মনিপুর: হিংসায় জর্জরিত মনিপুরে এখনও কমেনি অশান্তির আঁচ। বহু মৃত্যু হয়েছে, ঘরছাড়া বহু। এই পরিস্থিতিতে হিংসার ঘটনায় মনিপুরের যে বাসিন্দারা বাস্তুচ্যূত হয়েছেন তাঁদের জন্য স্পেশাল প্যাকেজ ঘোষণা করল কেন্দ্র। মোট ১০১ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকার ত্রাণ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে।


মনিপুর সরকারের নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা কুলদীপ সিংহ জানিয়েছেন, ২৯ মে থেকে ১জুন পর্যন্ত মনিপুর সফর করেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তখনই তিনি রাজ্য সরকারকে বলেছিলেন হিংসার ঘটনায় ঘরছাড়া বাসিন্দাদের জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে একটি ত্রাণ সাহায্যের আবেদন পাঠাতে। এখন, বিভিন্ন জনজাতির মোট ৩৭৪৫০ নাগরিক মনিপুরের ১৩টি জেলায় ছড়িয়ে থাকা মোট ২৭২ টি ত্রাণ শিবিরে রয়েছেন।


অশান্তি এড়াতে এবং দোষীদের ধরার জন্য লাগাতার পুলিশি অভিযান চলছে মনিপুরে। কুলদীপ সিংহ জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ২৭টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ২৪৫টি গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনী মনিপুর থেকে ৮৯৬টি আধুনিক, স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র এবং ১১৭৬৩টি কার্তুজ উদ্ধার করেছে। এগুলি অশান্তি ও হিংসার ঘটনার সময় থেকে বিভিন্ন সময় পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর থেকে লুঠ করা হয়েছিল বলে খবর। এছাড়াও মনিপুরের বিভিন্ন জায়গায় থেকে ২০০টি বোমাও উদ্ধার করেছে মনিপুর পুলিশ। 


পরিস্থিতিতে লাগাম:
দফায় দফায় হিংসা ছড়ানোয় বারবার কার্ফিউ জারি হয়েছে আবার শিথিল হচ্ছে মনিপুরে। পাঁচটি উপত্যকা প্রধান এলাকা থেকে ১০ ঘণ্টার জন্য কার্ফিউ শিথিল হয়েছে। অন্যদিকে পাহাড় এলাকা থেকে ৮ ঘণ্টার জন্য কার্ফিউ শিথিল হয়েছে। এছাড়াও অন্য ৬টি পাহাড়প্রধান জেলায় এখন কোনও কার্ফিউ নেই। এগুলি হল, Tamenglong, Noney, Senapati, Ukhrul, and Kamjong.


ইম্ফল-জিরিবাম সংযোগকারী ৩৭ নম্বর জাতীয় সড়কে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের যাতায়াত নিশ্চিত করা হয়েছে, জানিয়েছে সেনা।


কী কারণে এমন ক্ষোভ:
মণিপুরের বাসিন্দাদের বড় অংশই মেইতেই জনগোষ্ঠীর। তাঁরা মূলত ইম্ফল ও লাগোয়া সমতল এলাকায় বাস করেন। পাহাড়ি এলাকায় থকেন কুকিরা। মেইতেইরা জনজাতি গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় তাঁরা পাহাড়ি এলাকায় জমি কিনতে পারেন না। কিন্তু কুকিরা সমতল এলাকায় জমি কিনতে পারেন। এবার মেইতেই জনগোষ্ঠী তফসিলি জনজাতিভুক্ত হয়ে গেলে তাঁরাও পাহাড়ি এলাকায় জমি কিনতে পারবেন, সেটাই কুকিদের অসন্তোষের কারণ। কুকিদের দাবি, এন বীরেন সিংহের সরকার তাঁদের ক্রমশ কোণঠাসা করার চেষ্টা করছে। শুধু মেইতেইদের তফসিলি জনজাতিভুক্ত হওয়ার দাবির বিরোধিতা নয়। আরও একটি কারণে চড়েছে ক্ষোভের পারদ। মণিপুরের পাহাড়ি এলাকায় কুকি জনগোষ্ঠীদের বাস। সেই পাহাড়ি এলাকায় সংরক্ষিত অরণ্য থেকে কুকি জনগোষ্ঠীভুক্ত বাসিন্দাদের সরে যেতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তার জন্য পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। আর সেটা নিয়েই চড়েছে ক্ষোভের পারদ। একাধিকবার বিক্ষোভও দেখানো হয়েছে।


আরও পড়ুন: গরম থেকে রেহাই পেতে ঘুরে আসুন ঠান্ডা 'ট্যুরিস্ট স্পট' থেকে, রইল ৮ 'অফবিট' সন্ধান