ইম্ফল: সব স্বাভাবিক দেখানোর চেষ্টা হলেও, মণিপুরে কিছুই যে স্বাভাবিক নেই, আবারও তার প্রমাণ মিলল। রাষ্ট্রপতি শাসনের আওতায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফেরার নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। আর তা করতে গিয়ে প্রথম দিনেই ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠল মণিপুর। সংঘর্ষে প্রাণ হারালেন একজন, আহত আরও বেশ কয়েক জন। চার মাসের ব্যবধানে ফের প্রাণহানি ঘটল মণিপুরে। (Manipur Clash)
রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হওয়ার পর শনিবার থেকে মণিপুরকে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্র। কিন্তু কাংপোকপিতে গোড়াতেই বিপত্তি বাধে। মেইতেই অধ্যুষিত এলাকা থেকে কুকি-জো অধ্যুষিত এলাকায় ঢুকতে যাওয়া একটি বাসকে ঠেকানোর চেষ্টা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে স্থানীয়দের। তাতেই লালগুণ সিংসিত নামের এক যুবক প্রাণ হারান। (Manipur Situation)
কাংপোকপির কিথেলমাংবিতে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে কুকি-জো সম্প্রদায়ের। শনিবার সকালে মেইতেই অধ্যুষিত ইম্ফল থেকে কুকি-জো অধ্যুষিত কাংপোকপি হয়ে নাগা সংখ্যাগরিষ্ঠ সেনাপতি যাচ্ছিল বাসটি। নিরাপত্তা বাহিনী বাসটিকে নিরাপত্তা দিতে মোতায়েন ছিল। কিন্তু অভিযোগ, বাসটিকে এলাকায় ঢুকতে বাধা দেন কাংপোকপির কুকি-জো সম্প্রদায়ের মানুষজন। সেই নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে তাঁদের। লাঠিচার্জ করে, কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়ে বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা চলে। কিন্তু পরিস্থিতি উত্তাল হয়ে ওঠে, সংঘর্ষ বাধে দুই পক্ষের মধ্যে। সেই সংঘর্ষে সিংসিত মারা যান। তাঁর শরীরে গুলি লাগে বলে জানা গিয়েছে।
সংঘর্ষে আরও ১৬ জন বিক্ষোভকারী আহত হয়েছেন বলে খবর। বাসটিকে লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি পাথরবৃষ্টি চলে। পাথর ছোড়া হয় পুলিশের জিপ লক্ষ্য করেও। কয়েকটি গাড়িতে আগুনও ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। নিরাপত্তা বাহিনীর কমপক্ষে ২৭ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এই ঘটনার পর কুকি-জো কাউন্সিল সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকায় অনির্দিষ্ট কালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হেমলিয়াংথাং থাংলেত জানিয়েছেন, সর্বত্র মেইতেইদের অবাধ বিচরণে আপত্তি আছে তাঁদের। তার পরও যদি সেই চেষ্টা হয়, তাতে অনভিপ্রেত কিছু ঘটলে দায় থাকবে না তাঁদের।
গত দু’বছর ধরে সাম্প্রদায়িক অশান্তিতে তপ্ত মণিপুর। জমির অধিকার থেকে রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব, একাধিক ইস্যুতে কুকি বনাম মেইতেই সংঘর্ষ চলছে। সবমিলিয়ে সংঘর্ষে এখনও পর্যন্ত ২৫০-র বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। ঘরছাড়া হয়েছেন ৫০ হাজারের বেশি মানুষ। গোটা ঘটনায় রাজ্যের তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের ভূমিকাও আতসকাচের নীচে চলে এসেছে। তিনি ইস্তফা দেওয়ার পর রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয় রাজ্যে। কিন্তু তাতেও অশান্তি, প্রাণহানি বন্ধ হওয়ার লক্ষ্য নেই।