প্রয়াগরাজ: উৎসবমুখর মহাকুম্ভে পদপিষ্ট বহু মানুষ। কমপক্ষে ১৫ জন মারা গিয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আহতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। সবমিলিয়ে এখন হাহাকার উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে। বহু মানুষ নিকট আত্মীয়দের খুঁজে পাচ্ছেন না। এমন পরিস্থিতিতে মহাকুম্ভে নামানো হল পুলিশ বাহিনী, আধা সামরিক বাহিনী, NSG এবং RAF. উদ্ধারকার্য চলছে এখনও পর্যন্ত। আপাতত 'অমৃত স্নান' বন্ধ রাখা হয়েছে। ঘাটে নামতে বারণ করা হয়েছে পুণ্যার্থীদের। ওয়াচ টাওয়ার থেকে চলছে নজরদারি। হেলিকপ্টারও নামানো হচ্ছে। ভিড় সামলাতে বাতিল করা হয়েছে কুম্ভ-স্পেশাল ট্রেন। (Mahakumbh Stampede Situation)


মৌনী অমাবস্যা উপলক্ষে বুধবার মহাকুম্ভে ‘অমৃত স্নান’ ছিল। সেই উপলক্ষে ভোররাত থেকেই ভিড় উপচে পড়ে। আর তাতেই বিপত্তি বাধে। ধাক্কাধাক্কি, ঠেলাঠেলিতে পদপিষ্ট হন বহু মানুষ। পরিবার, আত্মীয়স্বজন যাঁরা একজোটে পুণ্যস্নান করতে এসেছিলেন, পরস্পরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছেন তাঁরা। মাইকিং করে নাম ধরে ধরে ঘোষণা হচ্ছে, যাতে পরিজনদের খোঁজ পান পুণ্যার্থীরা। প্রিয়জনের খোঁজে হাসপাতালের মর্গের বাইরেও জমা হচ্ছেন মানুষজন। স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই ২ কোটি ৭৮ লক্ষ মানুষ ইতিমধ্যেই ‘অমৃত স্নান’ করে ফেলেছেন। ৮ থেকে ১০ লক্ষ মানুষের আজ ‘অমৃত স্নানে’ অংশ নেওয়ার কথা ছিল। (Kumbhmela Stampede Deaths)


প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ভোররাত ২.৩০টে থেকেই ‘অমৃত স্নানে’র জন্য ভিড় উপচে পড়ে সঙ্গম ঘাটে। তার মধ্য়েই আচমকা ধাক্কাধাক্কি, ঠেলাঠেলি শুরু হয়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ভিড়ের মধ্যে মাথায় মালপত্র নিয়েও ছিলেন অনেকে। কিন্তু কোন ঘাটে স্নান করবেন, স্নান করে কোথায় যাবেন, কিছুই বুঝতে পারছিলেন না পুণ্যার্থীরা। তাঁদের পথ দেখানোর জন্যও কেউ ছিলেন না। সেই সঙ্গে মেলাপ্রাঙ্গনে ভারী ওজনের ডাস্টবিন বসানো ছিল। ভিড়ে তা চোখে পড়ছিল না। ধাক্কাধাক্কিতে ডাস্টবিনেও পড়ে যান অনেকে। ধাক্কা লেগে মাথা ফেটে যায় কারও কারও। 



মহাকুম্ভের স্পেশাল এগজিকিউটিভ অফিসার আকাঙ্খা রানা বলেন, “সঙ্গমের মুখে ব্যারিকেড ভেঙে যাওয়ার পরই পদপিষ্ট হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়।” স্থানীয় সূত্রে খবর, স্বরূপ রানি মোডিক্যাল কলেজে ১৪টি দেহ পৌঁছেছে। আহতের সংখ্যা শতাধিক। রক্তাক্ত হয়েছেন অনেকেই। এমন পরিস্থিতিতে একাধিক আখড়ার তরফে ‘অমৃত স্নান’ আপাতত বাতিল করা হয়েছে। জগৎগুরু স্বামী রামভদ্রাচার্য বলেন, “কাতারে কাতারে মানুষ ভিড় করেছেন। আজ সঙ্গম ঘাটে স্নান করার জন্য জেদ করলে চলবে না। ”



উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন। তাঁর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ রাখছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, জেপি নাড্ডারা। পুণ্যার্থীদের উদ্দেশে যোগীর আবেদন, সঙ্গম ঘাটে ভিড় না করাই শ্রেয়। আরও ঘাট রয়েছে। সেখানে যেতে পারেন পুণ্যার্থীরা। গুজবে কান দিতেও নিষেধ করেছেন তিনি। তবে  কুম্ভমেলা চত্বরে এই মুহূর্তে হাহাকার ধরা পড়ছে। সেখানে একটি অ্যাম্বুল্যান্সে আগুন ধরে গিয়েছে বলেও সামনে এসেছে। গোটা ঘটনায় ব্যবস্থাপনা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সঙ্গম ঘাটে যাওয়ার রাস্তা খালি করতে শুরু করেছে পুলিশ। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে গ্রিন করিডর তৈরি করেছে প্রশাসন। চিকিৎসকদের একটি টিমও পৌঁছেছে মেলাপ্রাঙ্গনে। প্রয়াগরাজের সমস্ত হাসপাতালে জারি হয়েছে হাই অ্যালার্ট। ছুটিতে থাকা চিকিৎসকদেরও ডেকে পাঠানো হয়েছে হাসপাতালে।