এই মুহূর্তে একটা দিক থেকে নিশ্চিন্ত ভেলোরের এই বাঙালি পরিবারগুলি। জেলা শাসক থিরু এ সম্মুগা সুন্দরমের অফিস থেকে তাঁদের তিনবেলা খাবার দেওয়া হচ্ছে। জেলা শাসক নিজে ফোনে যোগাযোগ রাখছেন। ফোন করেছেন রাজ্যের মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ও, তাঁর পরামর্শ, লকডাউন খুললে যেভাবে পারুন, বেরিয়ে আসুন। ভেলোর থেকে ফেরার জন্য বিশেষ ট্রেনের ব্যাপারে অনুরোধ করা হলে বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। সমস্যা হল, এই যে ১০,০০০-এর বেশি পরিবার ভেলোরে আটকে পড়েছে, এঁদের ফেরার কোনও বন্দোবস্ত এখনও করা যায়নি। ১৫ তারিখ লকডাউন ওঠার কথা কিন্তু কাটপাডি হয়ে এ রাজ্যে আসা ট্রেনের টিকিট একটিও নেই, শেষ ওয়েটিং লিস্টও। বাজারে অসমর্থিত খবর, ৫ দিনের জন্য লকডাউন খোলা হতে পারে। এত বিশাল সংখ্যক মানুষকে সেই ৫ দিনের মধ্যে বাড়ি ফেরাতে হলে প্রতিদিন অন্তত ২টি করে বিশেষ ট্রেন চাই। এ নিয়ে রেল মন্ত্রকে টুইট করেছেন তাঁরা, প্রধানমন্ত্রীর অফিসেও। কোনও জবাব মেলেনি।
ভেলোর থেকে কলকাতা ফেরার টিকিটের দাম এমনিতে আড়াইহাজার টাকা। ১৫ তারিখ থেকে টিকিটভাড়া যাচ্ছে ১২,০০০ টাকা মাথাপিছু। রেট উঠছে ১৫,০০০ পর্যন্ত। আবার ২০ বা ২১ তারিখের টিকিট কাটলে ভাড়া সেই আড়াইহাজারই। কিন্তু ঝুঁকি নিতে ভরসা পাচ্ছেন না ভেলোরের বাঙালিরা কারণ মাথায় ঝুলছে ফের লকডাউনের খাঁড়া। বিমান সংস্থা ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, উড়ান বাতিল হলেও বিমান ভাড়া ফেরত দেওয়ার প্রশ্ন নেই।
সমস্যা হল, ভেলোরের নিকটতম স্টেশন কাটপাডি থেকে ট্রেন ছাড়ে না, ট্রেন আসে বেঙ্গালুরু বা অন্যত্র থেকে। ১৫ তারিখ থেকে কাটপাডি ট্রেন ধরার যে হুড়োহুড়ি পড়বে, তাতে পদপিষ্ট হওয়ার আশঙ্কা। প্রতি পরিবারে অন্তত ১জন করে অসুস্থ মানুষ, অনেকের হৃদযন্ত্রে সমস্যা রয়েছে। ওভারব্রিজ টপকে ট্রেন ধরার জন্য ঠেলাঠেলিতে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এই অবস্থায় অনেকে লকডাউন উঠলে চেন্নাই চলে যাওয়ার কথা ভাবছেন, কারণ সেখান থেকে অনেক বেশি সংখ্যায় ট্রেন হাওড়া-শিয়ালদহ আসে। কিন্তু ভেলোর থেকে চেন্নাইয়ের দূরন্ত প্রায় ১৮০ কিলোমিটার, যাওয়ার সমস্যা। বেসরকারি গাড়িগুলি এই সুযোগে অস্বাভাবিক টাকা ভাড়া চাইছে। এমনিতে ভাড়া ১৬০০ টাকা, এখন বেড়ে হয়েছে অন্তত ৩,০০০। লকডাউন উঠলে তা এক লাফে আরও বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই অবস্থায় লোকসভার বিরোধী দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন কেউ কেউ। ব্যাঙ্গালোর, হায়দরাবাদেও এমনই অবস্থা, চিকিৎসার জন্য গিয়ে বহু মানুষ আটকে পড়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর অফিস বা রেল মন্ত্রক- কেউ তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।