চেন্নাই: পশ্চিমবঙ্গ, দিল্লির পর রাজ্য বনাম রাজ্যপাল সংঘাত চরমে উঠল তামিলনাড়ুতে। পরিস্থিতি এতটাই ঘোরাল হয়ে উঠেছে যে, রাজ্য থেকে রাজ্যপালকে সরানোর দাবি তুললেন মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন। অবিলম্বে রাজ্যপাল আরএন রবিকে সরাতে হবে বলে কেন্দ্রের কাছে দাবি জানিয়েছেন তিনি। রাজ্যপালের উপস্থিতিতে তামিলনাড়ুর 'রাজ্যসঙ্গীত' থেকে 'দ্রাবিড়' শব্দটি বাদ দেওয়াকে ঘিরেই সংঘাত চরমে পৌঁছেছে। রাজ্যপাল জাতীয় ঐক্যের পরিপন্থী কাজকর্ম করছেন বলে অভিযোগ স্ট্যালিনের। এর পাল্টা স্ট্যালিন তাঁর উদ্দেশে বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্য করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন রাজ্যপাল আরএন রবি। (MK Stalin)
সম্প্রতি চেন্নাই দূরদর্শনের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপিত হয় তামিলনাড়ুতে। সেই সঙ্গে হিন্দি ভাষার উদযাপনও হয়। নিয়মমাফিক ওই সরকারি অনুষ্ঠানে তামিলনাড়ুর 'রাজ্যসঙ্গীত'ও গাওয়া হয়। কিন্তু 'রাজ্যসঙ্গীত' গাওয়ার সময় ইচ্ছাকৃত ভাবে 'দ্রাবিড়' শব্দটিকে বাদ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে। সেই নিয়ে গর্জে ওঠেন স্ট্যালিন এবং তাঁর দল DMK-র নেতারা। স্ট্যালিন সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, 'রাজ্যসঙ্গীত থেকে দ্রাবিড় শব্দটি বাদ দেওয়া তামিলনাড়ুর আইনের পরিপন্থী। যিনি আইন মেনে চলেন না, স্বেচ্ছাচার চালিয়ে যান, তিনি ওই পদে থাকার যোগ্য নন। ভারত উদযাপনের নামে রাজ্যপাল দেশের একতাকে অপমান করছেন, বিভিন্ন জাতির মানুষের অপমান করছেন'। (Tamil Nadu)
স্ট্যালিন আরও লেখেন, 'রাজ্যপালের দ্রাবিড়ীয়দের নিয়ে অ্যালার্জি রয়েছে রাজ্যপালের। ওঁর কথাতেই কি রাজ্যসঙ্গীত থেকে দ্রাবিড় শব্দটি বাদ দেওয়া হয়েছে? কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত, অবিলম্বে রাজ্য থেকে রাজ্যপালকে ফিরিয়ে নেওয়া, যিনি ইচ্ছাকৃত ভাবে তামিলনাড়ু এবং রাজ্যের মানুষের আবেগের অপমান করে চলেছেন'। স্ট্যালিনের মতে, অহিন্দিভাষী রাজ্যে হিন্দি ভাষার উদযাপনের অর্থ অন্য ভাষার মর্যাদা খর্ব করা।
এই টানাপোড়েনের মধ্যে তামিল দূরদর্শনের তরফে গোটা ঘটনার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করা হয়। বিতর্কের জন্য শিল্পীদেরই দায়ী করা হয়। বলা হয়, 'রাজ্যসঙ্গীত' গাওয়ার সময় মনোযোগে ঘাটতি ছিল শিল্পীদের। তাই 'দ্রাবিড়' শব্দটি বাদ পড়ে গিয়েছে। যদিও, একসঙ্গে সকলে 'দ্রাবিড়' শব্দটি উচ্চারণ করতে ভুলে গেলেন কী করে, পাল্টা প্রশ্ন তুলেছে DMK. যদিও রাজ্যপাল স্ট্যালিনকে পাল্টা নিশানা করেন। তাঁর বক্তব্য, 'মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিন দুঃখজনক মন্তব্য করেছেন। আমার বিরুদ্ধে বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্য করেছেন। মিথ্যে অভিযোগ এনেছেন রাজ্যসঙ্গীত অবমাননার'।
এই ঘটনাকে ঘিরে বর্তমানে উত্তাল তামিল রাজনীতি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও চিঠি লিখেছেন স্ট্যালিন। অহিন্দিভাষী রাজ্যে হিন্দি ভাষার উদযাপন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। রাজ্যপাল আবার দাবি করেছেন, হিন্দিকে হাতিয়ার করে বিচ্ছিন্নতাকামী নীতি অবলম্বন করছেন কেউ কেউ। সরাসরি নাম না নিলেও, গোটা ঘটনায় সরব হয়েছেন অভিনেতা তথা রাজনীতিক কমল হাসনও। তাঁর মতে, শুধুমাত্র 'রাজ্যসঙ্গীতে'ই নয়, 'দ্রাবিড়' শব্দটি জাতীয় সঙ্গীতেও রয়েছে। সেই শব্দটি বাদ দেওয়া, সেই নিয়ে রাজনীতি করার অর্থ তামিলনাড়ু রাজ্যক অপমান কর। রাজ্যের আইনের এবং পৃথিবীর প্রাচীনতম ভাষা তামিলেরও অপমান হয়েছে বলে মত কমলের।