নয়াদিল্লি: ক্ষমতাদখলের পরই বার্তা পাঠিয়েছিলেন। এবার দিল্লিকে সময়সীমাও বেঁধে দিলেন মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জু। ১৫ মার্চের মধ্যে দ্বীপরাষ্ট্র থেকে ভারতকে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে বলে জানিয়ে দিলেন তিনি। মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর, সম্প্রতি চিন সফরে গিয়ে চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন মুইজ্জু। তার পরই ভারতকে সেনা প্রত্যাহারের সময়সীমা বেঁধে দিলেন তিনি। (India Maldives Relations)
মুইজ্জুর দফতরের জননীতি সচিব আব্দুল্লা নাজিম ইব্রাহিম রবিবার সেই মর্মে বিবৃতি দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, "ভারতীয় সেনাকর্মীরা মলদ্বীপে আর থাকতে পারবেন না। প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জু এবং তাঁর সরকার এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।" এই মুহূর্তে মলদ্বীপে ৮৮ ভারতীয় সেনাকর্মী মোতায়েন রয়েছে বলে সূত্রের খবর। তাঁদের দেশে ফেরানোর জন্য ১৫ মার্চ পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে মলদ্বীপ সরকার। (Mohamed Muizzu)
মাস দুয়েক আগে প্রথম বার ভারতকে সেনা প্রত্যাহার করতে বলে মলদ্বীপ। যদিও এমন যে হতে চলেছে, আগেই তার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিলেন মুইজ্জু। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বগ্রহণের আগে, নির্বাচন পর্বেই এই মর্মে মলদ্বীপবাসীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মুইজ্জু। তাঁর স্লোগান ছিল, 'India Out'. সেই মতো দায়িত্বগ্রহণের পরই মুইজ্জু সরকার জানায়, সেনা প্রত্যাহার করে মলদ্বীপের সাধারণ মানুষের গণতান্ত্রিক ইচ্ছেকে ভারত সরকার সম্মান জানাবে বলে আশাবাদী দেশের সরকার।
ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেণ রিজিজুর সঙ্গে সাক্ষাতে ব্যক্তিগত ভাবেও এই অনুরোধ জানান মুইজ্জু। তাঁর শপথগ্রহণে উপস্থিত ছিলেন রিজিজু। সেখানে বিষয়টি নিয়ে কথা হয় দু'জনের মধ্যে। তার পর তার দফতর থেকে বিবৃতি জারি করে দিল্লিকে সেনা প্রত্যাহার করে নিতে বলা হয়। তার পর থেকে বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা চলছিল। রবিবার সকালেও মালে-তে দুই দেশের বিদেশ মন্ত্রকের মধ্যে এ নিয়ে বৈঠক হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সেখানে ভারতীয় হাই কমিশনার মুনু মহাওয়ার। তার পরই বিবৃতি প্রকাশ করে সেনা প্রত্যাহারে ভারতকে সময়সীমা বেঁধে দেয় মলদ্বীপ। ভারতের তরফে এ নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
এমনিতে চিনপন্থী বলে পরিচিতি রয়েছে মুইজ্জুর। যদিও ভারতীয় সেনাকে হটিয়ে চিনা সেনাকে মোতায়েনের কোনও লক্ষ্য নেই বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে ভারত মহাসাগরের উপর অবস্থিত দ্বীপরাষ্ট্র মলদ্বীপ উপমহাদেশীয় ভূরাজনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ। ভারত এবং চিন, দুই দেশই সেখানে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। মলদ্বীপের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টাও কম নেই। সেই আবহেই ভারতকে সেনা সরিয়ে নিতে আর্জি মুইজ্জুর, যা ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ভূরাজনীতির জন্য তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা।
কারণ ভারত এবং মলদ্বীপ বহু যুগ ধরে পরস্পরের বন্ধু। মলদ্বীপে ভারতীয় সেনা মোতায়েনের কারণ জানতে হলে, সাড়ে তিন দশক আগে ফিরে যেতে হবে। মলদ্বীপে সেই সময় নির্বাচিত সরকারকে ফেলে অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টা করছিল- ভাড়াটে সশস্ত্র বাহিনী। সেই সময় মলদ্বীপে স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে আনতে হস্তক্ষেপ করে ভারত। তৎকালীন এক মন্ত্রীকেও পণবন্দি করে রাখা হয়েছিল। রুদ্ধশ্বাস অভিযান চালিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে ভারতীয় নৌবাহিনী। সেই সময় গোটা বিশ্ব ভারতের প্রশংসা করে। সময়ের সঙ্গে সেনার সংখ্যা কমিয়ে আনা হলেও, বরাবর ভারতীয় বাহিনীর মোতায়েন ছিল সেখানে। যখনই অস্থির হয়ে উঠেছে চারপাশ, যখনই বিপদ নেমে এসেছে, বরাবর মোকাবিলা করে এসেছে ভারতীয় সেনা।
মুইজ্জু ক্ষমতায় আসার পরই সেই সমীকরণে ছেদ পড়েছে। সম্প্রতি পরিস্থিতি আরও তেতে ওঠে পর্যটনকে ঘিরে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি লাক্ষাদ্বীপ সফরে যান। সেখানে গিয়ে লাক্ষাদ্বীপের পর্যটনের প্রচার করতে দেখা যায় তাঁকে। সেই নিয়ে মলদ্বীপের তরফে কটাক্ষ উড়ে আসে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও বিষয়টি নিয়ে তীব্র কাটাছেঁড়া শুরু হয়ে যায়। তার পরই আবার সেনা প্রত্যাহার করতে দিল্লিকে বার্তা দিল মলদ্বীপ।