ভোপাল: শ্রীকৃষ্ণকে ‘মাখন চোর’ বলায় এবার আপত্তি জানালেন মধ্য়প্রদেশের মুখ্য়মন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা মোহন যাদব। জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে এমন মন্তব্য করলেন তিনি, যা নিয়ে রাজনৈতকি তরজা শুরু হয়েছে। বিজেপি এখন সনাতনী রীতিনীতিও নতুন ভাবে লিখতে চাইছে বলে অভিযোগ তুলছে কংগ্রেস। তবে শ্রীকৃষ্ণকে যাতে 'মাখন চোর' না বলা হ, তা নিয়ে প্রচারে নামছে মধ্যপ্রদেশ সরকার। (Makhan Chor Tag for Lord Krishna)
জন্মাষ্টমী উপলক্ষে আয়োজিত বিশেষ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে শ্রীকৃষ্ণকে ‘মাখন চোর’ বলা আপত্তি জানান মোহন। তিনি বলেন, “মাখন চোর বলা অনুচিত। ভগবান কৃষ্ণ মাখন খেতে ভালবাসতেন। তাই কংসের বাড়িতে সেই মাখন পৌঁছলে রেগে যেতেন তিনি। তাঁদের মাখন খেয়ে কংস তাঁদের উপরই অত্যাচার চালাচ্ছে বলে ক্রুদ্ধ হতেন তিনি। সেই ক্রোধ থেকেই রাখাল বালকদের নিয়ে দল গড়েন, যাঁরা হয় মাখন খেয়ে নিতেন, নয়ত কলসি ভেঙে দিতেন, যাতে শত্রুর বাড়িতে মাখন না পৌঁছতে পারে।” (Madhya Pradesh News)
মোহন কথায়, “ভগবান কৃষ্ণ বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। সমাজকে বার্তা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অজান্তে তাঁর সেই বিদ্রোহকে আমরা এমন একটি শব্দের মাধ্যমে বর্ণনা করি, যা শুনতে খুব খারাপ।” তবে সেখানেই থামেননি মোহন। তাঁর সরকার বিশেষ একটি প্রকল্প শুরু করছে, যার আওতায় মানুষকে বোঝানো হবে কেন শ্রীকৃষ্ণকে ‘মাখন চোর’ বলা উচিত নয়।
যুগ যুগ ধরে শ্রীকৃষ্ণকে ‘মাখন চোর’ বলে অভিহিত করে আসছেন মানুষজন। কটাক্ষ করে নয়, বরং স্নেহের বুলি হিসেবেই ‘মাখন চোর’ শব্দটি প্রয়োগ করা হয়। বিভিন্ন লেখালেখিতে দেখা গিয়েছে, খোদ যশোদাই শ্রীকৃষ্ণকে ‘মাখন চোর’ বলতেন। এমনকি গোপিনীরাও ওই নামে অভিহিত করতেন তাঁকে। ফলে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
তবে মধ্যপ্রদেশ সরকার নিজের অবস্থানে অনড়। কেন শ্রীকৃষ্ণকে ‘মাখন চোর’ বলা যাবে না, তার একটি তালিকাও তৈরি করেছে তারা। বলা হয়েছে-
১) মুঘল আমলে শ্রীকৃষ্ণের নামে অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র হয়, যার দরুণ শ্রীকৃষ্ণের নামে ‘চোর’ জুড়ে দেওয়া হয়।
২) বালকদের নিয়ে শ্রীকৃষ্ণ মাখন চুরি করতেন, যাতে কংসের বাড়িতে তা না পৌঁছতে পারে। এটা ছিল বিপ্লব। গণতন্ত্রের সমর্থক ছিলেন শ্রীকৃষ্ণ।
৩) শ্রীকৃষ্ণের বাড়িতে হাজার হাজার গরু ছিল। শ্রীকৃষ্ণ মাখন চুরি করবেন কেন?
৪) প্রাচীন ভজনে এর প্রমাণ রয়েছে, যেখানে শ্রীকৃষ্ণ বলছেন, ‘মা আমি মাখন খাইনি। গোয়ালারা আমার মুখে মাখন লাগিয়ে গিয়েছে’।
এ নিয়ে মোহন ও মধ্যপ্রদেশের বিজেপি সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেছে কংগ্রেস। মধ্যপ্রদেশ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা উমং সিংঘর বলেন, “এখন শ্রীকৃষ্ণের জীবনীও বিকৃত করছেন মোহন যাদব। নিজের মত করে পৃথক ইতিহাস লিখতে চান উনি। শতকের পর শতক ধরে শ্রীকৃষ্ণের এই অভ্যাস উদযাপন করে আসছি আমরা। বহু জায়গায় এর উল্লেখ রয়েছে। সনাতন ধর্মের প্রাচীন কাহিনিও এখন পাল্টাতে চাইছেন উনি।” তবে এ ব্যাপারে মোহন এবং মধ্যপ্রদেশ সরকারকে সমর্থন করছে ISKCON. ISKCON-এর PRO পণ্ডিত রাঘব দাস জানিয়েছেন, মোহনের প্রস্তাব স্বাগত জানানোর যোগ্য। ভগবানের নামের পাশে ‘চোর’ শব্দটি শোভা পায় না।