নয়াদিল্লি: গন্তব্যে পৌঁছনোর আগেই চলে গিয়েছে ২৯৩টি প্রাণ। আহতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গিয়েছে ১০০০-এর কোটা। এখনও তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে সেই ভয়াবহতা (Coromandel Express Accident)। একমাস পর এবার করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার নেপথ্য কারণ সামনে এল। দুর্ঘটনার নেপথ্যে মানুষেরই হাত ছিল বলে জানাল কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটি (CRS). ট্রেন দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে রেলের এই বিভাগই মূলত তদন্ত করে। তাদের একটি রিপোর্টেই এমন দাবি করা হয়েছে। ওই রাতে সিগনাল নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে ছিলেন যাঁরা, তাঁদের ভুলেই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছে রেলের কমিশন।  প্রযুক্তিগত, যান্ত্রিক ত্রুটি এবং ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব খারিজ করে দিয়েছে তারা। (Odisha Tarin Accident)


করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার তদন্তভার হাতে পেয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (CBI). তবে রেলের কমিশনও পৃথক তদন্ত চালাচ্ছিল। তারাই দুর্ঘটনার নেপথ্যে মানুষের হাত থাকার কথা জানিয়েছে রিপোর্টে। বিষয়টি সম্পর্কে রেলের ওয়াকিবহাল মহল জানিয়েছে, ওই রাতে মোতায়েন কিছু লোকজন নিরাপত্তা সংক্রান্ত দিকটি খতিয়ে দেখেননি। তাঁদের তরফে গাফিলতি ছিল। তিন বছর আগে নিরাপত্তা সংক্রান্ত যে পরিবর্তন ঘটানো হয়েছিল, সেদিকে নজর দেননি। রিপোর্টে এই বিষয়গুলির উল্লেখ রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। 


তবে শুধু সিগনালের দায়িত্বে থাকা কর্মী-আধিকারিকরাই নন, লাইন বদলের বিষয়টিকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বলে দাবি করা হয়েছে কমিশনের তরফে। দোষীদের বিরুদ্ধে রেল মন্ত্রক কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছেন রেলের এক আধিকারিক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলের এক আধিকারিচক সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, সার্কিটে যে পরিবর্তন ঘটানো হয়েছে, তা ডায়াগ্রামে প্রতিফলিত হয়নি। পরিদর্শনকারীরাও সে নিয়ে কিছু জানাননি। তাই কোনও এক ব্যক্তির দোষ নয়, অন্তত চার-পাঁচ জনের গাফলতিতেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। 


আরও পড়ুন: Census: ১৫১ বছরে এই প্রথম, আবারও পিছিয়ে গেল জনগণনা, সীমানা পুনর্বিন্যাসও নয় এখনই, লোকসভা নির্বাচনের আগে চিঠি রাজ্যগুলিকে


গত ২ জুন ওড়িশার বালেশ্বরের কাছে দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয় তিনটি ট্রেন, কলকাতা-চেন্নাই করমণ্ডল এক্সপ্রেস, বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস এবং একটি মালগাড়ি। বিগত দুই দশকে এতবড় ট্রেন দুর্ঘটনার সাক্ষী হয়নি গোটা দেশ। প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, বাহানগা বাজারের কাছে পাঁচটি ট্র্যাকে ছিল চারটি ট্রেন। প্রথম লাইনটি খালি ছিল। দ্বিতীয় লাইনে ছিল একটি মালগাড়ি। তৃতীয় লাইনে চলছিল করমণ্ডল এক্সপ্রেস। চতুর্থ লাইনে ছুটছিল হাওড়া-যশোবন্তপুর হামসফর এক্সপ্রেস। আর পঞ্চম নম্বর ট্র্যাকে ছিল দ্বিতীয় মালগাড়িটি।


রেল ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রথমে দ্বিতীয় লাইনে থাকা মালগাড়ির সঙ্গে তৃতীয় লাইনে থাকা করমণ্ডল এক্সপ্রেসের সংঘর্ষ হয়। করমণ্ডলের ইঞ্জিন উঠে যায় মালগাড়ির ওপর। ট্রেনের পিছনের কামরাগুলি লাইনচ্যুত হয়ে চতুর্থ লাইনে আসা হামসফর এক্সপ্রেসে ধাক্কা মারে। তার ফলে হাওড়াগামী ওই ট্রেনের কয়েকটি কামরা লাইনচ্যুত হয়। করমণ্ডলের বাকি কামরাগুলি লাইনচ্যুত হয়ে গিয়ে পড়ে পঞ্চম ট্র্যাকে। তার জেরে লাইনচ্যুত হয় ওই ট্র্যাকে থাকা মালগাড়ির দু'টি কামরা। 


দুর্ঘটনার নেপথ্যে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের তত্ত্বও উঠে এসেছিল। তবে রেলের কমিশন সেই তত্ত্ব খারিজ করে দিয়েছে। ওই রিপোর্ট যদিও জনসমক্ষে আনা হবে না। কারণ ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করে দিয়েছে CBI. রেলের কমিশনের রিপোর্ট সেই তদন্তে প্রভাব ফলতে পারে বলে আশঙ্কা। বরং রেলের কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে নিরাপত্তার বিষয়ে আরও জোর দেবে ভারতীয় রেল। করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার পর ট্রেনে দুর্ঘটনা প্রতিরোধী প্রযুক্তি 'কবচ' কেন ছিল না, তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। তাতে জানা যায়, ওই রুটে 'কবচ' বসানো সম্ভব হয়নি। আপাতত তাই 'কবচ'-এর উপর জোর দেওয়া হচ্ছে বলে রেল সূত্রে খবর। এ ছাড়াও আল্ট্রা সাউন্ট টেস্টিং ট্র্যাকের কথাও ভাবা হচ্ছে, যাতে সামান্যতম ত্রুটিও চোখে পড়ে। তবে তাতে তিন বছর সময় লাগতে পারে। ইতিমধ্ই রিলে রুমে ডাবল লকিং সিস্টেম বাসনো নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।