কলকাতা: তাঁর পায়ের ছন্দ, শরীরী বিভঙ্গে এক সময় কথা বলত সাহেবি পার্ক স্ট্রিট। সত্যজিৎ রায়, উত্তম কুমার থেকে সুচিত্রা সেন, অমিতাভ বচ্চন- অনুরাগী তালিকা দেখে ঈর্ষা হওয়া স্বাভাবিক। সেই মিস শেফালি মারা গিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। আজ সকালে সোদপুরের বাড়িতে তাঁর মৃত্যু হয়।

আদতে আহিরীটোলার মেয়ে, নাম আরতি দাস। ক্যাবারে দুনিয়ায় পা রেখে মিস শেফালি হয়ে ওঠা। ষাট-সত্তরের কলকাতার রাতের রানি শেফালির জীবন নিয়ে বইও বেরিয়েছে, সন্ধ্যারাতের শেফালি। ৬ মাস বয়সে বাবা মার সঙ্গে পূর্ববঙ্গ থেকে এপারে এসেছিলেন, শৈশব কেটেছিল অবর্ণনীয় দুঃখকষ্টে। ১১ বছর বয়সে চৌরঙ্গীর এক অ্যাংলো পরিবারে কাজ শুরু করেন। প্রতি সন্ধেয় সেখানে পার্টি বসত, তখন থেকে নাচে আগ্রহ গড়ে ওঠা। সেই পরিবারেরই এক আমন্ত্রিতের সাহায্যে পার্ক স্ট্রিট ফার্পোয় প্রথম নাচের সুযোগ। মাইনে ছিল মাসে ৭০০ টাকা, আশাতীত সৌভাগ্যে অবাক হয়ে যান তিনি।



বাঙালি মেয়ে ক্যাবারে নাচছে, অনেকের আপত্তি ছিল। চরম দারিদ্র্য মুখোমুখি দেখা শেফালি সে সবে কান দেননি। সে সময় বেশিরভাগ ইউরোপীয় নৃত্যশিল্পী কলকাতা ছেড়ে যাচ্ছিলেন, সুযোগ বাড়ছিল স্থানীয়দের। প্রথম শোয়ে পোশাক দেখে কেঁদে ফেলেছিলেন কিন্তু তাই সুপারহিট হয়। শেখেন নানারকম নাচ চার্লসটন, ক্যান ক্যান, টুইস্ট এমনকী বেলি ডান্সিং। সেই শুরু। কতাঁকে এক ঝলক দেখতে কলকাতার নিশিনিলয়গুলিতে বাড়তে থাকে ভিড়।

অভিনয় করেছেন সত্যজিৎ রায়ের সীমাবদ্ধ ও প্রতিদ্বন্দ্বী-তে। আরও বেশ কয়েকটি বাংলা সিনেমায়। মঞ্চেও দেখা যায়, বিশ্বরূপায় তাঁর যোগদান এক সময় বিতর্কের ঝড় তুলেছিল। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সরে যেতে বাধ্য হন পেশা থেকে, মাথা তোলে প্রবল অর্থকষ্ট। কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন, ভর্তি হন দক্ষিণ কলকাতার হাসপাতালে। বাড়ি ফিরেও এসেছিলেন। তারপর আজ ভোরে মৃত্যু।