মুম্বই: দুর্নীতির প্রশ্নে দিন কয়েক আগেও বিরোধীদের চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করেন তিনি। বেছে বেছে তৃণমূল, কংগ্রেস এবং অন্য বিরোধী দলগুলিকে দুর্নীতিগ্রস্ত বলে দাগিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। কিন্তু মহারাষ্ট্রে NCP থেকে বিদ্রোহী অজিত পওয়ারকে (Ajit Pawar) উপমুখ্যমন্ত্রিত্ব দেওয়ায় প্রশ্নের মুখে পড়ছেন তিনি খোদ এবং মহারাষ্ট্র BJP-ও। কারণ একসময় মোদি নিজেই ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ বলে চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করেছিলেন অজিতকে। (Maharashtra NCP Political Crisis)
দীর্ঘদিনের জল্পনাকে সত্যি করে রবিবারই দলবল নিয়ে BJP-র ছত্রছায়ায় গিয়ে উঠেছেন অজিত। সরাসরি উপমুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু একসময় যাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে সরব ছিল বিজেপি, যাঁর ৬৫ কোটি টাকার সম্পত্তি পর্যন্ত বাজেয়াপ্ত করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট, তাঁকে উপমুখ্যমন্ত্রী করার সিদ্ধান্তে প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে BJP-কে। আবারও BJP-কে ‘ওয়াশিং মেশিন’ বলে আক্রমণ করতে শুরু করেছেন বিরোধীরা।
কী কী দুর্নীতির অভিযোগ অজিতের বিরুদ্ধে
মহারাষ্ট্র সমবায় ব্যাঙ্ক দুর্নীতি মামলায় অতি সম্প্রতিই চার্জশিট জমা দিয়েছে ED. তাতে অজিত এবং তাঁর স্ত্রী সুনেত্রা যুক্ত ছিলেন এমন একটি সংস্থার উল্লেখ সামনে এসেছে। যদিও সরাসরি অজিত এবং সুনেত্রার নাম উল্লেখ করেনি ED.
তবে ED-র অভিযোগ, জরান্দেশ্বর সুগার মিল নামের একটি চিনিকল সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে মোট ৮২৬ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছিল।এর মধ্যে ৪৮৭ কোটি টাকা মেটানোই হয়নি। পরবর্তী কালে ওই চিনিকল বিক্রি করে দেওয়া হয় একটি রিয়েল এস্টেট সংস্থাকে। ED-র দাবি আখচাষিদের প্রতি কোনও দায়বদ্ধতাই ছিল না ওই চিনিকলের। অন্য উদ্দেশ্য নিয়েই সেটি খোলা হয়েছিল এবং সময় মতো হস্তান্তরও করে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: NCP Political Crisis: 'চিন্তিত নই...মমতা, খাড়গে ফোন করেছিলেন', এরপর কী করবেন শরদ?
এর পাশাপাশি, জলসম্পদ বিভাগের দায়িত্বে থাকার সময় বাজারদরের চেয়ে নামমাত্র মূল্যে জলাধার ইজারা দেওয়ার অভিযোগও ওঠে। ২০০৪ সালে নির্বাচন কমিশনে নিজের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৩ কোটি বলে জানিয়েছিলেন অজিত। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তৎকালীন মহারাষ্ট্র সরকারের তহবিল থেকে ৭০ হাজার কোটি টাকা তছরুপের অভিযোগ ওঠে। সেই সময় শরদে পওয়ারের পদত্যাগের দাবি উঠলেও, শেষ পর্যন্ত অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।
একা অজিত নন, দুর্নীতিতে অভিযুক্ত আরও
অজিতের সঙ্গে রবিবার মহারাষ্ট্রে একনাথ শিন্ডের শিবসেনা এবং বিজেপি-র জোট সরকারে শামিল হয়েছেন হাসান মুশরিফ এবং প্রফুল্ল পটেলও। কোলাপুর চিনিকল থেকে ৪০ কোটি সরানোর অভিযোগ রয়েছে হাসানের বিরুদ্ধে। তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত করছে ED. ঘুরপথে ওই টাকা সরানো হয় বলে অভিযোগ। প্রাক্তন বেসমারিক পরিবহণ মন্ত্রী প্রফুল্লকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে ED. দাউদ ইব্রাহিম ঘনিষ্ঠ, ইকবাল মির্চির স্ত্রীর হাজরা ইকবাল মেমনের সঙ্গে প্রফুল্ল স্বাক্ষরিত কিছু নথি মেলে বলে জানা যায়। বিমান পরিবহণ মন্ত্রী থাকাকালীন, এমিরেটস, এয়ার আরাবিয়া এবং কাতার এয়ারওয়েজকে বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দিতে ২৭২ কোটি টাকার দুর্নীতিতে তিনি যুক্ত ছিলেন বলে সামনে আসে অভিযোগ।
তাই অজিত, হাসান এবং প্রফুল্লকে নিজেদের ছত্রছায়ায় টানার জন্য বিরোধীদের আক্রমণের মুখে পড়ছেন মোদি এবং তাঁর দল বিজেপি। তাই এদিন শরদকে বলতে শোনা যায়, “দু’দিন আগেই NCP-র ব্যাপারে কথা বলছিলেন প্রধানমন্ত্রী। NCP শেষ হয়ে গিয়েছে, সেচ এবং দুর্নীতির কথাও বলেন। আমি খুশি যে আমার কিছু সতীর্থ আজ শপথ নিয়েছেন। বোঝাই যাচ্ছে, ওঁদের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। ওঁর কাছে কৃতজ্ঞ আমি।”
আম আদমি পার্টির সঞ্জয় সিংহ বলেন, “নরেন্দ্র মোদি দেশে দুর্নীতিগ্রস্তদের সবচেয়ে বড় পৃষ্ঠপোষক।” কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, “বিজেপি আবার ওয়াশিং মেশিনের ভূমিকায় অবতীর্ণ। বিজেপি-জোটের নতুন সদস্যদের বিরুদ্ধে দু্র্নীতির গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। ED, CBI, আয়কর আধিকারিকরা এতদিন পিছনে পড়েছিলেন। এবার ক্লিনচিট পেয়ে গেলেন।” এখনও পর্যন্ত এ নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি বিজেপি। তবে প্রায় সব রাজ্যেই একই অভিযোগ উঠছে তাদের বিরুদ্ধে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে বেছে বেছে বিরোধীদের পিছনে তদন্তকারীদের লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তবে বিজেপি-র হাত ধরলেই সকলে মুক্তি পেয়ে যাচ্ছেন বলে দাবি বিজেপি-বিরোধী প্রায় সব দলেরই।