ইম্ফল: রাষ্ট্রপতি শাসনাধীন থাকাকালীনই মণিপুরে বড় রদবদলের সম্ভাবনা। রাজ্যপাল অজয়কুমার ভাল্লার সঙ্গে দেখা করলেন বিজেপি বিধায়করা। সংখ্য়াগরিষ্ঠের সমর্থনে রাজ্যে নতুন সরকার গঠনের দাবি জানালেন। বিজেপি-র দাবি, মণিপুরকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে, সমস্যার সমাধান বের করতেই এই সিদ্ধান্ত। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বই নেবেন। (Manipur News)
বুধবার রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন বিজেপি বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী থোকচোম রাধেশ্য়াম। তিনি জানান, ৪৪ জন বিধায়কেরই সমর্থন রয়েছে তাঁদের পক্ষে। মানুষের ইচ্ছে অনুসারেই নতুন করে সরকার গঠনে রাজি সকলে। এদিন বিজেপি-র আট, NPP-র এক এবং এক নির্দল বিধায়ককে নিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে সরকার গঠনের দাবি জানান তিনি। মণিপুরের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দৌড়েও রয়েছেন রাধেশ্যাম। (BJP News)
সংবাদমাধ্যম রাধেশ্য়াম বলেন, “৪৪ জন বিধায়কই মানুষের সরকার গঠনে সম্মত হয়েছেন। মানুষের ইচ্ছেকে সম্মান জানিয়েই এই সিদ্ধান্ত। বিধায়করা নতুন সরকার গড়তে প্রস্তুত। বিষয়টি রাজ্যপালকে জানিয়েছি। পাশাপাশি, সমস্যা কাটিয়ে কী করে বেরিয়ে আসা যায়, তা নিয়েও কথা হয়েছে। নিজেদের অবস্থান বোঝাতেই আজ বিধায়করা রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন। তবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। রাজ্যপাল আমাদের কথা শুনেছেন। মানুষের স্বার্থের কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে বলে জানিয়েছেন।”
চাপের মুখে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহ পদত্যাগ করার পর, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি রয়েছে মণিপুরে। কুকি বনাম মেইতেই সংঘর্ষে ২০২৩ সালের মে মাস থেকে বেনজির হিংসা, অশান্তির সাক্ষী হয় মণিপুর। ২৫০-এর বেশি মানুষের প্রাণহানি হয়। হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়ান।
সেই গোটা পর্বে বীরেনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এমনকি আদালতে পর্যন্ত মামলা ওঠে। দাঙ্গা চালিয়ে যাওয়ায় তাঁর সায় ছিল, দাঙ্গাকারীদের অস্ত্রশস্ত্র জুগিয়েও সাহায্য করেন বলে অভিযোগ সামনে আসে। ফাঁস হয়ে যায় অডিও কথোপকথন। এর পর বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বই বীরেনকে পদত্যাগে বাধ্য করেন বলে শোনা যায় সেই সময়।
মণিপুর নিয়ে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারের ভূমিকাও সমালোচিত হয়। হিংসাপর্বে মণিপুরকে গোটা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা, সেখানে মেরুকরণের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করার অভিযোগ তোলেন বিরোধীরা। এমনকি লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গাঁধী-সহ অন্যরা বার বার মণিপুর ছুটে গেলেও, প্রধানমন্ত্রী নিজে একবারও কেন সেখানে যাওয়ার তাগিদ অনুভব করলেন না, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে সংসদেও।
কিন্তু মণিপুর এখন পুরোপুরি শান্ত বলেও দাবি করা যাচ্ছে না। গত কয়েক দিনেও বিক্ষিপ্ত হিংসা ও অশান্তির ঘটনা সামনে এসেছে। মণিপুর স্টেট ট্রান্সপোর্টের বাসের গা থেকে মণিপুরের নাম মুছে, তাতে 'ভারত সরকার' লেখাকে ঘিরে এখনও পরিস্থিতি উত্তপ্ত সেখানে। গতকালই রাজ্যপাল ভাল্লার বিরুদ্ধে জায়গায় জায়গায় বিক্ষোভ হয়। রাজভবন অভিযানেও বেরোন আন্দোলনকারীরা, রাজ্যপালকে নিঃশর্ত ভাবে ক্ষমা চাইতে হবে বলে দাবি করেন। রাজ্যের মুখ্যসচিব, ডিজিপি এবং নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিও তোলা হয়। ইম্ফল ওয়েস্টে জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া এবং চিফ ইলেক্টরাল অফিসের সাইনবোর্ড থেকে ভারত সরকার লেখাও মুছে দেন বিক্ষোভকারীরা। লেখার উপর লেপে দেওয়া হয় কাদা।
রাজভবন থেকে বিক্ষোভকারীদের দূরে রাখতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটানো হয়। বিশেষ ধোঁয়া-বোমাও ছোড়া হয়, যাতে ভিড় ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। বেশ কয়েকজন মহিলা আহত হন বলেও জানা যায়। বিক্ষোভকারীদের দাবি, রাজ্যপাল এবং তাঁর প্রশাসন মণিপুরের নিজস্ব পরিচয় অস্বীকার করছেন, মানুষের আবেগের তোয়াক্কা করছেন না। সেই আবহেই সরকার গড়ার দাবি জানাল বিজেপি।