নয়াদিল্লি: যোগ্যতা এবং দক্ষতার মাপকাঠিতে সমান হলেও, কর্মক্ষেত্রে আজও মেয়েদের উন্নতির সুযোগ কম বলে উঠে এল আন্তর্জাতিক রিপোর্টে। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, উন্নতির স্বপ্ন নিয়ে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করেন মেয়েরা, তার জন্য পরিশ্রমেও খামতি রাখেন না (Job Promotion)। তার পরেও মালিকপক্ষ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে পুরুষ কর্মীদেরই প্রাধান্য দেন বলে দাবি করা হয়েছে ওই রিপোর্টে। (Women in Workplace)
আমেরিকার প্রযুক্তিবিদ তথা সমাজকর্মী শেরিল স্যান্ডবার্গ নারীর অধিকার নিয়ে সমাজসেবামূলক কাজ করেন। একসময় ফেসবুকের চিফ অপারেটিং অফিসারও ছিলেন। LeanIn.Org এবং McKinsey & Co-তে তাঁর তত্ত্বাবধানে হওয়া একটি সমীক্ষার রিপোর্টেই এই দাবি উঠে এসেছে। তিনি জানিয়েছেন, ২০২২ সালে প্রতি ১০০ জন পুরুষ যদি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেয়ে থাকেন, সেই তুলনায় উন্নতি হওয়া মেয়ের সংখ্যা ৮৭ ছিল।
ওই সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ২০২১ সালেই প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পদে উন্নতি হওয়া মেয়েদের সংখ্যা ৮৬-তে এসে ঠেকে। তার পর ২০২২ সালে সামান্য বৃদ্ধি চোখে পড়লেও, পুরুষদের তুলনায় মেয়েরা আজও কর্মক্ষেত্রে কম গুরুত্ব পান। সব দিক থেকে পুরুষদের সমকক্ষ হওয়া সত্ত্বেও, কর্মক্ষেত্রে পুরুষরা প্রাধান্য পান এবং তাঁদের উন্নতি বেশি হয়।
আরও পড়ুন: Sikkim Flash Flood: পার্শ্বচাপের ফলে সংকোচন হ্রদের, সিকিমে বিপর্যয়ের জন্য দায়ী কি নেপালের ভূমিকম্প
এই ফারাকের কারণও ব্যাখ্যা করা হয়েছে ওই সমীক্ষায়। বলা হয়েছে, কোন যুক্তিতে উন্নতি হচ্ছে, সেটিও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। শেরিলের কথায়, "পুরুষদের মধ্যে কতটা সম্ভাবনা রয়েছে, তা দেখে উন্নতি হয়। মেয়েদের ক্ষেত্রে দেখা হয়, এ যাবৎ নিজেদের কতটা প্রমাণ করতে পেরেছেন তাঁরা।" দায়িত্ব না পেলে নিজেদের কী করে প্রমাণ করবেন মেয়েরা, প্রশ্ন তুলেছেন শেরিল।
গায়ের রং দেখে মেয়েদের উন্নতির নজিরও তুলে ধরা হয়েছে ওই রিপোর্টে। জানানো হয়েছে, গত একবছরে উন্নতি হয়েছে এমন ১০০ পুরুষকে যদি হিসেবে রাখা হয়, তাহলে তাঁদের সামনে ৫৪ জন কৃষ্ণাঙ্গ মেয়ের উন্নতি হয়েছে কর্মক্ষেত্রে। ২০২১ সালে যদিও এই সংখ্যাটি ছিল ৯৬। তার জন্য যদিও 'ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার' আন্দোলনকে কৃতিত্ব দেওয়া হয়েছে, যার পর কর্মক্ষেত্রে অশ্বেতাঙ্গদের প্রতি নরম হওয়ার বার্তা গিয়েছিল। তার আগে ২০১৮ এবং ২০১৯ সালেও সংখ্যাটি ছিল ৫৮। এবছর তা আরও নেমে এসেছে।
আমেরিকা, কানাডা-সহ একাধিক দেশের ২৭৬টি সংস্থার ২৭০০০ কর্মীকে নিয়ে এই সমীক্ষা করা হয়েছে। মেয়েদের তুলনায় অনেক ক্ষেত্রে ছেলেরা সুযোগ-সুবিধাও পান বলেও দাবি করা হয়েছে। অফিসের ভিতরেই নয় শুধু, অনসাইট কাজ করলেও, মেয়েদের তুলনায় তাঁরা সংস্থার কাছ থেকে বেশি সাহায্য় পেয়েছেন এবং সংস্থার খুঁটিনাটি তথ্য তাঁরা মেয়েদের থেকে বেশি জানেন বলে স্বীকার করেছেন পুরুষদের একাংশও।
শেরিলের কথায়, "মেয়েদের নিয়ে ধারণাই রয়েছে যে, তাঁরা অলস, খামখেয়ালি। মেয়েরা অনুকুল পরিবেশ চায়, তার জন্য অনুরোধ জানায়। যুগ যুগ ধরে গড়ে ওঠা এই ধারণা কর্মক্ষেত্রে আজও মেয়েদের উন্নতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।" ওই সমীক্ষায় আরও বলা হয়েছে যে, অতিমারির আগের তুলনায় এখন মেয়েরা অনেক বেশি উচ্চাকাঙ্খী। ২০১৯ সালে কর্মক্ষেত্রে উন্নতির চাওয়া মেয়েদের হার ছিল ৭০ শতাংশ, বর্তমানে তা ৮০ শতাংশ।