্মতিক্রমে ক্লাব কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেয়, চুক্তিপত্রে সই করা হবে না। যার জেরে বুধবার বিকেলে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সামনে। এই চুক্তি-বিরোধ নিয়ে ক্লাব কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছে সমর্থকদের এক পক্ষ। অপরপক্ষ আবার চুক্তিতে সইয়ের পক্ষে। তা নিয়েই বুধবার ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের অদূরে সংঘর্ষ বাধে। শেষমেশ পুলিশকে লাঠিচার্জ করতে হয় পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে।