নয়াদিল্লি: দেশের কারা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে এবার তৎপর কেন্দ্র। তার জন্য রাজ্যগুলিকে একগুচ্ছ প্রস্তাব দেওয়া হল (Prison Rules)। জেলের অন্দরে রূপান্তরকামীদের পৃথক থাকার ব্যবস্থার কথা বলা রয়েছে তাতে। প্যারোলে জেলের বাইরে বেরোন যে সমস্ত বন্দি, তাঁদের গতিবিধির উপর নজর রাখতে গোড়ালিতে খাড়ুর মতো দেখতে বিশেষ GPS বসানো যন্ত্র পরানোর কথাও বলা হয়েছে (Modi Government)। 


বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে বন্দিদের সংযোগ আটকানোই লক্ষ্য


শুধু তাই নয়, জেলবন্দি থাকাকালীন, কুঠুরিতে বসে দিব্যি মোবাইল ফোন এবং প্রযুক্তির ব্যবহার করে থাকেন প্রভাবশালীরা। সেই নিয়েও কড়া বিধান বেঁধে দিয়েছে কেন্দ্র। তাতে বলা হয়েছে, দোষী সাব্যস্ত কোনও কয়েদি যদি জেলের কুঠুরিতে মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন, বা সহবন্দিকে তার সরবরাহ করেন, সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত সময়ের জন্য় হাজতবাস করাতে হবে তাঁদের। জেলে বসে বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে বন্দিদের সংযোগ আটকাতে জেলে জ্যামার বসানোর কথাও বলা হয়েছে।


দেশের কারা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে, তার সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন সমস্যার মোকাবিলা করতেই এমন বিধান বলে জানা গিয়েছে। কারা আইন ২০২৩-এ এই নয়া বিধান যুক্ত করেছে কেন্দ্র। দেশের সব রাজ্যের মুখ্যসচিবদের সেই মর্মে চিঠি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সচিব অজয় ভাল্লা। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনাবলীর কথা মাথায় রেখেই এমন বিধান আনা হয়েছে। ১৮৯৪ এবং ১৯০০ সালের কারা আইনের অধুনিকীকরণের প্রয়োজন রয়েছে বলে জানিয়েছেন ভাল্লা।


আরও পড়ুন: Smaranya Ghosh: আঠেরোর ‘স্পর্ধা’ই বটে, ছেলে থেকে মেয়ে হয়েছেন, অকপট স্বীকারোক্তি উচ্চমাধ্যমিকে সপ্তম স্মরণ্যার


উল্লেখ্য বিগত কয়েক মাসে একাধিক হাইপ্রোফাইল খুন, গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনা সানে এসেছে। আর এর মধ্যে বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে দেশের খ্য়াতনামা জেলের অন্দরেই। এমনকি জেলের অন্দরে কুখ্যাত বন্দিরা অপরাধচক্র চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ সামনে এসেছে। সম্প্রতি জেলের কুঠুরিতেই খুন হন গ্যাংস্টার সুনীল বালিয়াঁ ওরফে টিল্লু তাজপুরিয়া। অন্য কুঠুরি থেকে গরাদ ভেঙে ঢুকে সহবন্দিরা তাঁকে কুপিয়ে খুন করেন বলে অভিযোগ।


লিখিত বিবৃতিতে ভাল্লা জানান, সময় এবং বিবর্তনের কথা মাথায় রেখে ঔপনিবেশিক আমলের নিয়ম-নীতির সংশোধন প্রয়োজন। সংবিধান অনুযায়ী জেলখানা পরিচালনা সংক্রান্ত নিয়ম এবং নীতি মূলত রাজ্যের এক্তিয়ারেই পড়ে।  কিন্তু তার রূপরেখা মূলত কেন্দ্রীয় সরকারই তৈরি করে দেয়, যা আইন বলে গন্য হয়। সেই অনুযায়ী প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে কারা আইন সংশোধন করতে তৎপর হয়েছে কেন্দ্র।


প্যারোলে মুক্ত বন্দিদের উপর নজরদারি যদিও নতুন কিছু নয়। একাধিক দেশে এই নিয়ম চালু রয়েছে, যাতে জেল থেকে বেরিয়ে ফের অপরাধমূলক কাজকর্মে বন্দিরা লিপ্ত হচ্ছেন কিনা, তার উপর নজরদারি চালানো হয়। তাতে GPS বসানো সরঞ্জামের ব্যবহার হয় একাধিক দেশে। তবে এখনও পর্যন্ত ভারতে এমন নিয়ম চালু নেই। 


GPS ট্র্যাকার বসানো নিয়ে উদ্বেগ


তবে ইদানীং কালে এমন একাধিক ঘটনা সামনে এসেছে, যেখানে প্যারোলের মেয়াদ শেষ হলেও, জেলে ফেরেননি বন্দিরা। কোভিডের সময় দিল্লির বিভিন্ন জেল থেকে প্যারোলে বেরিয়ে আসেন প্রায় ৬০০ বন্দি। ফিরে গিয়ে আত্মসমর্পণ করেননি তাঁদের কেউই। এঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন গ্যাংস্টার কপিল সাংওয়ান। বরং বিদেশ থেকে এই মুহূর্তে সিন্ডিকেট চালাচ্ছেন তিনি। তাই কেন্দ্র জানিয়েছে, বন্দিরা প্যারোলে মুক্তির আবেদন জানালে, GPS বসানো সরঞ্জাম পরাতে হবে তাঁদের। তাঁদের সায় জোগাড় করতে হবে। 


যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে, এই কাজ মোটেই সহজ হবে না। কারণ নজরদারি চালাতে GPS বসাতে হবে। খরচের কথা বাদ দিলেও, এতে গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার লঙ্ঘিত হয়।  আবার কারও কারও মতে, বিচার চলছে যাঁদের, এমন যন্ত্র তাঁদেরই পরিয়ে বাইরে রাখা উচিত। এতে জেলগুলিতে ভিড় বাড়বে না।