ভোপাল: পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার কড়া জবাব দিয়েছে ভারত। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে Operation Sindoor অভিযানে বড় সাফল্য মিলেছে। সেই সাফল্য উদযাপনের অন্যতম মুখ হয়ে উঠেছেন কর্নেল সোফিয়া কুরেশি। পাকিস্তানের কোথায়, কী ভাবে জঙ্গিঘাঁটিগুলিকে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তা দেশবাসীর সামেন তুলে ধরেছেন তিনি। সেই কর্নেল সোফিয়াকে নিয়েই এবার বিতর্কিত মন্তব্য করে বসলেন বিজেপি নেতা তথা মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রী বিজয় শাহ। বিতর্ক শুরু হতে তিনি যদিও ক্ষমা চেয়েছেন। কিন্তু বিরোধীরা বিজয়ের অপসারণের দাবিতে সরব হয়েছেন একযোগে। (Colonel Sofiya Qureshi)
মধ্য়প্রদেশের জনজাতি কল্যাণ মন্ত্রী বিজয় সম্প্রতি ইন্দৌরের রামকুণ্ড গ্রামে আয়োজিত একটি সভায় কর্নেল সোফিয়াকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন। তাঁকে বলতে শোনা যায়, "ওরা (পহেলগাঁওয়ের জঙ্গিরা) আমাদের বোনেদের সিঁদুর মুছেছিল। আমরা ওদেরই বোনকে পাঠিয়ে বদলা নিয়েছি, ওদের ধ্বংস করে দিয়েছি (অ্যায়সি কি ত্যায়সি কর দিয়া)। ওদের বোনকে পাঠিয়েই ওদের ধ্বংস করে দিয়েছি।" (Vijay Shah)
সেখানেই থামেননি বিজয়। তিনি আরও বলেন, "ওঁদের বোনকে বিমানে চাপিয়েই ঘরে ঢুকে হামলা চালান মোদিজি। জোরে হাততালি হোক। ওরা আমাদের বোনেদের বিধবা করেছিল, জামাকাপড় খুলে হিন্দুদের মেরেছিল। মোদিজি কাপড় খুলতে তো পারবেন না! তাই ওদের সমাজের বোনকেই পাঠিয়েছেন ওদের উলঙ্গ করতে, ওদের শিক্ষা দিতে।"
বিজয়ের ওই মন্তব্য সামনে আসতেই নিন্দার ঝড় ওঠে। কংগ্রেস-সহ অন্য বিরোধী দলগুলি তাঁর পদত্যাগের দাবি তোলেন। দল থেকে তাঁকে বহিষ্কারের দাবিও তোলা হয়। সেই আবহে মধ্যপ্রদেশে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি ভিডি শর্মা জানান, তাঁরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। বিজয়কে সতর্ক করা হয়েছে ইতিমধ্যেই। এ ব্যাপারে কারও কিছু বলার অধিকার নেই বলেও জানান তিনি।
বিতর্কের মুখে পড়ে ক্ষমা চেয়ে নেন বিজয়ও। তিনি বলেন, "জাত ও ধর্মের ঊর্ধ্বে গিয়ে সিস্টার সোফিয়া ভারতকে গৌরবান্বিত করেছেন। নিজের বোমের চেয়েও ওঁকে বেশি সম্মান করি। দেশসেবার জন্য ওঁকে সেলাম জানাইয ওঁকে অপমান করার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারি না। তার পরও আমার কথায় কোনও সমাজের কেউ, কোনও ধর্মের কেউ আহত হলে, আমি ১০ বার ক্ষমা চাইতে রাজি আছি।"
কিন্তু তার পরও বিতর্ক থামছে না। বিজয়ের পদত্যাগের দাবিতে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন বিজয়া রাহাতকরও গোটা ঘটনার নিন্দা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, এই ধরনের মন্তব্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। মহিলাদের নিয়ে কথআ বলার সময় ভাষার নিয়ে সতর্ক হওয়া উচিত প্রত্যেকের। এই মন্তব্যে শুধুমাত্র মহিলাদের অপমান করাই হয়নি, দেশের নিরাপত্তার জন্য জান লড়িয়ে দিচ্ছেন যে মেয়েরা, তাঁদের সম্মানহানি হয়েছে বলেও জানান তিনি।
মধ্যপ্রদেশের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি জিতু পটওয়ারি এবং অন্য কংগ্রেস নেতারা ভোপালে একটি স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন, যাতে বিজয়ের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। জিতু বলেন, "নরেন্দ্র মোদি, মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদবকে পদক্ষেপ করতে আর্জি জানিয়েছিলাম গতকালই। বিজয় শাহ যে মন্তব্য করেছেন, তা দেশের ঐক্য, অখণ্ডতার পরিপন্থী। আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকেই অপমান করেননি শুধু, আমাদের মেয়েদের নিরাপত্তা ও মর্যাদার বিরুদ্ধেও কথা বলেছেন। ওঁর মন্তব্য দেশদ্রোহের সমান। ওঁকে বহিষ্কার করতে হবে। সরকারে থাকার উপযুক্ত নন উনি।"
তৃণমূল সাংসদ সাগরিকা ঘোষ লেখেন, 'বিজেপি-র মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রী বিজয় শাহ কর্নেল সোফিয়া কুরেশির বিরুদ্ধে যে সাম্প্রদায়িক এবং বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য করেছেন, তার পর ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত বিজেপি-র শীর্ষ নেতৃত্ব নীরব। ভুয়ো জাতীয়তাবাদের পর্দার আড়ালে এটাই বিজেপি-র আসল চেহারা। নরেন্দ্র মোদি এবং বিজেপি নেতৃত্ব কি মন্ত্রীকে বহিষ্কার করবেন? না কি নীরবতা পালন করবেন'? তবে বিজয়ের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হবে কি না, এখনও পর্যন্ত তা নিয়ে কিছু জানায়নি বিজেপি।