ইম্ফল: নতুন করে হিংসায় আরও ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। সেই আবহেই ফের কার্ফু জারি হল মণিপুরে। প্রথমে ইম্ফল ইস্ট, ইম্ফল ওয়েস্ট এবং থুবল জেলায় কার্ফু জারি করা হয়। দুপুরে কার্ফু জারি হয় গোটা রাজ্যে। ড্রোন-রকেট হামলা, গোলাগুলি বর্ষণ এবং পর পর হিংসার ঘটনায় নতুন করে যেভাবে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজ্য, তার প্রতিবাদে যেভাবে রাস্তায় নেমে এসেছেন সাধারণ মানুষ। তাতেই কার্ফু জারির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে আগামী পাঁচ দিনের জন্য। (Manipur Violence)


মঙ্গলবার সকালে ইম্ফল ইস্ট এবং ইম্ফল ওয়েস্টে কার্ফু সংক্রান্ত বিধিনিষেধ শিথিল করার কথা ভাবা হয়েছিল। ভোর ৫টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত বিধিনিষেধ শিথিল করা বলে ঘোষণাও করে স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়নি। আইন-শৃঙ্খলার কথা মাথায় রেখেই কার্ফু জারি রাখা হয়। পরে কার্ফু জারি করা হয় গোটা রাজ্যে। আগামী পাঁচ দিন জারি থাকবে কার্ফু। জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত যাঁরা, সংবাদমাধ্যম, আদালত, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মীদের ছাড় দেওয়া হয়েছে শুধুমাত্র। (Manipur Situation)


গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে এখনও পর্যন্ত মণিপুরে নতুন করে হিংসায় প্রাণ হারিয়েছেন ১১ জন। সোমবার রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় প্রতিবাদে শামিল হন সাধারণ মানুষ। ইম্ফল এবং থুবলে এই প্রতিবাদ চরম আকার ধারণ করে। পুলিশ এবং প্রশাসনের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধও বাধে আন্দোলনকারীদের, তাতে কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। আন্দোলনকারীদের হঠাতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ। ফাটানো হয় স্টান গ্রেনেড বা শব্দ-বোমাও। এর পাল্টা পুলিশ ও সেনাকে লক্ষ্য করে ইঁটবৃষ্টি করেন আন্দোলনকারীরা।  রাজ্যপাল লক্ষ্মণ প্রসাদ আচার্য এবং মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের বাসভবনেও ঢোকার চেষ্টা করেন তাঁরা। 



গত এক বছরের বেশি সময় ধরে অশান্ত মণিপুর। প্রাণ হারিয়েছেন ২০০-র বেশি মানুষ। মাঝে পরিস্থিতি খানিকতা থিতিয়ে এলেও, পর পর ড্রোন এবং রকেট হামলায় নতুন করে হিংসা ও অশান্তি ছড়িয়েছে।  উত্তর-পূর্ব ভারতে এর আগে উগ্রপন্থীদের হাতে কখনও ড্রোন বা রকেটের মতো অস্ত্রের ব্যবহার চোখে পড়েনি। ফলে মণিপুরের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ড্রোন প্রতিরোধী প্রযুক্তি নামানো হয়েছে। সেনার হেলিকপ্টার টহল দিচ্ছে লাগাতার। পাহাড়ি অঞ্চলে বেশ কিছু বাঙ্কারও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কুকি সম্প্রদায়ের উগ্রপন্থী সংগঠনের সদস্যরাই হামলা চালাচ্ছেন এবং শিকার হচ্ছেন মেইতেইরা, অভিযোগ স্থানীয়দের।


যেভাবে রকেট এবং ড্রোন হামলা চলছে, তাতে রাজ্য প্রশাসনের ভূমিকায় প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ মানুষেরা। বাড়ির মধ্যে যেভাবে খুন হচ্ছেন পর পর মানুজন, তাতে আত্মরক্ষার কোনও উপায় তাঁদের কাছে নেই বলে জানিয়েছেন। তাই ফের পথে নেমেছেন তাঁরা। পথে নেমেছেন স্কুল এবং কলেজের পড়ুয়ারাও। ড্রোন এবং রকেট হামলা রুখতে দ্রুত পদক্ষেপ করতে হবে বলে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়েছেন।