প্রকাশ সিন্হা ও ময়ূখ ঠাকুর চক্রবর্তী, কলকাতা : এবারের মহাকুম্ভের জন্য় যোগী সরকারের প্রচারে কোনও খামতি ছিল না। কিন্তু, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তায় কি ততটা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল ? মহাকুম্ভে প্রথমে অগ্নিকাণ্ড, তারপর পদপিষ্ট হয়ে বহু মানুষের মৃত্য়ুতে সেই প্রশ্ন জোরাল হয়ে উঠল।
প্রথমে তাঁবুতে আগুন। এবার পদপিষ্ট হয়ে মৃত্য়ু। দশদিনের মধ্য়ে দু'টো ঘটনা। বড়সড় প্রশ্ন উঠে গেল মহাকুম্ভের প্রস্তুতি এবং নিরাপত্তা ব্য়বস্থা নিয়ে। তাঁবুতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায়, কপালজোরে কারও প্রাণ যায়নি। কিন্তু বুধবার, পুণ্য়ের সন্ধানে মহাকুম্ভে গিয়ে, প্রাণ হারালেন অনেকে। আত্মীয়ের খোঁজে, এখন মর্গের সামনে অসহায় হাহাকার করছেন বহু মানুষ।
মৌনী অমাবস্য়ার দিনই অনেকগুলো জীবনে নেমে এল স্বজন হারানোর অন্ধকার। কিন্তু কেন ? কার গাফিলতিতে ? এখন জোরাল হয়ে উঠেছে সেই প্রশ্নটাই। ১৪৪ বছর পর এবারের মহাকুম্ভ। বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশের মুখ্য়মন্ত্রী যোগী আদিত্য়নাথ নিজেই দাবি করেছিলেন, ত্রিবেণী সঙ্গমে এবার ভিড় করবেন প্রায় চল্লিশ কোটি মানুষ। 'পৃথিবীর তৃতীয় সর্বাধিক জনসংখ্য়ার দেশ এই মহাকুম্ভের সাক্ষী হবে। ৪০ কোটির বেশি পুণ্য়ার্থী প্রয়াগরাজে আসবেন', বলে মন্তব্য করেছিলেন তিনি। অর্থাৎ রেকর্ড ভিড় হবে, সেটা সবার জানা ছিল। কিন্তু, সেইমতো প্রস্তুতি কি নেওয়া হয়েছিল ? নাকি প্রচারে নজর দিতে গিয়ে আসল বিষয় অর্থাৎ নিরাপত্তার দিকটাই অবহেলিত থেকে গেছিল ? প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।
সূত্রের খবর, এবার মহাকুম্ভের আয়োজনে খরচ করা হয়েছে প্রায় ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। প্রচার চলেছে মাসের পর মাস ধরে। মহাকুম্ভের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে গেছিলেন নরেন্দ্র মোদিও। বারবার প্রস্তুতি পরিদর্শনে গেছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্য়মন্ত্রী যোগী আদিত্য়নাথ। কিন্তু, বাস্তবে কতটা কী হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কারণ, ১৩ জানুয়ারি মহাকুম্ভ শুরুর ৬দিন পরই , কুম্ভমেলার ১৯ নম্বর সেক্টরে, তাঁবুতে ভয়াবহ আগুন লাগে। নিমেষে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। কপালজোরে সেই ঘটনায় কারও প্রাণ যায়নি।
কিন্তু, দশদিনের মধ্য়ে এবার তা-ও ঘটে গেল ! যে উৎসব থেকে যোগী সরকারের প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকা আয় হবে বলে অনুমান, সেখানে সাধারণ মানুষের প্রাণ বলেই কী এত সস্তা ! এ প্রসঙ্গে স্বামী পরমাত্মানন্দ বলেন, "এখানে (মহাকুম্ভ) আরও অনেক বেশি সতর্কতা প্রয়োজন ছিল। আরেকটু আন্তরিকতা হলে কুম্ভমেলাটা বোধ হয় আরেকটু গোছানো হত। বিশেষ করে আমাদের সাগর মেলাকে দেখে, আমাদের মাননীয়ার যে কার্যকলাপ সাগরমেলায়, তাঁকে দেখে যদি খানিকটা সেখানে তার প্রতিফলন ঘটানো যেত তাহলে বোধহয় সেই কুম্ভমেলা সবদিক থেকে সুন্দর হত।"
কুম্ভমেলায় হারিয়েও ফিরে পাওয়া নিয়ে অনেক প্রবাদ আছে। কিন্তু, এবার কুম্ভে যে মানুষগুলো চিরতরে হারিয়ে গেল, তাঁরা তো আর কোনওদিন ফিরবে না! দায় কার?