ইম্ফল: এবার মণিপুরে জারি রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হল। ঘরে-বাইরে চাপের মুখে পড়ে সম্প্রতি পদত্যাগ করেন বিজেপি শাসিত মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহ। 
৯ ফেব্রুয়ারি ইস্তফা দেন এন বীরেন। আর বুধবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হল। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকের পর রাজ্যপালকে ইস্তফাপত্র জমা দেন এন বীরেন। প্রায় দু'বছর ধরে মেইতেই ও কুকি জনগোষ্ঠীর সংঘর্ষে বিরামহীন হিংসার সাক্ষী থেকেছে মণিপুর। গোটা ঘটনায় প্রশ্নের মুখে পড়ে মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা। (Manipur President Rule)


সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৫৬-র আওতায় বৃহস্পতিবার সন্ধেয় মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হল। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে বিবৃতি জারি করে বলা হয়, মণিপুরের রাজ্যপাল রাষ্ট্রপতিকে একটি রিপোর্ট দেয়। সেই রিপোর্ট দেখে বোঝা যায়, রাজ্যে এই মুহূর্তে সাংবিধানিক শাসন চালানোর অবস্থা নেই। তাই সংবিধাের অনুচ্ছেদ ৩৫৬-র আওতায় প্রদত্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করে রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হল। (Manipur Situation)


২০২৩ সালের মে মাস থেকে মেইতেই এবং কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে সাম্প্রদায়িক হিংসা চলে আসছে মণিপুরে। ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, খুন কিছু বাদ যায়নি উত্তর-পূর্বের রাজ্যটিতে। সবমিলিয়ে ২৫০-এর বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে এখনও পর্যন্ত। এই গোটা সময়ে সেখানে বিজেপি-র সরকার ছিল। ২০২৪ সালে সেই সরকার থেকে সমর্থন তুলে নেয় কনরাড সাংমার ন্যাশনাল পিপলস পার্টি। এর পরই ৯ ফেব্রুয়ারি ইস্তফা দেন বীরেন। (Manipur News)


বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে সাক্ষাতের পরই বীরেন ইস্তফা দেন। দলীয় সূত্রে খবর, দিল্লির বিজেপি নেতৃত্বই বীরেনকে ইস্তফা দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। কারণ ১০ তারিখেই বীরেন সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে যাচ্ছিল বিরোধীরা, তাতে হেরে গেলে রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ হাতের বাইরে চলে যেত।



শুধু তাই নয়, সম্প্রতি একটি অডিও রেকর্ডিং সামনে আসে।  তাতে যে কথোপকথন ধরা পড়ে, তাতে একটি গলা বীরেনের বলে অভিযোগ। কথোপকথন থেকে জানা যায়, রাজ্য সরকারের অস্ত্রশস্ত্র লুঠ করতে মেইতেইদের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কুকিদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ চলাকালীন কার্যত অস্ত্রের জোগান দেওয়া হয়েছিল মেইতেইদের। ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে বিষয়টি পৌঁছেছে। অডিও রেকর্ডিংটির ফরেনসিক পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। বন্ধ খামে সেই রিপোর্ট জমা দিতে হবে।


রাহুল গাঁধীর মতে, সুপ্রিম কোর্ট ওই অডিও ক্লিপটি পরীক্ষা করে দেখার নির্দেশ দিয়েছে বলেই বীরেনকে পদত্যাগ করানো হল। এর পর তিন দিন পেরিয়ে গেলেও বীরেনের উত্তরসূরী নিয়ে ঐক্যমত্য তৈরি হয়নি। সেই আবহে কংগ্রেস, নাগরিক সমাজের তরফে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার দাবি উঠছিল। শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি শাসনই কার্যকর করল কেন্দ্র। কিন্তু দু'বছর ধরে মণিপুর হিংসার আগুনে জ্বলতে থাকলেও, এতদিন কেন বীরেনকে পদে রাখা হল, সেই নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা।


পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। কারণ হিংসা চলাকালীন দফায় দফায় রাহুল গাঁধী, বিরোধীরা গেলেও, একটি বারের জন্যও মণিপুরে পা রাখেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই নিয়ে সংসদে তাঁকে তীব্র আক্রমণ করে বিরোধীরা। এমনকি মণিপুরকে গোটা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হচ্ছে, ইচ্ছাকৃত ভাবে সেখানে অশান্তির আগুন জ্বলতে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে।


রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হলেও এখনও হিংসা চলছে মণিপুরে। এমন পরিস্থিতিতে উদ্বেগ বাড়ছে স্থানীয় মানুষদের। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৭৪(১) বলছে, রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হলে, শেষ সরকারের পতনের ছ'মাসের মধ্যে বিধানসভা পুনরায় সচল করতে হবে। ২০২৪ সালের ১২ অগাস্ট, বুধে শেষ বার বিধানসভার অধিবেশন হয়। সেই নিরিখেই পরবর্তী বিধানসভার অধিবেশন করাতে হবে।