ইম্ফল: ঘোষণা মতোই মণিপুর থেকে শুরু হল রাহুল গাঁধীর (Rahul Gandhi) নেতৃত্বে কংগ্রেসের 'ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা'। ইম্ফল থেকে এই পদযাত্রা শুরু করতে চেয়েছিল কংগ্রেস, কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংহের সরকার তাতে অনুমোদন দেয়নি। ফলে রবিবার থুবাল থেকে 'ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা'র (Bharat Jodo Nyay Yatra) সূচনা করলেন রাহুল। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে পদযাত্রার উদ্বোধন করেন। তার পর মঞ্চে ওঠেন রাহুল। 'ভারত জোড়ো যাত্রা'র মতো 'ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা' মানুষের কথা শুনতেই তিনি বেরিয়েছেন বলে জানান তিনি। 


প্রথম ধাপে, দক্ষিণ থেকে উত্তরে, কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত 'ভারত জোড়ো যাত্রা'য় নেতৃত্ব দেন রাহুল। দীর্ঘ ৪০০০ কিলোমিটার পথ হেঁটে পেরোন। এবার 'ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা' হচ্ছে পূর্ব থেকে পশ্চিমে। মণিপুর থেকে শুরু 'ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা', শেষ হবে মুম্বইয়ে। তবে  'ভারত জোড়ো যাত্রা'র মতো  শুধুমাত্র পায়ে হেঁটে নয়, এবারের 'ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা' 'হাইব্রিড' বলে জানান রাহুল। তিনি জানান, বাসে চেপেও এগনো হবে, পায়ে হেঁটেও। সামনে লোকসভা নির্বাচন। সময়ের মধ্যে 'ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা' শেষ করতেই এমন সিদ্ধান্ত। 


সাম্প্রদায়িক হিংসার জেরে গত বছর খবরের শিরোনামে ছিল মণিপুর। মেইতেই বনাম কুকিদের মধ্যে সংঘর্ষে চার মাসে প্রায় ২০০ মানুষের মৃত্যু হয়। একের পর এক গ্রাম পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ধর্ষণ, হিংসার ঘটনাও আকছার সামনে আসে। সংসদে সেই নিয়ে সরব হয়েছিলেন রাহুল। বিজেপি মণিপুরে 'ভারতকে হত্যা করেছে' বলে মন্তব্য করেছিলেন।  তেমনই নিজে মণিপুর ছুটেও এসেছিলেন। তাই মণিপুর থেকেই 'ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা'র সূচনা হল বলে জানান রাহুল। 



আরও পড়ুন: Kashmir Dry Spell: ইতিউতি গুঁড়ো পড়ে, তার বাইরে তুষারপাত নেই, শীতের মরশুমে দিল্লির থেকেও গরম কাশ্মীরে


এদিন রাহুল বলেন, "কোথা থেকে যাত্রা হবে, সেই নিয়ে নানা প্রস্তাব আসে। আমি পরিষ্কার বলি, পরের যাত্রা মণিপুর থেকে শুরু করতেই হবে, অন্য কোথা থেকেও নয়। আজকের এই মণিপুর BJP এবং RSS-এর ঘৃণা, ওদের রাজনীতির প্রতীক হয়ে উঠেছে। BJP-র আদর্শ, ওদের দৃষ্টিভঙ্গে এখানে প্রতিফলিত হচ্ছে এক ভাইয়ের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। উনি জানালেন, BJP-র ঘৃণা, ওদের নীতি ওদের রাজনীতির জন্য নিজের সবকিছু হারিয়েছেন। মূল্যবোধ, নীতির বিসর্জন ঘটেছে মণিপুরে। আমি কথা দিচ্ছি, আপনাদের হারিয়ে যাওয়াা সম্প্রীতি, শান্তি, মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনবই।"


দ্বিতীয় ধাপে 'ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা'য় কেন বেরিয়েছেন, তারও জবাব দেন রাহুল। তিনি বলেন, "আজ ভয়ঙ্কর অবিচারের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আমরা। সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক অবিচারও। মণিপুরের মানুষ, তাঁদের ঐতিহ্যের প্রতি অবিচার হয়েছে। দেশের অন্যত্রও অবিচার চলছে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে একচেটিয়া আধিপত্য গড়ে তোলা হচ্ছে। কিছু মানুষের হাতে দেশের সমস্ত সম্পদ, কিছু ব্যবসায়ীর হাতের নাগালে সব কিছু রয়েছে। ছোট এবং মাঝারি ব্যবসাকে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। দেশে বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি চরমে। সামাজিক ক্ষেত্রে দলিত, আদিবাসীদের সরকারি নীতি নিয়ে বলার অধিকারই নেই। সরকার, প্রশাসনের বাইরে রাখা হচ্ছে তাঁদের। আপনাদের জন্যই এই যাত্রা। নিজের মন কি বাত নয়, আপনাদের মনের কথা শুনতে এসেছি।"


রবিবার সূচনার পর আগামী ৬৭ দিন ধরে চলবে 'ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা'। দীর্ঘ ৬ হাজার ৭১৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেবেন রাহুল। ১০০টি লোকসভা কেন্দ্র এবং ৩৩৭টি বিধানসভা কেন্দ্র ছুঁয়ে যাবেন পথে। ১১০টি  জেলায় হয়ে এগোবেন। আগামী ২০ মার্চ মুম্বইয়ে রাহুলের নেতৃত্বে 'ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা' শেষ হবে।