কলকাতা: নন্দীগ্রামে মনোনয়ন পেশের দিনই আহত হন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। চক্রান্তের অভিযোগ তুলে আজ মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দ্বারস্থ হল তৃণমূলের প্রতিনিধি দল। এদিন সাংবাদিকদের তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্য়ায় বলেন, "এই রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সুষ্ঠুভাবে, সমাজকে ঐক্যবদ্ধ রেখে কাজ করছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ে। নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশ করার পরই কমিশন পুলিশের এডিজিকে (আইন শৃঙ্খলা) অপসারিত করল। তারপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রার্থী হওয়ার পর ডিজিকে অপসারিত করা হল। সবচেয়ে লক্ষণীয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতের একমাত্র মুখ্য়মন্ত্রী, তাঁর উপর আক্রমণের পূর্বাভাস আগে থেকেই ছিল।"
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, "বিজেপির বক্তব্যে এটা স্পষ্ট ছিল যে তাঁর উপর আক্রমণ হতে পারে। তা সত্বেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এভাবে নিরাপত্তাহীন অবস্থায় তাঁর উপরে যে আক্রমণ হল সেই দায়িত্ব কার? আইনশৃঙ্খলা আজকে অবনতির দিকে নিয়ে যাওয়ার এবং রাজ্যে রাষ্ট্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত পুলিশ শাসনের যে চেষ্টা হচ্ছে তার প্রতিবাদ জানিয়েছি। পুলিশকে নিষ্ক্রিয়, বিপদের দিনেও প্রশাসন পাশে আসতে ভয় পাচ্ছে। বাংলাকে উপেক্ষা কেন? বাংলাকে রাষ্ট্র শক্তি দিয়ে, সেই রাজ্যের নেত্রীর উপর কেন আক্রমণ? আইন শৃঙ্খলার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশন নিয়েছে, তারপর রাষ্ট্রবাদের নতুন উদ্যোগ শুরু হয়েছে। তার দায় নির্বাচন কমিশনকে নিতেই হবে। তারা যেভাবে চালাচ্ছেন, ভয় ভীতি সন্ত্রাসের সৃষ্টি করছে। বিজেপি দল এসে যা বলছে, পরের দিন সেটাই হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। এই ঘটনার অবিলম্বে ব্যবস্থা নেবে বলে আশাবাদী আমরা।"
একইসঙ্গে এদিন সিইও অফিসে যান সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন, তৃণমূল নেত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, "নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার পর আইন শৃঙ্খলার দায়িত্ব কমিশনের। জেড ক্যাটাগরি প্রাপ্ত একজনের উপর এধরনের ঘটনা ঘটল। এটা রাষ্ট্রপতি শাসন নয়। কোনও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলও নয়।" মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় যারা প্রশ্ন তুলছেন, তাঁরা গিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে আসুন। মন্তব্য ডেরেক ও’ব্রায়েনের। তিনি বলেন, "ক্রোনোলজি সামাজ লি জিয়ে, ৮ মার্চ পশ্চিমবঙ্গের বিজেপির তরফে পোস্ট করা হয়, যেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে শেষ হতে দেখানো হয়। ৯ মার্চ নির্বাচন কমিশন ডিজিকে বদল করে। ১০ মার্চ বিজেপি সাংসদ পোস্ট করেন, আপনারা বুঝে যাবেন ৫টার পর কী হবে। আর ঠিক কাল সন্ধে ৬টার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর আক্রমণ করা হয়।"
উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রীর চিকিত্সার জন্য ৯ সদস্যের দল গঠিত হয়েছে। গতকাল রাতে এমআরআই-এর পর পায়ে টেম্পোরারি প্লাস্টার করা হয়েছে। শুরু হয়েছে অ্যান্টিবায়োটিক। পায়ের ফোলা ভাব কমলে আজ প্লাস্টার করা হতে পারে। আঘাত লেগেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডান কাঁধ ও কনুইয়ে। চোট রয়েছে ঘাড়েও। রাতে মুখ্যমন্ত্রীকে ব্যথা কমানোর ওষুধ দেওয়া হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, ইসিজি রিপোর্ট সন্তোষজনক হলেও, বুকে ব্যথা এবং শ্বাসকষ্টের কথা মুখ্যমন্ত্রী চিকিত্সকদের জানিয়েছেন। বুকে ব্যথার কারণ আঘাতজনিত কি না জানতে সিটি স্ক্যান করা হবে। এছাড়া, আজ আবার করা হবে ইসিজি। করা হতে পারে ইকো-ও। রক্তের একাধিক রুটিন পরীক্ষা করা হবে। আজ আবার মেডিক্যাল বোর্ডের চিকিত্সকরা তাঁকে পরীক্ষা করবেন।